Sunday, October 15, 2023

Sajek Valley (সাজেক ভ্যালি) ও খাগড়াছড়ি ভ্রমণ

এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হচ্ছে সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফিট উচ্চতায় এর অবস্থান। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আপনাকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭৩ কিঃমিঃ আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিঃমিঃ এর মতো। ভ্রমণ পিপাসুদের অনেকে সাজেক ভ্যালিকে বাংলার ভূস্বর্গ নামে অভিহিত করেন। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেক ভ্যালি। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। দিনের প্রতিটি মুহুর্তে আপনি সাজেকের আলাদা রূপ দেখতে পাবেন।



কী কী দেখবেন সাজেক ভ্যালিতে

প্রকৃতিপ্রেমী হলে আপনার কাছে পুরো সাজেক ভ্যালিটাই দর্শনীয় মনে হবে। তারপরও বলতে হয় পর্যটকদের কাছে সবচয়ে আকর্ষণীয় স্থান কংলাক পাড়া। এছাড়া হ্যালিপ্যাড, রুইলুই পাড়া, রক গার্ডেন, লুসাই ভিলেজ উল্লেখযোগ্য।

কংলাক হলো সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান। এটি লুসাই অধ্যুষিত পাড়া। কংলাকের চূড়া থেকে আপনি পুরো সাজেক ভ্যালি এক নজরে দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে দিগন্তে দেখা পাবেন রংধনুর। এই অপার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য কংলাকের চূড়া পর্যন্ত উঠতে আপনাকে ৪০ মিনিটের মতো ট্রেকিং করতে হবে। বিকেল বেলা কংলাক ভ্রমণের আদর্শ সময়। আপনি চাইলে কংলাকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। এটি আপনার ভ্রমণ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।



সাজেকের নিচে একটি ঝর্ণা আছে। প্রচলিত ভাষায় এটি কমলক ঝর্ণা নামে পরিচিত। এর মূল নাম পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা। রুইলুক পাড়া থেকে এখানে ট্রেকিং করে যেতে চাইলে আসা যাওয়ায় ৪ ঘন্টার মতো সময় লাগবে।

সূর্যাস্তের পরও সাজেক তার রূপবদল থামাবে না। সন্ধ্যার পরপরই আকাশ ভরা নক্ষত্রের দেখা মিলবে। রাত যত বাড়বে তার রূপও তত গাঢ় হবে। দূষণমুক্ত পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রতিদিনই রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। জোছনারাতে প্রকৃতি হয়ে উঠে আরো স্বর্গীয়! খোলা মাঠে বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে রাতের আকাশ দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাড সবচেয়ে চমৎকার জায়গা।

সাজেকে মেঘ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। সারারাত জেগে থেকে যদি আপনি ভোর মিস করেন, তাহলে আপনি অনেক কিছুই মিস করবেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবচেয়ে ফ্রেশ মেঘ দেখা যায়। যেন হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারেন। মেঘের গায়ে যখন সূর্যের আলো পড়তে শুরু করে তখন অবর্ণনীয় এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। এইসময় প্রতি ১০ মিনিটে একবার করে প্রকৃতির রঙ বদলে যেতে দেখবেন। তাই খেয়াল রাখবেন সূর্যোদয় দেখা যেন কোনোভাবেই মিস না হয়। শুধু মেঘের গায়ে সূর্যোদয় দেখার জন্যই সাজেক ভ্যালি আসা যায়।



সাজেক থেকে ফেরার সময় আপনার যাত্রাপথেই পড়বে হাজাছড়া ঝর্ণা। সুযোগ থাকলে ঢুঁ মেরে আসতে ভুলবেন না।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সত্যি বলতে প্রতিটি মৌসুমে সাজেকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আপনার চোখে পড়বে। শীতের সাজেক একরকমতো বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে যায়। তবে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর। তখন সারাদিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন।



সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ। তাই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির প্রধান বাস শান্তি পরিবহন। এছাড়া সৌদিয়া, শ্যামলী, ঈগল, হানিফ, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস আছে। এসি বাসের মধ্যে রয়েছে শান্তি, হানিফ, ঈগল ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল ও আরামবাগ থেকে এসব বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস রাত এগারোটার মধ্যে ছেড়ে যায়। সরকারী ছুটির দিন বা বৃহস্পতিবার শুক্রবার যেতে চাইলে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখলে ঝামেলা এড়ানো যায়।

খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক ভ্যালি

খাগড়াছড়ির থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার জন্য কোনো লোকাল গাড়ি বা শেয়ার্ড জিপ নেই। আপনাকে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। এক্ষেত্রে চান্দের গাড়ি অথবা মাহেন্দ্র জিপ প্রধাণ বাহন। আপ-ডাউন রিজার্ভ জিপ ভাড়া পড়বে ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা। এক গাড়িতে সর্বোচ্চ ১২ জন বসার পরমিশন আছে।

আপনার টিমে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্য কারো সাথে জিপ শেয়ার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমবে। যদি শেয়ার করার মতো কাউকে না পান, তবে সিএনজি নিতে পারেন। সিএনজি ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মতো। তবে সম্ভব হলে সিএনজিতে না যাওয়াই ভালো। তাছাড়া সিএনজিতে সাজেক পৌঁছাতে কখনো কখনো ৬ ঘন্টাও লেগে যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ এর অন্যতম খরচ হলো জিপ খরচ।

আপনি যদি একা বা ২/৩ জন হন, তাহলে চেষ্টা করবেন অন্য কোনো গ্রুপের সাথে জয়েন করে ফেলতে। নিজে কোনো গ্রুপ ম্যানেজ করতে না পারলে জিপ সমিতির অফিসে গিয়ে বললেও হবে। তারাই আপনাকে কোনো গ্রুপের সাথে জযেন করিয়ে দিতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করবে।



আপনি খাগড়াছড়ি থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আগে থেকে দরদাম করে নিবেন ভালোভাবে। আপনি যে বাহনই রিজার্ভ করেন না কেন, আগে থেকেই বলে নিবেন কোন কোন স্পট দেখতে চান।

এছাড়া আপনি যদি ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দীঘিনালার বাসে উঠেন, তাহলে দীঘিনালা থেকেও আপনি সাজেকের জিপ পাবেন। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে উঠলে সেটাও দীঘিনালা হয়েই যায়। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক যেতে ৩ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

দীঘিনালার পরের আর্মি ক্যাম্প থেকে আমি স্কর্ট দিয়ে প্রত্যেকটা গাড়ি সাজেকে নিয়ে যায়। স্কর্ট ছাড়ে সকাল ৯ঃ৩০ মিনিট এবং দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটে। অর্থাৎ সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনি ওখানে উপস্থিত থাকতে না পারলে আপনাকে দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটের স্কর্টে সাজেক যেতে হবে। দুপুরের স্কর্টেও যদি আপনি আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত না থাকতে পারেন, তাহলে আপনি ওইদিন আর সাজেক যেতে পারবেন না৷ পরদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর্মি স্কর্ট বাদে একা কোনো গাড়ির সাজেক যাওয়ার পারমিশন নেই। আবার একা জিপ বা সিএনজি নিয়ে গেলে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বেশি পড়বে।

সাজেক ভ্রমণে পাহাড়ি আঁকাবাতা এই পথের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব! রাস্তার প্রতিটি বাঁকে নতুন সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। যাওয়ার পথে জিপের এই জার্নিটাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেকদিন। যতক্ষণে সাজেক গিয়ে পৌঁছাবেন তার আগেই মনোরম পরিবেশ আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের জন্য আপনার ভ্রমণক্লান্তি অনেকটাই কেটে যাবে।



সাজেকে থাকার রিসোর্ট

সাজেকে ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্ন কোয়ালিটির ১০০র মতো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টে সর্বনিম্ন জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে। শুক্রবার বা সরকারি ছুটিতে যেতে চাইলে কমপক্ষে ১৫/২০ দিন আগে রুম বুকিং করে রাখা ভালো। নইলে ভালো রিসোর্টে রুম পাওয়া যায়না সাধারণত। রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিসোর্টের কোয়ালিটি ও অবস্থানকে প্রাধান্য দিবেন। ভিউ খুব একটা ইমপর্টেন্ট না। কারণ সব রিসোর্ট থেকেই কমবেশি ভিউ পাওয়া যায়। রিসোর্ট থেকে বের হলে ভিউতো আছেই।

রিসোর্টের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিছু রিসোর্ট আছে সাজেকের বাইরে। আবার কিছু রিসোর্ট এমন একটা অবস্থানে যেখান থেকে মূল পয়েন্টে আসতে অনেক বেশি সময় নষ্ট হবে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রিসোর্টের ভিউ তুলনামূলক ভালো, কিন্তু ইন্টেরিয়র ও ওয়াশরুম বেশ জরাজীর্ণ। তাই রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র কোয়ালিটি ও লোকেশনকে প্রাধান্য দিন। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়লেও রিসোর্ট এর ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ না করাই ভালো।



