Showing posts with label love. Show all posts
Showing posts with label love. Show all posts

Wednesday, April 1, 2020

অসমাপ্ত ( ৭ম পর্ব )

বিদায় বেলায় দুজনেরই হয়ত কিছু বলার ছিল তবে কেন যেন কেউই কিছু বলতে পারছিলাম না। বিচ্ছেদের এই সময়টা যে আসবে সে তো আমাদের জানাই ছিল। মাতৃভাষায় এত লক্ষ সহস্রাধিক শব্দ থাকা সত্ত্বেও মনের কথাটি বলার জন্য উপযুক্ত কোন শব্দ কেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না? রবীন্দ্রনাথের মত ভাষা আমার নেই, থাকলে হয়ত বলতে পারতাম -

``যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।"

বেশ কিছুক্ষন ইতস্ততঃ করার পর সে বলে উঠল - ``কিছু বলবে?" কি বলব আমি? কিভাবে তাকে বুঝাব যে আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ? আমি শুধু  তাকিয়ে রইলাম। কেন যেন আমার চোখের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছিল না ওর। কথাটি বলার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা বলতে চাইছিল। কোন এক অজানা কারণে কথাটি তার কণ্ঠ থেকে মুখ অবধি পৌঁছাতে পারছিলো না। চারিদিকে মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। সবাই ব্যাস্ত, ছুটে চলেছে আপন কর্মক্ষেত্রে। আমরা দুটি নিশ্চল প্রাণী সেখানে বেমানান।

হঠাৎ কোন কিছু না বলেই ঘুরে চলতে শুরু করল অধরা। আমি তখনও অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, এতক্ষনে আমার চেতনা ফিরে আসল। তাকে যে অনেক কথা বলার ছিল, কি বলব তাকে আমি? আমি কি তার প্রেমে পড়েছি? ভালবাসি?

জীবন নদীতে স্রোতের বিপরীতে দাঁড় বাইতে বাইতে আজ আমি ক্লান্ত। মনে হচ্ছিল হাল ধরার দায়িত্বটা কাউকে দেয়া উচিৎ। এতটা অসহায় আর কখনো মনে হয়নি, এতটা ক্লান্তিও আর কখনো অনুভব করিনি। তবে কি সত্যিই তাকে ভালবেসে ফেলেছি? নাহ ! আমার মত একজন আত্মসচেতন আর চেতনাবোধ সম্পন্ন ছেলের পক্ষে এরকম চিন্তা করাটা একদমই অনুচিত।

যদি বলি ভালবাসি তবে মিথ্যা বলা হবে। কেননা `Love at first sight' এ আমি বিশ্বাস করি না, বরং সেটা `Lust at first sight' হতে পারে। প্রথম দেখায় কাউকে ভাল লাগতেই পারে তবে ভালবাসা এতটা সস্তা নয়। ভালবাসা অমূল্য, শুধুমাত্র চোখের জলে তার মূল্য দেয়ার চেষ্টা করাটাও বৃথা। আপনি যদি কাউকে সত্যিই ভালবেসে থাকেন তবে আপনার বুকে হাত রেখে, চোখ বন্ধ করে তার কথা ভাবুন আর বলুন ভালবাসি। দেখবেন আপনার হৃদয় থেকেও তেমনটাই উত্তর পাবেন। তাছাড়া যার জন্য আমার দু-ফোঁটা চোখের জলও ঝড়েনি তাকে আর যাই হোক ভালবাসি বলতে পারি না।

তবে কি বলব তোমাকে অনেক ভাল লেগেছে, এতটা কম সময়ে এতটা বেশি ভাল আর কাউকে লাগেনি, এতটা কাছেও কেউ আসতে পারেনি। আরও কিছু সময় পেলে হয়ত . . . নাহ থাক ! এরকমটা বললে হয়ত ভুল কিছু ভেবে বসতে পারে অথবা এটাও ভাবতে পারে যে আমি তার প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছি। তাহলে কী বলব আমি ?

সময় পার হয়ে যাচ্ছে, ইতোমধ্যে বেশ খানিকটা দূরে চলে গেছে অধরা। চারপাশে মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। কিছু বলতে হবে তাকে, আবার কখনো আমাদের দেখা হবে কি না? তার ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা না হোক অন্তত ফেসবুক আইডিটা তো চাইতেই পারি। ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, ততক্ষণে সে অনেকটাই দূরে চলে গেছে। কিভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করব? কি বলে ডাকব তাকে? আমি যে তার নামটাও জানি না। ক্রমশঃ আমাদের মাঝে দূরত্ব বেড়েই চলেছে, সে চলে যাচ্ছে দূর থেকে আরও দূরে।

কলেজ জীবন থেকেই মিউজিক করতাম, একটা ব্যান্ড ও ছিলো আমার যার গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্টও ছিলাম। 'মহীনের ঘোড়াগুলি' - ব্যান্ডের সেই গানটি কখনো স্টেজে না গাইলেও সেই সময় সেটাই আমার বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছিলো :

``ভেবে দেখেছো কি
তারা-রাও যতো আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে ।।"

একটি বারের জন্যেও কি ফিরে তাকাবে না অধরা? দয়া করে একটি বার হলেও ফিরে তাকাও, না হয় দূর থেকেই শেষ বারের মত তোমায় দেখব। অধরা যতই দূরে চলে যাচ্ছে তাকে একটি বার অন্তত দেখার আকাঙ্খাও ততটাই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সেই সাথে তাকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কাও আমাকে ঘিরে ফেলেছিল। চিৎকার করতে চাইলেও তা পারছিলাম না, এই ভিড়ের মধ্যে কে-ই বা আমার চিৎকার শুনবে। অধরাকে শেষ বারের মত দেখার আশাটাও যখন বিসর্জন দিতে বসেছিলাম ঠিক তখনই ভাগ্যদেবতা আমার প্রতি মুচকী হাসলেন।

দূরে একটা যাত্রী ছাউনির নিচে গিয়ে অধরা দাঁড়িয়ে পড়ল আর আমি তখনও লোক-জনের ভিড়ের ঠিক কেন্দ্র বিন্দুতে। এই বার অধরা পেছনে ফিরে তাকাল, হাজারো মানুষের মাঝে তার দৃষ্টি ঠিকই আমাকে খুঁজে পেয়েছিল। আমি আর এগিয়ে চলার শক্তি পাচ্ছিলাম না, তাকে দেখতে দেখতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা হাসল সে তারপর বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া তার চুল গুলো কপালের নিচ থেকে, চোখের ঠিক পাশ দিয়ে গাল পর্যন্ত টেনে কানের পাশে সরিয়ে দিল সেই সাথে তার গোলাপি ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি পৃথিবীর সব কিছু ভুলে গেলেও তার সেই নিষ্পাপ চাহনি কখনো ভুলতে পারব বলে মনে হয় না।

কোথা থেকে যেন আবার এগিয়ে চলার শক্তি সঞ্চারিত হল আমার শরীরে, হয়ত অধরার চাহনিতেই সেই শক্তি লুকায়িত ছিল। আবার ভিড় ঠেলে এগিয়ে চলতে শুরু করলাম, আগের চেয়ে দ্বিগুন গতিতে। কিন্ত এইবার ভাগ্যদেবতা মুচকী নয় অট্টহাসি হাসলেন, কোথা থেকে যেন সাদা একটা প্রাইভেটকার এসে সেই যাত্রী ছাউনিটার সামনে থামল আর অধরা আমার দিকে ফিরে তার সেই ভুবনভুলানো মুক্তাঝড়া হাসি দিয়ে গাড়িটাতে উঠে পড়ল। আর তারপর বাকিটা ইতিহাস ...

