Showing posts with label Friendship. Show all posts
Showing posts with label Friendship. Show all posts

Sunday, March 22, 2020

অসমাপ্ত ( ৬ষ্ঠ পর্ব )

বাসে দুজন পাশাপাশি বসে একে অপরের দিকে শুধু তাকিয়েই ছিলাম, মাঝে মাঝে হাসি দিয়ে সে হয়তো সম্মতি দিচ্ছিলো আমি চাইলে কিছু বলতে পারি কিন্তু কিভাবে বোঝাই আমিও যে অনেকটাই লাজুক স্বভাবের। কিছু তো বলতে পারলামই না শুধু তাকিয়েই রইলাম। তারপর একসময় সেই বলতে শুরু করলো :

- আমি আসলে অনেক একা।  মানুষের সাথে খুব একটা মিশতে পারি না। 
- এমনটা বলছো কেন ? আমি যতদূর জানি উত্তর বঙ্গের মেয়েরা বেশ মিশুক হয়। 
- হতে পারে।  তবে আমি তেমনটা নই। আসলে অনেক কষ্ট পেয়েছি মানুষের কাছ থেকে।  তাই আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। 
- বুঝতে পেরেছি , তাই হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। উল্টো ভয় পাচ্ছেন। 
- ভয় কেন পাবো ? আপনি তো ভয়ংকর না, বেশ সুদর্শন আর স্মার্ট একটা ছেলে। সহজেই যে কোনো মেয়ের ক্রাশ হতে পারেন। 
- হা: হা: হা:  তাই ? আমি আসলে বলতে চাইছিলাম আপনি হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছেন। 
- তা কিছুটা ভয় তো আছেই, আপনি অপরিচিত মানুষ তাই। 
- আসলে পরিচয় ব্যাপারটাই কি মূল বিষয় ?  আপনি, আমি বা আমরা সবাই পৃথিবীতে আসার পর তিন মাস বয়স পর্যন্ত কাউকেই চিনতে পারি না। শিশুরা প্রথমে তার মা - কেই চিনতে পারে। বড় হবার পর মা আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। 
- আপনি তো অনেক কিছু জানেন দেখছি। 
- তেমনটা নয়, আপনি ভবিষ্যৎ ডাক্তার।  এসব তো আপনিই ভালো জানবেন। 

এর মধ্যেই বাস ফেরিতে উঠে গেছে, আর ফেরিটাও চলতে শুরু করেছে। অধরাকে বললাম সে বাইরে যাবে কি না, কেননা আমি চাচ্ছিলাম ফেরি থেকে নদীটাকে দেখতে।  নদীর মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করতে বেশ ভালো লাগতো।  আমি উঠে দাঁড়াতেই দেখি অধরাও আমার সাথে যাবার জন্য প্রস্তুত।

বাইরে বেরিয়ে ফেরির সামনের দিকটায় চলে আসলাম। একপাশে দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। অধরাও তাকিয়ে আছে, তবে কেন যেন তাকে বেশ উদাস মনে হচ্ছিলো। কিছু জিজ্ঞাসা করবো কি না বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছিলো সে ও হয়তো কিছু বলতে চাইছে। ভাবলাম আগ বাড়িয়ে কিছু বলার থেকে অপেক্ষা করাই ভালো। এসব ভাবতে ভাবতেই পশে ফিরে দেখি অধরা নেই। কোথায় গেলো হঠাৎ করে ? আশে-পাশে খুজলাম, দেখতে পেলাম না। সে কি বাসে উঠে গেলো ? কিছু না বলে চলে কেনই বা চলে গেলো ? কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

