Friday, September 2, 2016

অসমাপ্ত ( ১ম পর্ব )

সঠিক দিন, তারিখ, ক্ষণ কোন কিছুই মনে নেই। কেবল এতটুকুই মনে আছে সেদিন আকাশ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরেছিল। হয়ত প্রকৃতিও আমাদের প্রথম সাক্ষাৎকে তার অনিন্দ্যসুন্দর ভঙ্গিমায় উদযাপন করে নিয়েছিল। অনেক কারনেই ঢাকার বাইরে অন্য যে শহরটাতে আমার সবথেকে বেশি ভ্রমন করা হয়েছে সেটি হল খুলনা শহর। আর খুলনা শহরে আমার ফেলে আসা অনেক স্মৃতির মধ্যে সবথেকে পছন্দের স্মৃতিই ছিল তার সাথে কাটানো কিছু সময়।

আমি জানি না তার নামটি কি ছিল, জিজ্ঞাসা করিনি, হয়তোবা তাকে হারিয়ে ফেলার কথাটাও তখন চিন্তা করিনি। যাইহোক, লেখার সুবিধার্থে আর পাঠকের কাছে লেখাটি সহজবোধ্য করার জন্য তার একটা নাম দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। আমার জীবনে অনেকটা স্বপ্নের মতোই সে এসেছিল, যে স্বপ্নের ব্যাপ্তিকাল ছিল মাত্র সাড়ে ছয় ঘন্টা। সেই স্বপ্ন, যা ছিল কাল্পনিক, অলীক যাকে আজও শুধু আমিই অনুভব করতে পারি। তাকে ধরা যায় না বা ছোঁয়া যায় না, তাই তার নাম দেয়া যাক অধরা।

সকাল সকাল নাশতা সেরে বেরিয়ে পড়েছিলাম মেস থেকে। সকাল পৌঁনে দশটায় বাস ছাড়বে খুলনা শিববাড়ি মোড় থেকে তারপর দশটায় সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকার উদেশ্যে ছেড়ে যাবে। গতরাতেই কথা হয়েছিল সেই অনুযায়ী আমার সাথে আমার মতো আরও এক হতভাগার একই বাসে যাবার কথা ছিল। কিন্ত সকালেই সে ফোন করে জানিয়ে দিল যেতে পারছে না, অতি মাত্রায় সিরিয়াস শিক্ষার্থী হলে যা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষা সে তো আমারও ছিল। সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়েই তো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে কবে ছুটি দিবে তার জন্য আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, তার থেকে বরং আমিই কিছুদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ছুটি দিয়ে দিলাম। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কেন স্কুল কলেজে থাকতেও আমার এই ছুটি দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। কেউ আসুক বা নাই আসুক, ছুটি পাক বা নাই পাক আমি আপাতত এই প্যারাময় জীবন থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসি।

কাউন্টারে পৌঁছে আবারও সেই হতভাগাকে ফোন দিলাম তারপর তার টিকেটটা বাতিল করে আমি বাসের উদ্দেশ্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এ.কে ট্রাভেলস এর কাউন্টার, ঢাকা-খুলনা রুটের এক অপ্রতিদ্বন্দী বাস সার্ভিস। বেশিরভাগ সময় এই বসেই আসা-যাওয়া করতাম তাই এখানকার লোকজনও পরিচিত ছিল। ফোনে আগেই বলে রেখেছিলাম তাই নতুন করে আর কিছু বলারও প্রয়োজন হয়নি। বাস আসতে আরও প্রায় ২৫ মিনিট লাগবে। পরিচিত থাকায় কিছু এক্সট্রা সুবিধা পেতাম, ওরা চা অফার করল আমিও চা খেতে খেতে ঐ দিনের পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম এক সুন্দরী রমণী কাউন্টারে এসে রানিং বাসের টিকেট চাইছে। সম্ভবত যেই টিকেটটা আমি একটু আগে বাতিল করেছিলাম সেটিই একমাত্র খালি সিট্ ছিল, না হলে হয়ত কোন কারনে ঐ সিটটাই তার পছন্দ হয়েছিল, কে জানে? কাউন্টারের লোকটা বলছিল যে এই সিটটা একটু আগেই বাতিল করা হয়েছে তাই তাকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে নয়ত পরবর্তী বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হত।