সেই ইতিহাস আর লিখতে চাই না, ভেবেছিলাম এই গল্পটাও কখনো লিখব না। তবে কেন লিখলাম ? আসলে যা অসমাপ্ত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, থেকে যায় কিছু কথা, কিছু স্মৃতি। গল্পের শেষ কোথায় তা আমরা জানি না, কখনো তার সমাপ্তি হয়, কখনো হয় না।

সেদিনের পর থেকে আজ অবধি অধরা আর আমার কাছে ধরা দেয়নি। জানিনা, আর কখনো আমাদের দেখা হবে কি না। শুনেছিলাম, হারম্যান ভাইলের আবিষ্কারের (১৯২৯) প্রায় ৮৫ বছর পর ২০১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞনীরা (ভাইল ফার্মিয়ন) অধরা কণার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। তেমনি হয়ত আমিও কোন একদিন অধরাকে খুঁজে পাব।

যদি আবার কখনও আমাদের দেখা হয়েই যায় তবে না বলা সেই কথা গুলো অবশ্যই তাকে বলব। কী বলব, কিভাবে বলব এসব নিয়ে আর চিন্তা করব না। তার চোখের দিকে তাকিয়ে যা মনে আসবে বলে ফেলব। যদি আবারও ভাষা হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা দেখা দেয় তবে তার পূর্বে এতটুকু অবশ্যই বলব - আমার দেখা বিধাতার সুন্দরতম সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন তুমি। দয়া করে তোমার নামটা আমায় বলবে কি ?
(সমাপ্ত )

Sunday, March 22, 2020

অসমাপ্ত ( ৬ষ্ঠ পর্ব )

বাসে দুজন পাশাপাশি বসে একে অপরের দিকে শুধু তাকিয়েই ছিলাম, মাঝে মাঝে হাসি দিয়ে সে হয়তো সম্মতি দিচ্ছিলো আমি চাইলে কিছু বলতে পারি কিন্তু কিভাবে বোঝাই আমিও যে অনেকটাই লাজুক স্বভাবের। কিছু তো বলতে পারলামই না শুধু তাকিয়েই রইলাম। তারপর একসময় সেই বলতে শুরু করলো :

- আমি আসলে অনেক একা।  মানুষের সাথে খুব একটা মিশতে পারি না। 
- এমনটা বলছো কেন ? আমি যতদূর জানি উত্তর বঙ্গের মেয়েরা বেশ মিশুক হয়। 
- হতে পারে।  তবে আমি তেমনটা নই। আসলে অনেক কষ্ট পেয়েছি মানুষের কাছ থেকে।  তাই আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। 
- বুঝতে পেরেছি , তাই হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। উল্টো ভয় পাচ্ছেন। 
- ভয় কেন পাবো ? আপনি তো ভয়ংকর না, বেশ সুদর্শন আর স্মার্ট একটা ছেলে। সহজেই যে কোনো মেয়ের ক্রাশ হতে পারেন। 
- হা: হা: হা:  তাই ? আমি আসলে বলতে চাইছিলাম আপনি হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছেন। 
- তা কিছুটা ভয় তো আছেই, আপনি অপরিচিত মানুষ তাই। 
- আসলে পরিচয় ব্যাপারটাই কি মূল বিষয় ?  আপনি, আমি বা আমরা সবাই পৃথিবীতে আসার পর তিন মাস বয়স পর্যন্ত কাউকেই চিনতে পারি না। শিশুরা প্রথমে তার মা - কেই চিনতে পারে। বড় হবার পর মা আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। 
- আপনি তো অনেক কিছু জানেন দেখছি। 
- তেমনটা নয়, আপনি ভবিষ্যৎ ডাক্তার।  এসব তো আপনিই ভালো জানবেন। 

এর মধ্যেই বাস ফেরিতে উঠে গেছে, আর ফেরিটাও চলতে শুরু করেছে। অধরাকে বললাম সে বাইরে যাবে কি না, কেননা আমি চাচ্ছিলাম ফেরি থেকে নদীটাকে দেখতে।  নদীর মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করতে বেশ ভালো লাগতো।  আমি উঠে দাঁড়াতেই দেখি অধরাও আমার সাথে যাবার জন্য প্রস্তুত।

বাইরে বেরিয়ে ফেরির সামনের দিকটায় চলে আসলাম। একপাশে দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। অধরাও তাকিয়ে আছে, তবে কেন যেন তাকে বেশ উদাস মনে হচ্ছিলো। কিছু জিজ্ঞাসা করবো কি না বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছিলো সে ও হয়তো কিছু বলতে চাইছে। ভাবলাম আগ বাড়িয়ে কিছু বলার থেকে অপেক্ষা করাই ভালো। এসব ভাবতে ভাবতেই পশে ফিরে দেখি অধরা নেই। কোথায় গেলো হঠাৎ করে ? আশে-পাশে খুজলাম, দেখতে পেলাম না। সে কি বাসে উঠে গেলো ? কিছু না বলে চলে কেনই বা চলে গেলো ? কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

ভাবলাম বাসে গিয়ে দেখে আসি, আবার ভাবলাম ফিরে গিয়ে কি বলবো ? কেন চলে আসলো এভাবে সেটা জিজ্ঞাসা করা কি ঠিক হবে ?  তারপরেও গেলাম।  কিন্তু না, সে তো বাসে নেই। তাহলে কোথায় গেলো ? এসব চিন্তা করেই ফেরির চারপাশে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম কত গুলো ছেলে সিগারেট ফুঁকছে অধরা সেখানেই। ছেলে গুলো তাকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে আছে। সে তার চারিদিকে মানব সৃষ্ট দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু ছেলে গুলো ইচ্ছে করেই তাকে ঘিরে রেখেছে। সে বেরিয়ে আসার জন্য যে দিকটায় অগ্রসর হচ্ছে ছেলে গুলোও সে দিকটা ব্লক করে দিচ্ছে। আমি দ্রুত সে দিকটায় অগ্রসর হলাম। কাছাকাছি যেতেই ছেলে গুলো আমাকে এগিয়ে আসতে দেখে সরে গেলো।  অধরাও সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসলো। অধরাও যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ছেলে গুলো এমন ভাব করে চলে গেলো যেন তারা একজন অপরকেই চিনে না, এতক্ষন যেন কিছুই হয়নি।

ভাবছিলাম এগিয়ে গিয়ে ওদের একটা উচিৎ শিক্ষা দিবো কিন্তু অধরা বেশ দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই অধরা আমাকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরলো। আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম সে কিছুটা ভয় পেয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, কিন্তু তার দু-হাতের এই বাঁধন মুক্ত হয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা আমার নেই। মনে হচ্ছিলো যুগ যুগ ধরেও  যদি আমাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয় আমি হাসিমুখে সেই বন্দিত্ব মেনে নিবো। এমন মায়ার বাঁধনে কেউ বেঁধে রাখলে সেই বাঁধন মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে এমন সাধ্য কি কারও আছে ?

