Monday, August 8, 2016

খাইয়া ছাইড়া দিমু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স পড়ার সুবাদে বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব পেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হল এদের সবারই কিছু বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, বলা যেতে পারে Unique Characteristics. এরকমই একজন ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মানী। যিনি আরও বেশ কয়েকটি নামে আমাদের মাঝে পরিচিত ছিলেন যেমন : 

গামছা মানী  -  গামছার মাধ্যমে বিশেষ কার্য সম্পাদনে দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ এই নাম দেয়া হয়। 
মানী স্যার  -  তার মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ স্যাররাও তাকে স্যার বলে ডাকত। 
মানী দ্যা লিচু  -  এর ব্যাখ্যা আপাতত সেন্সর করা হল। 
ফট্টি (40) মানী  -  কোন এক দুপুরে জনসম্মুখে তার শক্তি প্রদর্শনের কারনে এই নাম দেয়া হয়। 

আসলে এইসব নামের ব্যাখ্যা দিতে গেলে, অর্থাৎ নাম করনের সার্থকতা আলোচনা করতে গেলে এক একটা মহাকাব্য রচনা করতে হবে। তাই আপাতত সেদিকে না গিয়ে তার একটা বিশেষ ডায়লগ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আর সেই বিশেষ ডায়ালগটি হল 'খাইয়া ছাইড়া দিমু'। বিশেষ কিছু প্রেক্ষাপটে তার মুখ থেকে বিশেষ এই ডায়ালগটি শোনা যায়।  তাহলে চলুন দেখা যাক কি সেই প্রেক্ষাপট আর আসলে সে কি খাবে আর কি ছাড়বে !

আমরা দুজনেই মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারনে প্রায় সময়ই একসাথে আসা যাওয়া করতাম, আড্ডা দিতাম বা ঘোরাফেরা করতাম। বিভিন্ন সময় তার সাথে কথোপকথনে একই ধরনের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি ঘটে।  প্রেক্ষাপট অনেকটা একই হবার কারণে এই ঘটনা গুলোকে একই ক্ৰমে তুলে ধরা হল। 

ঘটনা ১ ( ২০১২ সাল )

আমি, মানী এবং আশেপাশে আরও অনেক বন্ধুরাই ছিল। সবাই কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মানী কোন এক রমণীর দিকে বার বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম :
-            কিরে কি দেখছিস ? পছন্দ হইছে নাকি ?
-            আরে নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ২ ( ২০১৪ সাল )

আমি আর মানী রিকশায় করে যাচ্ছিলাম সম্ভবত নীলক্ষেত বা আজিমপুরের উদ্দেশে। সামনে কোন এর রমণীর দেখা পেয়ে তার প্রতি ইঙ্গিত করে মানী বলছিল :
-             দেখ, শালি একটা মাল ।
-            চেহারা তেমন একটা ভাল না ।
                [ আমার কাছে রমণীর চেহারা বিশেষ ভাল না লাগলেও ভাল ফিগারের অধিকারিণী ছিল ]
-            আরে চেহারা দিয়া কি হইব ? খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ৩ ( ২০১৬ সাল )

আমি, রিয়ান ভাই আর মানী কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি আসার আগেই কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল আর সেই ব্যাপারেই মানী আর রিয়ান ভাইয়ের মাঝে কথা হচ্ছিল।
-           ভাই যেই মেয়েটার টাকা পড়ে গিয়েছিল ঐ মেয়েটার চেহারা কেমন ছিল খেয়াল করছিলেন ? ভাল ছিল ?
-           আমি খুব একটা খেয়াল করি নাই ।
-           আমিও দেখি নাই ।
-           তবে ভাল ছিল না মনে হয় ।
-           ব্যাপার নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

যাইহোক, আমার জানামতে এই ঘটনা গুলো এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আদৌ সে কি খেয়েছিল, কি না খেয়েছিল কিংবা ছেড়ে দিয়েছিল নাকি ধরেছিল তা আমার জানা নেই। বলতে পারেন এগুলো আমাদের সমাজের নিত্য দিনের ঘটনা। এতে হয়তো কোন ব্যাক্তি বিশেষের ক্ষতি না হলেও নিজেদের চিন্তা-চেতনার ক্ষতি ছাড়া কোন বিশেষ লাভ হয় না।

সব মানুষের পছন্দ-অপছন্দ একরকম নয়। তার থেকেও বড় ব্যাপার এই যে এই পছন্দ-অপছন্দ আবার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। আজকে যা আপনার ভাল লাগছে, আগামীকালও যে সেটা আপনার ভাল লাগবে তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। তাই শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিক্তিতে কাউকে বিচার-বিবেচনা করাটা আমার কাছে সবসময় সঠিক বলে মনে হয় না।

অনেক কিছুই লিখে ফেললাম, মূল কথা হল আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, দেখবেন আপনার চারপাশটা আপনা আপনিই বদলে যাবে। 

পরিশেষে, কেউ আবার আমার সেই বন্ধুটি সম্পর্কে কোন বিশেষ ধারণা পোষণ করবেন না। বিভিন্ন সময় 'খাওয়া' অতঃপর আবার 'ছেড়ে দেয়ার' কারনে বিশেষ কোন সমস্যা দেখা দিতেই পারে। এরকম অন্তত একজন বন্ধু হয়ত সবারই আছে। আর আমি মূলত মানুষে - মানুষে পার্থক্য খুব কম করি, তাই সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। সাধারণতঃ অন্য কারও দ্বারা আমি প্রভাবিত হই না। যারা অন্যের দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয় তারা খুব দুর্বল ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন হয় অথবা তাদের নিজের কোন ব্যাক্তিত্ব বোধই থাকে না।

যাইহোক, আশা করব সে যেন এমন খাদ্যের সন্ধান পায় যা খাওয়ার পর আর ছাড়তে না হয়। তার অনেক দিনের ( সম্ভবত ১ম বর্ষে পড়ার সময় থেকেই ) ইচ্ছা ছিল আমাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের যার নাম সে পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিল। আমার সেরকম কোন বিশেষ ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মধ্যে লেখালেখি করলে মন্দ হয় না।


0 comments:

Post a Comment