সাজেকে খাওয়ার ব্যবস্থা

সাজেকে খাওয়ার জন্য অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া অনেক রিসোর্টের নিজস্ব খাবার ব্যবস্থা রযেছে। জনপ্রতি প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। খাবারের মেনু হিসেবে পাবেন ভাত, মুরগী, আলুভর্তা, সবজি ইত্যাদি। রাতে বারকিউর ব্যবস্থা রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্টে। এছাড়া ভালো মানের রিসোর্টগুলোতে নিজস্ব চুলায় বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে। সাজেকে পেপে কলা আনারস সহ অনেক সুস্বাদু পাহাড়ি ফল পাবেন বেশ সস্তায়। খেয়ে পরখ করতে ভুলবেন না।

কিছু জরুরী পরামর্শ

  • জীপ দিয়ে যাওয়ার পথে শিশুদের দিকে চকলেট ছুড়ে মারবেন না।
  • বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে ছবি তোলা নিষেধ।
  • আমরা অতিথি। পাহাড়ীদের সংস্কৃতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু করবেন না।
  • রুইলুই পাড়ার কুয়ায় অবশ্যই গোসল করবেন।
  • কংলাক পাড়া সবাই উঠতে পারে তবে বৃষ্টি হলে পথ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পাড়ায় উঠার আগে একটা সাবধান বানী আছে সেটা মানবেন।
  • কমলক ঝর্ণায় যাওয়ার সময় ৮০/৮৫ ডিগ্রি এংগেলের খাড়া পাহাড় আছে। ট্রেকিং এর অভ্যাস না থাকলে যাবেন না।
  • হাজাছড়া ঝর্ণার উপরে উঠলে বুঝে উঠবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
  • রিসাং ঝর্ণায় স্লাইড কাটার সময় সাবধান থাকবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
  • অতি দুঃসাহসিক কিছু করতে গিয়ে গ্রুপের সকলকে বিপদে ফেলবেন না।
  • বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলার ঝুড়ি আছে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
  • প্রতিবেলা খাবারের আগে থেকে অর্ডার দিতে হবে।
  • রিসোর্ট, জীপ আগে থেকে ঠিক করে যাওয়া ভালো।
  • রবি, এয়ারটেল, টেলিটক সিমের নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।
  • ইলেকট্রিসিটি নাই তবে জেনারেটর/সোলার প্যানেল আছে। কোন রিসোর্ট/কটেজে থাকবেন সেটার উপর নির্ভর করবে জেনারেটর সুবিধা পাবেন কিনা। তবে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাওয়াটাই ভালো।
  • চাঁদের গাড়ির ছাদে যাওয়ার সময় সাবধান থাকবেন। একটু অসাবধানতাও বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  • ছেলে বা শুধু মেয়েদের গ্রুপ হোক। নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই।

Sunday, October 10, 2021

দার্জিলিং ভ্রমন - Darjeeling Excursion

দার্জিলিং

দার্জিলিং (Darjeeling)  ভূ-পৃষ্ট থেকে ৭,১০০ ফুট উচ্চতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শহরে প্রায় পুরো বছর জুড়েই ঠাণ্ডা থাকে। দার্জিলিং তার ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা ও দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ের জন্য বিখ্যাত। দার্জিলিং এর জনপ্রিয়তা ব্রিটিশ রাজের সময় থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে এটি যখন তাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসাবে গড়ে উঠেছিল। পূর্বে দার্জিলিং ছিল প্রাচীন গোর্খা রাজধানী। পরে সিকিমের মহারাজা ব্রিটিশদের দার্জিলিং উপহার করেন।