যেই ছেলে গুলোকে উচিৎ শিক্ষা দিবো ভেবেছিলাম তারা তো পালিয়েই গেলো আর বন্দি হয়ে গেলাম আমি। চারিদিকে তাকিয়ে যা বুঝলাম সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কি করবো ? আমি তো এই বন্ধন ছাড়তে চাই না ! কিছুক্ষন পর অধরা নিজেই বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। তারপর দ্রুত পায়ে বাসের দিকে এগিয়ে গেলো। আমি সম্ভবত বেশ কিছুটা সময় সম্মোহিত অবস্থায় ছিলাম। চারপাশে কি ঘটে চলেছে তার কোন খেয়ালই ছিলো না। ফেরি ইতোমধ্যে ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমিও বাসে উঠে পড়লাম।

দেখতে পেলাম অধরা মুখ ফিরে চুপ করে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছিলাম না। বাস চলতে শুরু করলো, মনে হচ্ছিলো এখন বেশ দ্রুত গতিতেই ছুটে চলেছে বাস। দুজনেই অনেক্ষন চুপ ছিলাম। তারপর অধরাই নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো

- প্রথমতঃ আপনাকে ধন্যবাদ, দ্বিতীয়তঃ আমি দুঃখিত ভয় পেয়ে এমনটা করার জন্য।
- তুমি করে বলছিলে, বেশ তো লাগছিলো। আবার আপনি -তে ফিরে গেলে কেন ?
- আচ্ছা বেশ। এখন বলো তুমি কিছু মনে করোনি তো ?
- আমার তো বেশ ভালোই লাগছিলো, কিছু মনে করবো কেন ?
- তাই, একটা মেয়ে ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলে খুব ভালো লাগে ?
- জড়িয়ে ধরলে তো ভালোই লাগবে, সেটাই স্বভাবিক। তবে তুমি কিছু না বলেই চলে কেন গিয়েছিলে ? আর ওই জায়গাটায় কেন গিয়েছিলে ?
- আমার ওয়াশরুমে যাবার প্রয়োজন ছিলো তাই, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এই অবস্থার সম্মুখীন হই।
- ওহ আচ্ছা। আমি ওদেরকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম, যেন এমনটা আর কখনোই করার সাহস না পায়।
- লাভ নেই এরা শিক্ষা গ্রহন করে না, ভদ্রতা শিক্ষা সবার থাকে না। তবে তোমার সাহস আছে বলতে হবে।
- অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস তো থাকাই উচিৎ।
- কিন্তু সবার সাহস থাকে না, থাকলেও সবাই করে না।

এ কথা বলার পর অধরার মনটা বেশ খারাপ মনে হলো, উদাস হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবার সেই আগের মতোই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো। আমিও অপেক্ষায় রইলাম সে হয়তো আবার কিছু বলবে, কিন্তু তেমনটা হলো না। মাঝে আমিও এক-দুই বার কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু হ্যা - না উত্তর দিয়েই চুপ হয়ে যাচ্ছিলো। একসময় বাসটা তার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। জানতে পারলাম এটাই শেষ স্টপেজ, আমি অবশ্য এমনিতেও এখানেই নামতাম। দুজনেই নেমে পড়লাম বাস থেকে।
( চলবে )

[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Friday, May 18, 2018

প্রশ্ন

প্রিয়  'তুমি' ,
আমি জানি যে এই আমি তোমার অচেনা কেউ নই , তবে অনেকাংশেই অজানা।  আর এই চিঠিটা পড়ার পর আবারও ভেবে নিও। আরও একটিবার ভেবে দেখ, আমায় চেনো ? জানো ? ভালবাসো ? কেন ? উত্তর আমাকে দিতে হবে না , কারণ আমি তা জানি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করে দেখ , উত্তর পেয়েছো ? আমায় তুমি কতটা জানো জানিনা , তবে নিজেকে কতটা জানো ? Socrates বলেছিলেন  - “To know thyself is the beginning of wisdom.”

তুমি কি সত্যিই জানো আমি কে ?  প্রশ্ন রইল তোমার কাছে। চেয়ে দেখো তোমার চারিদিকে কত আলো , কখনও হাতের মুঠোয় ধরার চেষ্টা করেছো ? পারবে না। কিন্তু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো সেই আলো তোমাকে , তোমার চারপাশকে উদ্ভাসিত করেছে। আলোকে নিজের মুঠোয় বন্দি করার চেষ্টা না করে নিজেকে আলোর কাছে সমর্পিত কর। নিজেকে প্রশ্ন করো , স্বার্থপরের মতো মুষ্ঠিবদ্ধ করেছো নাকি ত্যাগের মহিমায় নিজেকে উদ্ভাসিত করেছো ? এই জ্ঞানকে তুমি কি গ্রহণ করতে পারবে ? তুমি কি প্রস্তুত আছো ?

তুমি কি সত্যিই নিজেকে জানো ? যদি জেনে থাকো তাহলে বুঝতে পারবে তোমার আর আমার সম্পর্ক শুধু এই মাটির তৈরি দেহের নয় , যা ক্ষণস্থায়ী। বরং শরীর নামক এই খোলসটিই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করেছে। যদি পারো শারীরিক এই বাধাকে তুচ্ছ করে দেখ তুমি আর আমি একই , অভিন্ন। আমার থেকে তোমাকে পৃথক করতে পারবে না।

I am all that has been, that is and that will be; No mortal hath ever me unveiled. - Isis (Egyptian goddess)

অনুরূপ কথা শ্রীকৃষ্ণও বলেছিলেন ভগবত গীতায় ,  "আমিই শ্রীকৃষ্ণ আমিই অর্জুন , এই জগতে এমন কিছু নেই যা আমি নই" আরও বলেছিলেন , "হে অর্জুন আমিই পরমাত্মা, আমার প্রতি সমর্পনই পরমআত্মার প্রতি সমর্পন।"

 If I'm the god for someone then I must be the devil for someone else. When you know who you are, you know your purposes. 