যাইহোক, আমিও চা শেষ করে উঠে পড়লাম আর বাস আসতে যেহেতু আরও বেশ কিছুটা সময় বাকি তাই বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। সকাল থেকে আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকলেও এতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল না। বাতাসের গতি-বিধিতেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই বৃষ্টি শুরু হবে। আমিও তাই বৃষ্টির অপেক্ষা করতে লাগলাম। বৃষ্টি আসবে আর আমি ভিজব না এমনটা আবার হয় নাকি? তাহলে তো শুধু আমার না বৃষ্টিরও খারাপ লাগবে।

ছোটবেলা থেকেই আমি বৃষ্টিবিলাসী, বৃষ্টির সাথে যেন আমার অনেক পুরোনো দিনের সখ্য। তাছাড়া আমার জীবনের সবথেকে বড় দুর্ঘটনাটি তখনও ঘটেনি তাই এখনকার মত বৃষ্টিকে এড়িয়ে চলতাম না সেই সময়। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কল্পনায় হারিয়ে যাওয়াটাই তখন স্বাভাবিক ছিল যেমনটা এখন আমার কাছেই কল্পনার বিষয় মনে হয়। এখন যদি বৃষ্টিতে ভিজতে হয় তবে সেটা একান্ত বাধ্য হয়েই ভিজতে হয়, যখন অন্য কোন উপায়ান্তর থাকে না। তাছাড়া এখন এই বৃষ্টি আর আমাকে সেই পুরোনো দিনের আবেগ, অনুভূতি দিতে পারে না। পুরোনো সেই সময়ের সাথে পুরোনো সেই বৃষ্টিটাও যেন হারিয়ে গেছে।

ঝড়ো বাতাস বইছে, রাস্তায় ছুটছে সবাই। যে যেখানে পারছে আশ্রয় নিচ্ছে। যদি এখন সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সহ ব্যাগটা না থাকত আর যদি ঢাকার উদ্যেশে রওয়ানা না দিতাম তবে ঝড়ো বাতাস উপেক্ষা করেই বৃষ্টিতে ভিজতাম। আমি সকলের শেষে অর্ধেকটা ভেজা অবস্থায় কাউন্টারে প্রবেশ করলাম। সে সময় কাউন্টারে আমরা তিন চার জন লোক ছাড়া আর তেমন কেউ ছিল না। দেখলাম সেই সুন্দরী রমণীটি কাউন্টারের সামনে এক কোনায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে। ঝড়ো বাতাসে তার বাঁধনহারা এলোমেলো চুলগুলো তাকে বড্ড বিরক্ত করছিল। তবুও সে তার দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে ছিল ঐ সুদূর আকাশপানে, যেখান থেকে মেঘ গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে। এই সুনয়না, এলোকেশী, সুহাসিনী, অপরূপা রূপসীই হচ্ছে অধরা।
( চলবে )
[ বি. দ্র :  এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Related Posts:

  • অসমাপ্ত ( ২য় পর্ব ) বৃষ্টিতে আমি প্রায় বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিলাম তাই ফ্যানের ঠিক নিচের সিটেই বসে পড়লাম যাতে শার্টটা অন্তত কিছুটা হলেও শুকিয়ে যায়। বৃষ্টির কারনে … Read More
  • What's on my mind ( Part 13 ) “Sometimes it takes a good fall to really know where you stand”     ― Hayley Williams “All you need in this life is ig… Read More
  • উপলদ্ধি ( ৪র্থ পর্ব )  If I'm 'The God' for someone then I must be 'The Devil' for someone else . If you wanna be good then be the best or if you wanna be bad then … Read More

0 comments:

Post a Comment