ঢাকা থেকে স্থলপথে যাত্রাঃ

ভারতে আমাদের এন্ট্রি পোর্ট ছিল চেংড়াবান্দা। এটি আমাদের গ্রুপ ট্যুর ছিল তাই যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে পুরো বাস রিজার্ভ করেছিলাম। রাত ১০ টার বাসে রওনা হলাম উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে। ভোর ৭ টায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু অত্যধিক জ্যামের কারণে বেজে গেছে সকাল ৯ টা। সকালের নাস্তা সেরে তারপর ইমিগ্রেশনের কাজ শুরু করলাম। ভ্রমণের সময় সঙ্গে পাসপোর্ট ও ভিসার পাঁচটি করে ফটোকপি রাখা জরুরি, বিভিন্ন সময়ে এগুলো কাজে লাগে। বর্ডারে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে অনেকটা সময় লেগে গেল। এখানেই টাকা ভাঙ্গিয়ে রুপি করে নেবার ব্যবস্থা রয়েছে, আমরাও করে নিলাম। তারপর বুড়িমারি সীমান্ত পেরিয়ে অল্প একটু পথ পায়ে হেঁটে বাসে উঠলাম। এবারের গন্তব্য ময়নাগুড়ি। বাসে যেতে সময় লাগলো আধঘণ্টা, এখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম তারপর সেখান থেকে আবার বাসে চড়ে পৌঁছালাম শিলিগুঁড়ি। 




শিলিগুঁড়ি জংশন থেকে জিপ ভাড়া করলাম দার্জিলিং যাবার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছাতে লাগলো তিন থেকে চার ঘণ্টা। অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং। বর্ডারে অনেক সময় লাগায় সব কিছুতেই আমরা আশানুরূপ সময়ে পৌছাতে পারিনি। দার্জিলিং পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল আর সবাই অনেকটা পথ জার্নি করে বেশ ক্লান্ত ছিল। তাই ঠিক করলাম কাল সকাল থেকেই ঘুরতে বের হবো, রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

দর্শনীয় স্থানঃ

টাইগার হিল (Tiger Hill):  টাইগার হিল থেকে সূর্যাস্ত দেখার অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য চোখে পরার মতো। আর পর্যটকরা এই পাহাড়ের শীর্ষ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট ও কাঞ্ছনজঙ্ঘার চমৎকার ভিউ দেখার সুযোগ সহজে হাতছাড়া করে না। সকাল ৫ টার মধ্যে এখানে আসলে পর্যটকদের ভিড় অনেকটাই এড়ানো যাবে।



বাতাসিয়া লুপ (Batasiya Loop):  দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ৫ কিলো দূরত্বে অবস্থিত বাতাসিয়া লুপ দার্জিলিংয়ের মনোরম ট্রেন রুট গুলোর মধ্যে অন্যতম। পাহাড়ের শীর্ষ টানেলের মধ্য দিয়ে ট্রেন জার্নি এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা যে কোনও পর্যটকদের জন্য। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মুগ্ধ করার মতো।

দার্জিলিং হিমালায়ান রেলওয়ে (Darjeeling Himalayan Railway) :  ভারতের নিঊ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা ও বাঁকের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করা ছোট্ট বাষ্প ইঞ্জিন চালিত ট্রেন দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই রেলওয়েই একসময় দেশের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা ছিল। “দার্জিলিং টয় ট্রেন” হিসেবেও পরিচিত এই ট্রেন জার্নি দার্জিলিং এর এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। অনেকেই কোলকাতা ও বলিউডের বিভিন্ন মুভিতে এই ট্রেনের চারপাশের চমৎকার দৃশ্য দেখে থাকবেন।

দার্জিলিং চিড়িয়াখানা (Darjeeling Zoo):  প্রায় ৬৭.৫৬ একরের এই পার্ক হিমালায়ান পার্ক নামেও পরিচিত। পাহাড়ে অবস্থিত এই পার্কে হিমালায়ান অঞ্ছলের স্নো লিওপার্ড, হিমালায়ান নেকড়ে, ক্লাউডেড লিওপার্ড, কালো ভাল্লুক ও রেড পাণ্ডার মতো বিরল কিছু প্রাণীসহ পাখি ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের দেখা মিলবে। এই পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ মিউজিয়াম আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ পর্যটকদের জন্য। এইপার্কে প্রবেশ মূল্য ৬০ রুপি আর ক্যামেরার জন্য বাড়তি ১০ রুপি দিতে হবে। এছাড়াও দার্জিলিংয়ে আরও বেশ কিছু পার্ক রয়েছে যেমন- নাইটিংগেল পার্ক (Nightingale Park, এখানে টুরিস্ট সিজনে নেপালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে), ঝর্ণার পাশে অবস্থিত দার্জিলিং রক গার্ডেন (Darjeeling Rock Garden) ও সিঙ্গালিয়া ন্যাশনাল পার্ক (Singalia National Park)।