তুমি কি সত্যিই জানো আমি কে ?  প্রশ্ন রইল তোমার কাছে। প্রতিনিয়ত আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে চলেছি। গতকালকের আমি আর আজকের আমি - এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করে চলেছি নিরন্তর। আগামী দিনেও এই আমি'ই হয়ত আজকের আমি'র সাথে তুলনা করবো। এ যেন নিজের সাথে নিজেরই দ্বন্দ্ব ! কে বেশি জ্ঞানী ? কে বেশি শক্তিশালী ? কে - ই  বা অধিক পূর্ণতা অর্জন করেছে ? এ যেন একে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই কিন্তু অন্য কেউ নয় - সে তো আমি'ই। অন্য কারও সাথে নয় বরং নিজেকেই নিজের সাথে তুলনা করছি , কারণ আমার মত আর কেউই নেই। 

Future - every time you look at it, it changes. Change is the only constant. If you can't change yourself with time the time will change everything against you. আজকের এই আমি - সে তো গতকালের আমি'রই পরিবর্তিত রূপ। কিন্তু এই রূপান্তর শুধু অস্তিত্বের প্রয়োজনে। 

“Yesterday is history, tomorrow is a mystery, today is a gift of God, which is why we call it the present.”    ― Bil Keane

তুমি কি বাস্তবিক অর্থেই নিজেকে জানো ? তোমার অস্তিত্ব - সে তো আমি।  গতকাল, আজ আর আগামী দিনের আমি'র মধ্যে একটি জিনিসই ধ্রুব , আর তা হলো অস্তিত্ব। আর এই অস্তিত্বে মিশে আছো তুমি। আমি ছাড়া যেমন তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই , তেমনি তুমি বিহীন আমি নিরর্থক। 

“Sometimes the questions are complicated and the answers are simple.”       ― Dr. Seuss

আমার দুঃখ-সুখ , বেদনা-বিরহ সবকিছুই তোমার সাথে জড়িত। তুমি বিশুদ্ধ কিন্তু আমি নই , তবুও যে তোমাকেই চাই। আমি জানি , সন্ন্যাস আমার জন্য অনিবার্য তাই সংসারের মোহ নেই। পিছুটানে তোমায় বাঁধবো না কারণ তোমায় ভালবাসি তাই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব করি না। 

Sometimes the truth is not good enough and sometimes the ethics become epic. Sometimes the wrong things can happen at the right time. I don't try to judge people rather I love them, learn from them. Judgement is not always necessary and you may not get enough time for that. In fact you may end up getting wrong conclusion. I'm not afraid of dying but I'm afraid of not living myself.

Don't worry ! Someone, somewhere is made for you. God sends an angel to each and everyone's life. To set you free and fulfill all your wishes. If you don't find one then be the one for yourself and other's as well. Maybe you are the angel for someone else, who knows? The person who's wish is never fulfilled may help to fulfill other's wish. I'll be there for you and help to fulfill all your wishes.

তুমি কি আমার বাস্তবিক রূপ জানো ? প্রশ্ন রইল তোমার কাছে। আমি যা লিখেছি তার কতটুকু তুমি বুঝেছো জানিনা। হয়তো কিছুই বুঝোনি কারণ তুমি বাহ্যিক রূপটাই দেখছো কিন্তু আমি তার কথা বলিনি , তুমি শরীরটাকেই বুঝেছো আর আমি আত্মার কথা লিখেছি। 

যাইহোক, সর্বদা তোমার কল্যাণ কামনা করি। নিজের প্রতি যত্ন নিও , কারণ তোমার অযত্ন আর অবহেলায় আমার কষ্টটাই বেশি হয়। তোমার সুখে থাকাটাই যে আমার কাছে পরম আনন্দের বিষয়।

ইতি ,
'আমি'

Friday, April 21, 2017

অসমাপ্ত ( ৪র্থ পর্ব )


[ যখন অনেক চেষ্টা করেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারলেন না ..... ]

- আসলে আমার কোন উপন্যাসের নামই মনে থাকে না।
- বুঝতেই পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান :P .
- আপনি মনে হয় বঙ্কিমের লেখা পড়েন না ?
- চেষ্টা করেছিলাম, ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত  'দুর্গেশনন্দিনী '  পড়তে, তারপর বাকিটা ইতিহাস ......
- মানে ??
- আপনি যেহেতু বঙ্কিমের ফ্যান ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিত।

[ এতক্ষন পর ম্যাডাম বুঝতে পারলেন যে তিনি কি ভুলটা করেছেন ]

- আচ্ছা, আপনি আর কারও লেখা পড়েন না ?
- অনেকের লেখাই পড়েছি তবে শরৎচন্দ্রের পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাই বেশি ভাল লেগেছে।
- আমারও ভাল লাগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।
- তাই নাকি ? ..... ( থাক আর বললাম নাহ ! )
- হুম ম।  আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
- কেন ? ঢাকা যাচ্ছি।  এই বাসটা নিশ্চই সিলেট কিংবা বরিশাল যাবে না।
-আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন ? সোজাসুজি উত্তর দিতে পারেন না ?
- Okay, Sorry ! এখন থেকে সোজাসুজি উত্তর করার চেষ্টা করব।

- আপনার কথায় মনে হচ্ছে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ নন।  খুলনায় কি বেড়াতে এসেছিলেন ?
- বলতে পারেন অনেকটা তাই।  দুৰ্ভাগ্যবশতঃ এখানকার এক নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, বলতে পারেন Accidental Engineer. তাই মাঝে মধ্যে বেড়াতে এসে ক্লাস করতে হয়।

- হাঃহাঃহাঃ

অধরা মুখ আড়াল করে হাসার চেষ্টা করলেও তার অপূর্ব সেই হাসি আমার দৃষ্টি এড়াতে পারল না। মনে হচ্ছিল কোন এক অপ্সরা আমার পাশে বসে আছে আর তার কাজলকালো দুটি চোখের দৃষ্টি শুধু আমারই দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার গোলাপি ঠোঁটের কোণায় মুক্তঝরা সেই হাসি, আর সাথে সাথে  লালচে রঙের দুই গালে ফুটে উঠছিলো টোলের রেখা। হাসলে গালে টোল পরে এমন মেয়েদের প্রতি অনেক ছেলেরই দুর্বলতা থাকে, আর সেই মেয়েটি যদি অধরার মত সুন্দরী হয় তাহলে সেই দুর্বলতার শেষ পরিণতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যথাসম্ভব চেষ্টা করলাম নিজেকে সামলে নেয়ার। তারপর জিজ্ঞাসা করলামঃ

- আপনার কথা শুনেও মনে হচ্ছে না যে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ।
- কি মনে হচ্ছে তাহলে ?
- মনে হচ্ছে আপনি আমার খুব কাছের কেউ।
- মানে ??
- আপনিও নিশ্চই ঢাকায় থাকেন ? কথা শুনে অন্ততঃ তাই মনে হচ্ছে।
- হ্যা, তবে আপনার কাছের কেউ বলতে .... আপনি কি কোন ভাবে আমাকে আগে থেকেই চিনেন ?
- সত্যি বলব নাকি যেটা আপনি বিশ্বাস করবেন সেটাই বলব ?
- মানে ??
- আপনার এই  'মানে ?' প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিব বুঝতে পারছি না। যেহেতু আমরা দুজনেই ঢাকা থাকি তাই বলেছি হয়ত আপনি কাছের কেউই হবেন।
- আপনি কিন্তু আবারও সোজাসুজি উত্তর দিচ্ছেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর থেকে সোজাসুজি উত্তর করার জোরালো চেষ্টা করব। তার আগে আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন, আমার কথা তো অনেক বললাম।
- আমার সম্পর্কে বলার তেমন কিছুই নেই। হ্যা, আমিও ঢাকাতেই থাকি আর খুলনা মেডিকেলে পড়ছি MBBS ২য় বর্ষ।