হ্যাপি ভ্যালি টি ষ্টেট (Happy Valley Tea State):  ১৮৫৪ সালে স্থাপিত দার্জিলিং শহরের দ্বিতীয় প্রাচীন চা বাগান। এই সুন্দর চা বাগান থেকে পুরো শহরের প্যানোরোমিক ভিউ দেখা যায়। ১০০ রুপি খরচ করে গাইডের মাধ্যমে পুরো চা বাগানও চা উৎপাদন দেখতে পারবেন। আবার ইচ্ছে থাকলে এখানে চা খাওয়ার সাথে চা পাতা কেনার ও সুযোগ আছে।

বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম (Bengal Natural History Museum):  পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসার জন্য সুন্দর একটি জায়গা। এই জাদুঘরের মধ্যেই হিমালায়ান মাউন্টেনারিং ইন্সটিটিউট অবস্থিত। বিভিন্ন পশু পাখির দেখা পাওয়া যাবে এই মিউজিয়ামে। ১০০-১৫০ রুপি খরচ করে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে ছবি তোলারও সুযোগ আছে।

হিমালায়ান মাউন্টেননিয়ারিং ইন্সটিটিউট (Himalayan Mountaineering Institute):  বিশ্বের অন্যতম পর্বতারোহণ কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত এই ইন্সটিটিউটের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পর্বতারোহণের ব্যাপারে সাধারন মানুষকে উৎসাহী করা। বিশ্বের অসংখ্য পর্বতারোহী তাদের দক্ষতা বিকাশের জন্য এখানে আসে। আর বর্তমানে পর্যটন স্পট হিসেবেও এই ইন্সটিটিউট যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই ইন্সটিটিউট থেকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ চূড়া  কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ সত্যিই মনোমুগ্ধকর।



ঘুম মনেস্ট্রি, দার্জেলিং প্যাগোডা ও মনেস্ট্রিঃ দার্জিলিংয়ের প্যাগোডা ও মনেস্ট্রির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ঘুম মনেস্ট্রি (Ghum Monastery)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত প্রাচীন এই মন্দিরের ১৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বৌদ্ধ মূর্তি ও এখান থেকে সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত চারটি বৌদ্ধ মূর্তির পিচ প্যাগোডা (Peace Pagoda) অনেক ভালো লাগবে। জাপানিজ বৌদ্ধ মন্দিরে (Japanese Buddist Temple) জাপানিদের ঐতিহ্যবাহী স্টাইলে তৈরি করা বেশ কিছু মন্দির ও প্যাগোডা দেখার সুযোগ হবে এই মন্দিরে। এছাড়াও সময় থাকলে প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী তেনজিং-রক-এর স্মৃতিস্তম্ভ, শরণার্থী কেন্দ্র তিব্বতিয়ান সেলফ হেল্প সেন্টার, ৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিং গোরখা স্টেডিয়াম, দার্জিলিং মিউজিয়াম, আভা আর্ট গ্যালারি, শতবর্ষের প্রাচীন দিরদাহাম টেম্পল, গঙ্গামায়া পার্ক, হিমালয় কন্যা কাঞ্চন-জংঘা এবং ভিক্টোরিয়া ফলস এর মতো জায়গাগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন।

রক গার্ডেনঃ দার্জিলিং শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই উপত্যকাটি আরেকনাম বারবটি রক গার্ডেন। দার্জিলিংয়ের হিল কার্ট ঘুরতে এসে ডানদিকে মোড় নিলে ২৫ মিনিট গাড়িতে উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে পৌঁছে যাবে শহর থেকে কয়েকশ ফুট নিচে এই শীলা বাগানটিতে। দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল রক গার্ডেনটি তৈরি করেছিল। এবং কাউন্সিলের তৎকালীন চেয়ারম্যান জনাব সুবাশ ঘাইসিং উদ্বোধন করেন। এটি শহর অঞ্চলের বাইরে পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে দর্শনার্থীদের পার্বত্য শহরে আসার জন্য আরও উৎসাহিত বোধ করে। দার্জিলিংয়ের উপার্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হল  পর্যটন।


রক গার্ডেন থেকে আরও ৩ কিলোমিটার  দূরত্বে অবস্থিত গঙ্গামায়া পার্ক। আপনি একবার পার্কের প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলে আপনি নিজেকে অনেকগুলো পাহাড়ের পাদদেশে দেখতে পাবেন। এটি একটি উপত্যকা যা পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত এবং এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাকৃতিক জলের ধারা ।

দার্জিলিংয়ের বিশেষ আকর্ষণঃ  দার্জিলিং রোপ ওয়ে (৫৫০০ ফিট উপর থেকে ১৬ কিলো দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ক্যাবল কারে চা বাগানের উপর ঘুরে বেড়ানো), রিভার রাফটিং ইন তিস্তা ও ট্রেকিং।

এবার ফেরার পালা, আমরা আমরা জিপে করে শিলিগুড়ি ফিরে আসি। তারপর সেখানেই একরাত থাকি আর স্থানীয় শপিংমল থেকে কিছু কেনাকাটা করি। পরদিন সকালে আবার বর্ডারে চলে যাই, ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।



দার্জিলিং ট্যুর প্ল্যান

আমার মতে, দার্জিলিং ঘুরে দেখার একটা ছোট ও কম খরচের ট্যুর প্ল্যানের আইডিয়া এরকম হতে পারেঃ

১ম দিন:  রাতের বাসে ঢাকা থেকে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা (নন এসি/এসি বাস)।

২য় দিন:  সকালে বুড়িমারী নেমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ শেষে শেয়ার্ড/রিসার্ভ জীপ অথবা বাসে শিলিগুড়ি। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে রিজার্ভ/শেয়ার্ড টাটা সুমো নিয়ে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টার পাহাড়ি পথ দেখতে দেখতে দার্জিলিং। হোটেলে চেকইন করে ফ্রেশ হয়ে শহরের আশপাশ ঘুরে নিতে পারেন সেইদিন বিকেল সন্ধ্যায়।

৩য় দিন:  সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে রিজার্ভ জীপ দার্জিলিং শহর এর দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে বেড়াবেন। দুপুরে কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিন। সন্ধ্যারে আগে হোটেলে ফিরে আসুন। সন্ধ্যার পরের সময়টা যেভাবে ইচ্ছে কাটাতে পারেন। শপিং কিংবা অন্য কিছু করার থাকলে করে নিন। রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।

৪র্থ দিন:  ফিরে আসার দিন। খুব ভোরে বের হয়ে পড়ুন। জীপ নিয়ে চলে যান টাইগার হিল। সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখুন আর উপভোগ করুন পৃথিবীর ৩য় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা এর অসাধারণ ভিউ। তারপর ঘুরে আশেপাশে আরও কিছু দেখার বাকি থাকলে ঘুরে দেখে নিতে পারেন। তারপর চলে আসুন শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি থেকে বর্ডারে এসে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ শেষে বর্ডার পার হয়ে সন্ধ্যায় উঠে পড়ুন ঢাকার বাসে।

দার্জিলিং ভ্রমণ খরচঃ  খরচ কত হবে তা নির্ভর করে সাধারণত আপনি কোন সময় যাচ্ছেন, কতদিন থাকবেন, কেমন মানের হোটেলে থাকবেন, খাবারের পিছনে কেমন খরচ করবেন। এমন অনেক গুলো বিষয়ের উপর। মোটামুটি বাজেটের কথা চিন্তা করলে ঢাকা থেকে দার্জিলিংয়ে যাতায়াত, থাকা, খাওয়া বাবদ ৫ রাত ৪ দিন (৩ রাত দার্জিলিং থাকা) থাকতে জনপ্রতি ১৫,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। আর কম খরচে ঘুরতে চাইলে কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে গেলে এবং শেয়ার জীপে যাতায়াত, হোটেলে শেয়ার করে থাকা ও খাওয়া দাওয়া এই সবকিছুতে মিলেমিশে করলে জনপ্রতি ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যেও সুন্দর করে ঘুরে আসা সম্ভব। যদি ৩ রাত না থেকে ২ রাত থাকেন তাহলে খরচ আরও কমে যাবে।

দার্জিলিংয়ে কোথায় থাকবেনঃ  দার্জিলিং-এ বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে। বাজেট হোটেলের মধ্যে হোটেল টাওয়ার ভিউ, দেজং রেট্রেট, এভারেস্ট গ্লোরি, কি কিবা ধী, হোটেল ইভি ক্যাসেল, হোটেল এভারেস্ট গ্লোরি, পাহাড়ি সোল, বেনু’স এর মতো হোটেল গুলোতে ৬০০-৮০০ এর মধ্যে দুই জনের জন্য থাকার রুম পেয়ে যাবেন। আবার একটু বেশী বাজেটের মধ্যে হলেও পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় নিউ সিঙ্গালিয়া পার্ক হোমস্টে, হিমশিখা হোমস্টে, ফ্রাতেরনিতি হোমস্টে, মাউন্টেইন হোমস্টে এর মতো হোম স্টে গুলোতে ৯০০-২০০০ টাকার মধ্যে দুই জন থাকতে পারবেন। অনালাইনে রুম বুকিং এর ক্ষেত্রে booking.com, hotels.com, expedia এর মতো সাইটগুলো চেক করে দেখবেন। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন। কোন হোটেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যেও এই সাইট গুলোর রিভিউ ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গুলো দেখে নিতে পারেন।