[ বুঝতে পারলাম অধরা আমার থেকে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে কেননা আমিতো কেবল ১ম বর্ষে  ভর্তি হয়েছি মাত্র। যাইহোক, এখন এই ব্যাপারটা অধরাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। ]

- ঢাকায় কোথায় থাকেন ?
- ধানমন্ডিতে। তবে আমাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়াতে তার মানে উত্তর বঙ্গ।
- আমিও এরকমটাই ধারণা করেছিলাম।

তারপর আমরা দুজনেই হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম, হয়ত কি বলব সেটাই ভাবতে পারছিলাম না অথবা যা বলতে চাইছিলাম, সেটা বলতে পারছিলাম না। অধরা জানালার দিকে ফিরে বাইরে তাকিয়ে রইল। আমি মাঝে মাঝে আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। অনেক কিছুই তাকে বলতে চেয়েছিলাম। বলতে চেয়েছিলামঃ  অধরা, হয়ত তোমার সাথে বাস্তবে এটাই আমার প্রথম দেখা কিন্ত এর আগেও বহুবার তুমি এসেছিলে আমার স্বপ্নে, তুমি ছিলে আমার কল্পনায়। তুমি তো আমার অপরিচিতা নও, বহুকাল, বহুযুগ ধরেই তো তুমি আমার পাশে ছিলে। তুমি আমার খুব কাছের কেউ, আমারই আপনজন। নিমাই ভট্টাচার্যের মত বলতে চাইছিলামঃ

'' যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক,
তারা তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
আমার হৃদয়খানিতে। ''
( চলবে )

[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Tuesday, February 14, 2017

বসন্ত ও ফেব্রুয়ারি

আমরা বাঙালিরা সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই উদার মনের আর তাই খুব সহজেই বিদেশি সংস্কৃতি গুলোকে আপন করে নিতে পারি। ইংরেজি ফেব্রুয়ারি (February) মাসের বিশেষত্ব এখন আর শুধুই ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সত্যি বলতে কি এখনকার যুবসমাজ এই দিবসটি সম্পর্কে কতটা জ্ঞান রাখে সেই বিষয়েও হয়ত অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে। গত বছর টিভিতে দেখলাম, ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা এক তরুণীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে কি হয়েছিল ?

তারপর আর নাই বা বললাম; বুঝতেই পারছেন যে সেই প্রশ্নের উত্তরে তরুণী এক নতুন ইতিহাস তৈরী করেছিল যা শুনলে হয়ত আমাদের ইতিহাসবিদগণ নিজেরাই ইতিহাসে পরিণত হয়ে যেতে পারেন। তবে আমাদের তরুণ সমাজ যা করেছে তা হল পুরো ১ সপ্তাহ ব্যাপী বিশ্ব ভালবাসা দিবস তথা ভালবাসা সপ্তাহ পালন। ভাবছেন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস তো শুধু ১৪ ই ফেব্রুয়ারি তাই না ? তাহলে একনজর দেখে নিন সম্পূর্ণ ভালবাসা সপ্তাহটিকে :

Rose Day – February 7 
Propose Day – February 8
Chocolate Day – February 9
Teddy Day – February 10
Promise Day – February 11
Hug Day – February 12
Kiss Day – February 13
Valentine’s Day – February 14

ভালবাসা দিবস বলে কথা ! মাত্র ১ দিনে কি আর হয় ? আমি মনে হয় কিছুটা পুরোনো জেনারেশনের মানুষ তাই হয়ত এই দিনটির মাহাত্ম সঠিকভাবে এখনও বুঝতে পারি নাই। আমার মত আরো যারা আছেন তাদেরই বলছি, চলুন ভালবাসা সপ্তাহ সম্পর্কে একটু বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। 

প্রথমেই আসা যাক Rose Day (February 7) এর কথায়। এই দিন প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পর লাল গোলাপ বিনিময় করে নিজেদের ভালবাসার প্রকাশ ঘটায়। যদিও এই কাজটি এখন একতরফা ভাবে শুধু প্রেমিকগণই করে থাকে। লাল গোলাপকে মনে করা হয় ভালবাসার প্রতীক (যেমনঃ সাদা গোলাপ শান্তির প্রতীক, হলুদ গোলাপ মিত্রতার প্রতীক)। ইংরেজি 'Rose' এর বর্ণ গুলোকে বিন্যাস করলে একটি হয় 'Erose' আর গ্রীক মিথ অনুযায়ী ইরোস হচ্ছে প্রেমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। আর ভালবাসা সপ্তাহের শুরুতেই এই দেবীকে খুশি করার প্রয়াস করা হয়ে থাকে। 

Rose Day দিয়ে ভালবাসা সপ্তাহ শুরু হবার পরদিনই হচ্ছে Propose Day (February 8) অর্থাৎ, লাল গোলাপ দেয়ার পর সঙ্গত কারনেই প্রেম নিবেদন করার বিষয়টি চলে আসে আর তাই এই দিনটির অবতারনা করা হয়। 

Propose Day এর পর (প্রেম নিবেদনে সফল হওয়ার পর) Chocolate Day (February 9), এই দিনে সম্ভবত প্রেমিক-প্রেমিকাগণ একটু মিষ্টিমুখ করে। তাছাড়া এই যুগের তরুণীরা যেহেতু চকলেট খুব পছন্দ করে (তাই হয়ত ইদানিং চকলেট ফ্লেভারের প্রচলন বেশি) তাই মিষ্টিমুখ করার জন্য চকলেটই সবথেকে বেশি মানানসই। 

মিষ্টিমুখ তো করা হয়ে গেল, মিষ্টিমুখ করলে একটা গিফট তো দিতেই হয়; তাই Teddy Day (February 10) এর প্রচলন। কেননা, রমণীদের কাছে Teddy Bear (এক প্রকার খেলনা ভালুক) খুবই প্রিয়। আমার কথা বিশ্বাস না হইলে একটা ভালুক কিনা কোন রমণীকে উপহার দিয়াই দেখেন !

অনেক কিছুই তো হইল, এইবার একটা কমিটমেন্ট দরকার। Promise Day (February 11) তে সেই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয়। 

এরপর আসে Hug Day (February 12), প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবার পর সেটাকে আরও জোরদার করার প্রয়াস আর কি !