দার্জিলিংয়ে খাবার ও আবহাওয়াঃ 

দার্জিলিংয়ের স্থানীয় খাবার অসাধারণ লেগেছে। জিনিসপত্রও সস্তা মনে হয়েছে। সেখানে অনেক ধরনের খাবারের হোটেল আছে। মুসলিমদেরও আছে বেশ কয়েকটি। আর জনপ্রিয় স্থানীয় খাবারের মধ্যে গানড্রাক (গাঁজানো সরিষা পাতা), মম (মাংস বা সবজি দিয়ে পিঠার মত খাবার), থুপকা (মাংস, নুডলস, ডিম ও সবজি দিয়ে তৈরি ঘন স্যুপ), আলু দম, নাগা প্ল্যাটার এবং চ্যাং (স্থানীয় বিয়ার) খেয়ে দেখবেন। আর অবশ্যই মাটির ছোট কাপে দার্জিলিং এর স্পেশাল চা ও দার্জিলিং এর কমলা খেতে ভুলবেন না। শীতের জন্য মোটা কাপড় নিয়ে যাওয়া উচিত, আমরা রাতে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেঃ পেয়েছিলাম। দার্জিলিং-এ এপ্রিল থেকে জুন ও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের সময়টাতে আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো থাকে। আর তাই এই ছয় মাস দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুন্দর সময়। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীতের প্রকোপ একটু বেশীই থাকে।

দার্জিলিংয়ে কেনাকাটাঃ  দার্জিলিং শহরের লাডেন-লা রোডে বেশকিছু ছোট-বড় মার্কেট ও দোকান রয়েছে। এইসব মার্কেট থেকে নিশ্চিন্তে প্রয়োজনীয় শীতের পোশাক, হাতমোজা, মাফলার, সোয়েটার, লেদার জ্যাকেট, নেপালি শাল, শাড়ি, লেদার সু ও প্রিয়জনদের জন্য গিফট আইটেম কিনতে পারেন। টাইগার হিলের বেশ কিছু লোকাল শপ থেকে অন্যান্য জিনিসের সাথে সাথে সুভেনিয়র ও কিনতে পারবেন। আর ভালো চা পাতা কেনার ক্ষেত্রে লোকাল কোনও দোকান থেকে কেনার চেয়ে ভালো কোনো ভালো টি ষ্টেট থেকে কেনা সবচেয়ে ভালো। দাম ও কম পাবেন ও বিভিন্ন গ্রেডের চা পাতাও খুঁজে পাবেন।

কিছু ভ্রমণ টিপসঃ

  • বর্ষা মৌসুমে দার্জিলিং-এ পাহাড় ধস ঘটে তাই এই সময়টা দার্জিলিং-এ না যাওয়াই ভালো।
  • পাহাড়ের উপর অবস্থিত টুরিস্ট স্পটে যাওয়ার ক্ষেত্রে হিল স্যান্ডেল এড়িয়ে ভালো মানের স্লিপার বা স্যান্ডেল পড়বেন।
  • হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়, তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন।
  • দার্জিলিংয়ের লোকাল দোকানের চেয়ে বড় বড় শপিং মল বা মার্কেট থেকে কেনাকাটা করলে ভালো জিনিস পাবেন ও ঠকার সম্ভাবনাও কম থাকবে।
  • পিকসিজনে পর্যটকদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে আর তাই হোটেল গুলোতেই রুম পাওয়ার জটিলতা এড়ানোর জন্য অবশ্যই অগ্রিম হোটেল বুকিং দিয়ে রাখবেন।
  • দার্জিলিং এ হোটেলে রুম বুক করার আগে হোটেলে গরম পানি আর রুম হিটারের ব্যবস্থা আছে কিনা জেনে নিন।
  • হিমালায়ান পার্ক যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত পরিষ্কার পরিচ্ছন একটি পার্ক তাই পার্কে ঘুরাঘুরি করা সময় যথা সম্ভব পরিচ্ছনতা বজায় রাখবেন ও কোনও প্রাণীদের অযথা বিরক্ত করবেন না।
  • দার্জিলিং রক গার্ডেন থেকে খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো বেশ দূরে তাই এখানে ঘুরতে গেলে সাথে খাবার নিয়ে যাওয়া ভালো।
  • অবশ্যই টাকা বা ডলার সরকার অনুমোদিত ডিলারের কাছে থেকে রুপিতে পরিবর্তন করে নিতে ভুলবেন না।
  • দার্জিলিং পরিচ্ছন্ন শহর, দয়া করে নোংরা করবেন না। 
  • দার্জিলিংয়ে উন্মুক্ত ধূমপান করা দণ্ডনীয় অপরাধ, সুতরাং ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।