তারপর হচ্ছে Kiss Day (February 13), এর সম্পর্কে আর আলাদা ভাবে বলার কিছুই নেই; নাম দেখেই বুঝতে পারছেন। পাশাপাশি আবার এই দিন হচ্ছে বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা ফাল্গুন। তরুণ-তরুণীরা হলুদ পোশাকে বসন্ত উৎসবও এই দিনেই পালন করে থাকে। 

কেউ একজন বলেছিলেন এইদিন হচ্ছে তাদের হলুদ সন্ধ্যা আর পরদিন (১৪ই ফেব্রুয়ারী) তাদের বিয়ে। আমাদের তরুণ-তরুণীরা আবার যে কোন দিবসকেই তাদের প্রেমের জন্য উপযুক্ত দিন হিসেবে ঠিক করে নিতে সিদ্ধহস্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোন দিবস কিংবা রজনী সবই তাদের প্রেমের জন্য উপযুক্ত অর্থাৎ, সবই ভালবাসা দিবস (কিংবা রজনী)।

যাইহোক, এতক্ষন পর্যন্ত যে সকল Day এর কথা বলা হয়েছে তার প্রচলন মূলত ভারতীয় উপমহাদেশেই বেশি এবং এগুলোর ঐতিহাসিক তেমন কোনো মর্যাদা নেই; তবে Valentine’s Day (February 14) প্রায় সারা বিশ্বেই একযোগে পালন করতে দেখা যায়। এই দিন মূলত প্রিয়জনদের উপহার হিসেবে valentine card দেয়া হয়। 

এই দিনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়: সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম অনুসারে এ দিনের নামকরন তবে ক্যাথলিক চার্চ অনুযায়ী কমপক্ষে তিনজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায়। 

শুরুতেই বলতে হয় প্রায় সাড়ে সতেরশো বছর পূর্বের একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথা। ২৭০ সালের তখনকার দিনে ইটালীর রোমে শাসন করতেন রাজা ক্লডিয়াস-২, যিনি মোটেই ভাল শাসক ছিলেন না। সাধারন জনগন তাকে চাইত না। রাজা তার সুশাসন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজ দরবারে তরুন যুবকদের নিয়োগ দিলেন। আর যুবকদের দায়িত্বশীল ও সাহসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি রাজ্যে যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কারন, রাজা বিশ্বাস করতেন বিয়ে মানুষকে দূর্বল ও কাপুরুষ করে। বিয়ে নিষিদ্ধ করায় পুরো রাজ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হলো। এ সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক যাজক গোপনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলেন; তিনি পরিচিতি পেলেন 'ভালবাসার বন্ধু' বা ‘Friend of Lovers’ নামে। কিন্তু তাকে রাজার নির্দেশ অমান্য করার কারনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে আটক করা হল। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। জেলে থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইনের পরিচয় হয় জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের সাথে। আস্ট্রেরিয়াস জানতো ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পর্কে। তিনি তাকে অনুরোধ করেন তার অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে। ভ্যালেন্টাইন পরবর্তীতে মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এতে মেয়েটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এভাবে এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। রাজা তার এই আধ্যাত্মিকতার সংবাদ শুনে তাকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান এবং তাকে রাজকার্যে সহযোগীতার জন্য বলেন। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না তোলায় সহযোগীতায় অস্বীকৃতি জানান। এতে রাজা ক্ষুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেন। মৃত্যু দন্ডের ঠিক আগের মূহুর্তে ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীদের কাছে একটি কলম ও কাগজ চান। তিনি মেয়েটির কাছে একটি গোপন চিঠি লিখেন এবং শেষাংশে বিদায় সম্ভাষনে লেখা হয় ‘From your Valentine’ এটি ছিলো হৃদয়বিদারক। অতঃপর ১৪ ই ফেব্রুয়াররি, ২৭০ খৃঃ ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

রোমান ঐতিহ্য অনুসারে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে পালিত হত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসব Lupercalia । ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ বা মধ্য ফেব্রুয়ারিতে পালিত হত এ উৎসব। নতুন জন্মের এ উৎসব নিবেদিত হত রোমান কৃষির দেবতা 'ফোনাস'র উদ্দেশ্যে । রোমান পূরোহিতদের বলা হত 'লুপারসি'। কথিত আছে রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রেমুস এবং রোমুলাস কে পাহাড়ের গুহাতে লালনপালন করে নেকড়ে বাঘ 'লুপা' সেই পবিত্র গুহাতে লুপারসিরা মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সমবেত হতেন। সেখানে নতুন জন্মের আশীর্বাদ চেয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে পাঠা বলি দেওয়া হত আর আত্মশুদ্ধির প্রতীক হিসেবে বলি দেওয়া হত কুকুর। পাঠার সে চামড়া রক্তে ভিজিয়ে তা দিয়ে যুবতীদের এবং শস্য ক্ষেত্রকে স্পর্শ করা হত। তাদের বিশ্বাস ছিল যে এই স্পর্শ ভূমি এবং যুবতীদেরকে আরো ফলদায়ীনি করবে। বিকেলের দিকে কুমারী যুবতিদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ৫ম শতাব্দীতে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে 'সেন্ট ভ্যালন্টাইন দিবস' হিসেবে ঘোষনা করেন।

তবে এটি ভালবাসার দিন হিসেবে জনপ্রিয়তা পেতে সময় লেগেছে আরো অনেক বছর। মধ্যযুগে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে বিশ্বাস ছিল যে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি থেকে সে দেশে পাখীদের প্রজনন শুরু। সে বিশ্বাস সাহায্য করেছে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভালবাসার দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে । ১৪ই ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইন দিনের সবচে পুরনো লেখা হল লন্ডনের বৃটিশ লাইব্রেরীতে রক্ষিত অর্লিয়ান্সের ডিউক, চার্লসের কবিতা। এজিনকোর্টের যুদ্ধে পরাজয়ের পর টাওয়ার অফ লন্ডনে বন্দী থাকা অবস্থায় ডিউক ১৪১৫ সালে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লিখেন সে কবিতা। এর কয়েক বছর পর ইংল্যান্ডের রাজা হেনরী-৫ প্রেমিকা ক্যাথরিন ভালোয়ার উদ্দেশ্যে ভ্যালেন্টাইন দিবসে কবিতা লেখান লেখক জন লিন্ডগেটকে দিয়ে। এছাড়াও ১৪'শ শতকের রোমান্টিক কবিদের ভূমিকাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

আমাদের দেশে ১৯৯৩ সালের পূর্বে এই দিবসের খুব একটা প্রচলন ছিল বলে ধারণা পাওয়া যায় না। এখনকার দিনের তরুণ-তরুণীরা এর ইতিহাস সম্পর্কে কতটা জানে সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই তবে এই দিবসের ক্রমাগত বিবর্তন এবং ১ দিন থেকে ১ সপ্তাহে পরিণত হওয়া ইত্যাদি আসলে আমাদের জন্য কতটা ভাল নাকি খারাপ সে বিষয়ে এখনই আমাদের ভেবে দেখা দরকার। 

Thursday, January 26, 2017

অসমাপ্ত ( ৩য় পর্ব )

তারপর প্রায় বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল, আমিও প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম; হঠাৎ কারও স্পর্শ অনুভব করলাম। শীতল সেই স্পর্শে যে কারও শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যেতে বাধ্য। চোখ খুলে অধরার দিকে তাকাতেই ,

- আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
- সমস্যা নেই, বলুন।
- আপনি যদি আমার সাথে সিটটা এক্সচেঞ্জ করতেন তাহলে খুব ভাল হতো।
- তাই যদি হয়, তবে তাই হোক।

মনে মনে ভাবলাম শুধু সিটটাই কেন এক্সচেঞ্জ করতে চাইলে ? কেন অন্য কিছু নয় ? যাইহোক, তারপর আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করলাম তবে কোন লাভ হল না। দেখলাম অধরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, হাতে হলুদ রঙের মলাটের একটা বই, তবে বইয়ের ও লেখকের নাম তার হাতে ঢাকা পড়ে আছে। অনুমান করলামঃ হয়ত হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোন বই হবে। বেশিরভাগ মেয়েরই পছন্দের বই এইসব। ভাবলাম এবার অধরাকে কিছুটা বিরক্ত করা যাক,

- যদি আমার ভুল না হয় তবে আপনি  হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোন বই পড়ছেন, তাই না ?