Saturday, June 6, 2020

সময় : সুসময় - দুঃসময় ও অসময় (পর্ব ২)

সরকারি চাকরির নিয়োগ বেশ দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই শুধু একটি পরীক্ষা দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। পাশাপাশি অন্যান্য চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। মাস্টার্স চলাকালীন অবস্থায় বেশ কয়েকটি সরকারি ব্যাংকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। যদিও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হইনি, তার পরেও হাল ছেড়ে দেইনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।

Friday, June 5, 2020

সময় : সুসময় - দুঃসময় ও অসময় (পর্ব ১)

সময় সাধারণত দুই প্রকারভালো সময় আর খারাপ সময় এছাড়া অন্য যা আছে সেটি হল  অসময় / ভুল সময় ভালো সময় রাস্তার ফকিরকেও রাজা বানিয়ে দেয়, আর খারাপ সময়ে ঘটে ঠিক তার উল্টোটা কিন্তু এই দুই প্রকার সময়ের মধ্যে এক অদ্ভুত মেলবন্ধন রয়েছে কারো জন্য ভালো সময় তো অন্য কারো জন্য সেটি খারাপ সময় আর সে জন্যই বলা হয়ে থাকে - কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ কখনো কখনো ভুল সময়ে সঠিক কোন ঘটনা ঘটে যায়, আবার কখনো সঠিক সময়ে ভুল কিছু ঘটে

Sunday, April 26, 2020

ইসলামের দৃষ্টিতে নামাজ ও রোজার গুরুত্ব

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ ও রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজ ও রোজা'র আরবি শব্দ যথাক্রমে - ‘সালাত’ ও ‘সওম’ , আভিধানিক অর্থ করলে দাঁড়ায় যথাক্রমে - 'প্রার্থনা করা' ও 'বিরত থাকা'। নামাজ ও রোজা সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত এখানে তুলে ধরা হলো। 


 - اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ


নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও ঘৃণিত কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা: আনকাবূত, আয়াত-৪৫)

 - قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ- الَّذِيْنَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خَشِعُوْنَ

নিশ্চয় মুমিনগণ সফলকাম, যারা নিজেদের নামাজে অন্তরের বিনয় প্রকাশ করে। (সূরাঃ মু‘মিন, আয়াত ১-২)


-  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ


হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।  (সূরা বাকারা, আয়াত ২:১৮৩)

- إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

ধৈর্যশীলদের তো অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে।  (সূরা জুমার, আয়াত ৩৯:১০)


এছাড়া আরও বলা হয়েছে :

  • তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিঃসন্দেহে তা বড়ই কঠিন- বিনীতদের জন্যে ছাড়া । ( সুরাহ বাকারাহ ২: ৪৫)
  • রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৫)।

এবং হাদিসে রয়েছে :

  • হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের অভিমত কী, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকতে পারে? তারা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। রাসূল (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এরূপই। বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার অপরাধসমূহ মিটিয়ে দেন। (সহীহ বুখারী: ৫২৮, সহীহ মুসলিম: ৬৬৭)
  • উসমান ইবনে আবিল আস রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল। মুমিনগণ এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬২৭৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৯)
  • হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমার সালাত থেকে অপর জুমার সালাত এবং এক রমযান মাসের সিয়াম হতে অপর রমজান মাসের রোজা সেসব গুনাহের জন্যে কাফফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে; যখন কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (সহীহ মুসলিম:২৩৩)

তাই সকল ঈমানদারদের প্রতি সালাত কায়েম করা এবং সিয়াম সাধনার আমন্ত্রণ রইল, সেই সাথে তাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নামাজ ও রোজার স্থায়ী সময়সূচী এখানে দিয়ে দেয়া হলো।


দেখার জন্য ক্লিক করুন

জানুয়ারি - জুন জুলাই -ডিসেম্বর নির্দেশিকা