[ মুখ লুকিয়ে কিছুটা হেঁসে নিল তারপর আমার দিকে ফিরে কিছুটা অবাক হলেও সেটা বুঝতে দিতে চাইল না। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল।  ]

- এতটুকু অনুমান করা খুবই সহজ, তাই না ?

[ আমিও দমে যাবার পাত্র নই, হিমু সিরিজের যত গুলো বই পড়েছিলাম তার মধ্যে হলুদ রঙের মলাট ছিল সম্ভবত ২ টির। আবারও অনুমান করে বললামঃ ]

- হ্যাঁ সেটা হয়ত ঠিক, তবে যদি বলি আপনি হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের "একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা" বইটি পড়ছেন যেটা এই সিরিজের ৯ নাম্বার বই, তবে সেটা কি ভুল হবে ?

- তাহলে আপনি নামটাও দেখে নিয়েছেন ?

- নাহঃ আপনি সেই সুযোগটা আর দিলেন কই ?

- তবে সঠিক কিভাবে বলতে পারলেন ?

[ এতক্ষন পর্যন্ত আমরা একজন অপরজনকে শুধু পাল্টাপাল্টি প্রশ্নই করে যাচ্ছিলাম, তাই এবার আমিই উত্তর দেয়া শুরু করলাম। ]

- ঐ যে, অনুমান করে বলেছি। আমার অনুমান আবার বেশিরভাগ সময় সঠিক হিসেবেই প্রমানিত হয়। 

- তাই নাকি ? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

- আপনি চাইলে অবিশ্বাসও করতে পারেন।

- না, ঠিক তা নয়। তবে মনে হচ্ছে আপনি হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়েন।

- পড়ি না বললে ভুল হবে, তবে হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়ি এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বরং অনেক কম পড়ি, বলতে পারেন কখনো টাইম পাসের জন্য পড়ি।

- জ্বী না স্যার, এটাও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

- তাহলে ম্যাডাম আপনিই বলুনঃ আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করাতে পারি ? যদি বলি আপনার সবচেয়ে পছন্দের কবি রবীন্দ্রনাথ তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন।

- আশ্চর্য ! আপনি কিভাবে এত সব কিছু জানেন ?

- বলেছিলাম না, আমার অনুমান বেশিরভাগ সময় সঠিক হিসেবেই প্রমানিত হয়।

- আচ্ছা ঠিক আছে মেনে নিচ্ছি। তবে আপনিও মেনে নিন আপনি হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়েন এবং হুমায়ুন আহমেদ আপনার প্রিয় ঔপন্যাসিক।

- জ্বী না ম্যাডাম।  হুমায়ুন আহমেদ আসলে আপনার প্রিয় ঔপন্যাসিক। আমার পছন্দের ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র।

- তাহলে আমিও মেনে নিব না। আমার পছন্দের ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র।

- তাই নাকি ? ..... হা হা হা  .....

[ এবার দেখলাম অধরা কিছুটা রেগে গেছে, হয়ত আমাকে এভাবে হাসতে দেখেই তার এই প্রতিক্রিয়া। তবে বেশ বুঝতে পারছিলাম যে অধরা মিথ্যা বলছিল। ]

- হাসছেন কেন ? বঙ্কিমচন্দ্র আমার প্রিয় ঔপন্যাসিক আপনার কোন সমস্যা আছে ?

- নাহঃ নেই তবে আপনি বঙ্কিমের সব লেখা বুঝতে পারেন ? কোন সমস্যা হয় না ?

- কেন ?  সমস্যা হবে কেন ?

- বেশ বুঝতে পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান। আচ্ছা তার কোন উপন্যাসটা আপনার সবথেকে বেশি ভাল লেগেছে?

[ এইবার মনে হয় ম্যাডাম কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন। অনেক ভেবে চিন্তেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারছিলেন না। ]

( চলবে )
[ বি. দ্র :  এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Tuesday, October 4, 2016

অসমাপ্ত ( ২য় পর্ব )


বৃষ্টিতে আমি প্রায় বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিলাম তাই ফ্যানের ঠিক নিচের সিটেই বসে পড়লাম যাতে শার্টটা অন্তত কিছুটা হলেও শুকিয়ে যায়। বৃষ্টির কারনে বাস আসতে আরও খানিকটা সময় লাগতে পারে। তবে আমি ছাড়া এই বিষয়ে আর কারও কোন চিন্তা নেই। অবশ্য এই শিববাড়ী মোড়ের কাউন্টারে তখন আমরা মাত্র তিনজনই অবশিষ্ট আছি। আমি, অধরা আর সেই কাউন্টারে কর্মরত লোকটি।

অধরা তখনও কাউন্টারের সামনে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। হালকা নীল রঙের শাড়িতে যে কোন মেয়েকে সুন্দরী মনে হয় আর এই রমণী যেন সাক্ষাৎ অপ্সরী। যাইহোক, ইচ্ছা না থাকলেও চোখ সরিয়ে নিলাম এবং খবরের কাগজ পড়ায় মনোনিবেশ করলাম। কেননা আমার হাত-পা, চোখ-কান এক কথায় আমার সমগ্র শরীরের উপর যতক্ষন আমার নিয়ন্ত্রন থাকে ততক্ষন সব কিছু ভালোই থাকে আর চারপাশের পরিবেশটাও শান্ত থাকে। তবে যদি কখনও আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে সেটা ভয়ানক সুনামির পূর্বাভাস।

বৃষ্টি কিছুটা কমে গেলে অধরা ভেতরে এসে আমার পাশের সিটটা খালি রেখে ঠিক তার পাশের সিটে বসে পড়ল। আড়চোখে আমি সেটা লক্ষ্য করলাম আর মনে মনে ভাবলাম বাসে যদি আমার পাশের সিটটা নিয়ে থাক তবে পুরো রাস্তা তোমাকে আমার পাশে বসেই যেতে হবে। বাসে যাতায়াতের সময় কোন সুন্দরী মেয়ে পাশে বসলে ভাল লাগে সেটা ঠিক, তবে আমি যদি কোন সুন্দরী মেয়ের পাশে বসি তবে সেটা সেই মেয়েটার জন্যই নিরাপদ। কারন রাস্তা-ঘাটে সব ছেলেরা যেমন আমার মত সুশীল না তেমনি আমার নিজের উপর যতটা আস্থা আছে অন্য কারও উপর ততটা নেই।

এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে সময় কেটে গেল টেরই পাইনি। দেখলাম বাস চলে এসেছে, ৭০ নাম্বার বাস। বাসে উঠার আগে ওয়াশরুমে ঢুকলাম, জামা-কাপড় অনেকটাই ভিজে গিয়েছিল তাছাড়া কিছুটা ফ্রেশ হবারও প্রয়োজন বোধ করছিলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম বাসটা ছেড়ে দেয়ার পায়তারা করছে, বৃষ্টির জন্য এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। অধরাকেও দেখতে পেলাম না, হয়ত আমার আগেই বাসে গিয়ে উঠেছে। তাই আমিও আর দেরি না করে উঠে পড়লাম বাসে।

বাসে বেশ ভালোই লোক সমাগম ছিল। আমার সিটটা ছিল E4 , মাঝামাঝি হওয়ায় সুবিধাই ছিল। যেমনটা মনে মনে ভাবছিলাম তেমনটাই হল, অধরার সিটটা ছিল ঠিক আমার পাশেই E3 । কিন্তু সমস্যা হল আমি আসন গ্রহন করার পূর্বেই সে তার আসন দখল করে বসে পড়ায় তাকে সরিয়ে তার পরেই আমি আমার আসনে যেতে পারব। অবস্থা যখন এই রকম তখন আমি পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখলাম অধরার সেদিকে খেয়ালই নেই, সে বরং বাইরে ওই দূর আকাশটার দিকেই  আছে। এইবার আমি কিছুটা ঝেড়ে কাশলাম -

- এক্সকিউজ মি !
- ওহ আচ্ছা সরি।

আমি সিটে গিয়ে বসার পরই মনে হল অধরা মুচকি হাঁসছে আর কিছুটা আড়চোখে আমাকে দেখছে। এই রকম পরিস্থিতিতে আমার মত সুবোধ ছেলেদের কিছুটা লজ্জা পাওয়াই স্বাভাবিক। হয়ত সে আমাকে শুরু থেকেই লক্ষ্য করছিল আর আমাকে পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও না দেখার ভান করছিল। যদি সত্যিই সে এমনটা করে থাকে তবে তার এই নিখুঁত অভিনয়ের প্রসংশা করতেই হবে। কে জানে এই সব সুন্দরী, ছলনাময়ী মেয়েদের মনে কি আছে? আর তাছাড়া প্রায় সব মেয়েই কম-বেশি পাকা অভিনেত্রী হয়ে থাকে।

অতঃপর বাস শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙার দিকে রওয়ানা হল। আমিও সিটটাতে হেলান দিয়ে একটু আয়েশ করে বসলাম। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব বেশি সময় লাগল না। সোনাডাঙা থেকেই বেশিরভাগ যাত্রী বাসে উঠল। বাস এখানে প্রায় ১০-১৫ মিনিট দেরি করল, একবার ভেবেছিলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি কিন্তু আবার চিন্তা করলাম বার-বার আসা-যাওয়া করলে হয়ত আমার পাশের সুন্দরী যাত্রী কিছুটা বিরক্তি বোধ করবেন তাই বাসেই বসে থাকলাম। দেখতে দেখতে বাসের প্রায় সব গুলো আসনই পূর্ণ হয়ে গেল। খুব বেশি সময় লাগল না, আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

রাস্তা বেশ ফাঁকাই দেখতে পেলাম, তেমন কোন কোলাহল নেই। বৃষ্টির পর চারপাশের পরিবেশটা বেশ স্নিগ্ধ আর প্রাণবন্ত বলেই মনে হচ্ছিল। বাসের জানালাটা আরও একটু খুলে দিলাম যাতে বাইরের পরিবেশটা আরও ভালভাবে দেখা যায়। তাছাড়া আমার শার্টটি বৃষ্টিতে বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিল, সেটাও শুকানো প্রয়োজন। হয়ত আমার সেই আধ-ভেজা অবস্থা দেখেই অধরা কিছুটা মুচকি হেসেছিল। এখন বাতাসে এই ভেজা শার্টটা শুকাতেও হয়ত বেশ খানিকটা সময় লাগবে।

আকাশটা এখন বেশ পরিষ্কার তবে বাতাসটা বেশ ভারী মনে হচ্ছিল। এই সময়টাতে আদা-লেবু দিয়ে কড়া এক কাপ চা খাওয়া আর গিটারে পরিচিত সেই গানের মুহূর্তগুলো যে কতোটা মিস করছি তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপাততঃ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেই সেই অনুভূতিটুকু নেয়ার চেষ্টা করাটাই শ্রেয় মনে হল। গান শুনতে শুনতে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। বৃষ্টির পর বৃষ্টির গানগুলো শুনলে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়। পাশ থেকে অধরা কিছু বলছিল মনে হল। তার দিকে না ফিরেই কি বলছিল তা শোনার চেষ্টা করলাম।

- এক্সকিউজ মি ! আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে আমি জানালার পাশটায় বসতে চাচ্ছিলাম।

ওমা ! বলে কি এই মেয়ে? আপাতত কোনভাবেই এই অনুভূতিটুকু বিসর্জন দিতে পারব না। তাই শুনেও না শোনার ভান করলাম। কানে হেডফোন থাকায় এমন ভাব করলাম যেন চারপাশে কি হচ্ছে আমি তার কিছুই জানি না। এটা পূর্বের ঘটনার প্রতিশোধ নয়, পাকা অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয় করাটা দোষের কিছু নয় বরং দুর্লভ একটা সুযোগ লুফে নেয়ার মতোই মজার একটা ব্যাপার। 
( চলবে )
[ বি. দ্র :  এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Saturday, February 7, 2015

Wednesday, July 2, 2014

What's on my mind ( Part 10 )


  • “For most of history, Anonymous was a woman.”         ― Virginia Woolf

  • “There are no good girls gone wrong - just bad girls found out.”   ―  Mae West


  • “Don't cry because it's over, smile because it happened.”     ― Dr. Seuss

Friday, June 27, 2014

Wednesday, June 25, 2014

My crazy stupid thoughts ( Part 4 )

  • Even a good poison is far better than a bad girl.
  • There is one difference between playing chess and our practical life. In chess we know which one is black and which one white, but it's too hard to know who is good and who is bad in real life.
 

Tuesday, June 24, 2014

My crazy stupid thoughts ( Part 2 )

  • Thanks God !!  I like the way you hurt and I love the way you lie ....because no one's gonna believe that god lies or hurts. 


  • It's easy to get in but not easy to get out .

  • Love is the most powerful weapon to kill someone, that's why I hate it .

What's on my mind ( Part 2 )


  • " You can close your eyes to the things you do not want to see, but you cannot close your heart to the  things you do not want to feel."       -  Johnny Depp.

  • "  Never love anybody who treats you like you're ordinary . "      -  Oscar Wilde

Monday, June 23, 2014

My crazy stupid thoughts ( Part 1 )

Some of my crazy stupid thoughts , don't take them seriously   :P

  • Hard to love, harder to kill it .

  • Don't always try to judge people , better try to love them . May be you don't have enough time to judge someone or even yourself too.