ভাবলাম বাসে গিয়ে দেখে আসি, আবার ভাবলাম ফিরে গিয়ে কি বলবো ? কেন চলে আসলো এভাবে সেটা জিজ্ঞাসা করা কি ঠিক হবে ?  তারপরেও গেলাম।  কিন্তু না, সে তো বাসে নেই। তাহলে কোথায় গেলো ? এসব চিন্তা করেই ফেরির চারপাশে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম কত গুলো ছেলে সিগারেট ফুঁকছে অধরা সেখানেই। ছেলে গুলো তাকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে আছে। সে তার চারিদিকে মানব সৃষ্ট দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু ছেলে গুলো ইচ্ছে করেই তাকে ঘিরে রেখেছে। সে বেরিয়ে আসার জন্য যে দিকটায় অগ্রসর হচ্ছে ছেলে গুলোও সে দিকটা ব্লক করে দিচ্ছে। আমি দ্রুত সে দিকটায় অগ্রসর হলাম। কাছাকাছি যেতেই ছেলে গুলো আমাকে এগিয়ে আসতে দেখে সরে গেলো।  অধরাও সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসলো। অধরাও যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ছেলে গুলো এমন ভাব করে চলে গেলো যেন তারা একজন অপরকেই চিনে না, এতক্ষন যেন কিছুই হয়নি।

ভাবছিলাম এগিয়ে গিয়ে ওদের একটা উচিৎ শিক্ষা দিবো কিন্তু অধরা বেশ দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই অধরা আমাকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরলো। আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম সে কিছুটা ভয় পেয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, কিন্তু তার দু-হাতের এই বাঁধন মুক্ত হয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা আমার নেই। মনে হচ্ছিলো যুগ যুগ ধরেও  যদি আমাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয় আমি হাসিমুখে সেই বন্দিত্ব মেনে নিবো। এমন মায়ার বাঁধনে কেউ বেঁধে রাখলে সেই বাঁধন মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে এমন সাধ্য কি কারও আছে ?

যেই ছেলে গুলোকে উচিৎ শিক্ষা দিবো ভেবেছিলাম তারা তো পালিয়েই গেলো আর বন্দি হয়ে গেলাম আমি। চারিদিকে তাকিয়ে যা বুঝলাম সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কি করবো ? আমি তো এই বন্ধন ছাড়তে চাই না ! কিছুক্ষন পর অধরা নিজেই বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। তারপর দ্রুত পায়ে বাসের দিকে এগিয়ে গেলো। আমি সম্ভবত বেশ কিছুটা সময় সম্মোহিত অবস্থায় ছিলাম। চারপাশে কি ঘটে চলেছে তার কোন খেয়ালই ছিলো না। ফেরি ইতোমধ্যে ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমিও বাসে উঠে পড়লাম।

দেখতে পেলাম অধরা মুখ ফিরে চুপ করে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছিলাম না। বাস চলতে শুরু করলো, মনে হচ্ছিলো এখন বেশ দ্রুত গতিতেই ছুটে চলেছে বাস। দুজনেই অনেক্ষন চুপ ছিলাম। তারপর অধরাই নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো

- প্রথমতঃ আপনাকে ধন্যবাদ, দ্বিতীয়তঃ আমি দুঃখিত ভয় পেয়ে এমনটা করার জন্য।
- তুমি করে বলছিলে, বেশ তো লাগছিলো। আবার আপনি -তে ফিরে গেলে কেন ?
- আচ্ছা বেশ। এখন বলো তুমি কিছু মনে করোনি তো ?
- আমার তো বেশ ভালোই লাগছিলো, কিছু মনে করবো কেন ?
- তাই, একটা মেয়ে ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলে খুব ভালো লাগে ?
- জড়িয়ে ধরলে তো ভালোই লাগবে, সেটাই স্বভাবিক। তবে তুমি কিছু না বলেই চলে কেন গিয়েছিলে ? আর ওই জায়গাটায় কেন গিয়েছিলে ?
- আমার ওয়াশরুমে যাবার প্রয়োজন ছিলো তাই, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এই অবস্থার সম্মুখীন হই।
- ওহ আচ্ছা। আমি ওদেরকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম, যেন এমনটা আর কখনোই করার সাহস না পায়।
- লাভ নেই এরা শিক্ষা গ্রহন করে না, ভদ্রতা শিক্ষা সবার থাকে না। তবে তোমার সাহস আছে বলতে হবে।
- অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস তো থাকাই উচিৎ।
- কিন্তু সবার সাহস থাকে না, থাকলেও সবাই করে না।

এ কথা বলার পর অধরার মনটা বেশ খারাপ মনে হলো, উদাস হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবার সেই আগের মতোই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো। আমিও অপেক্ষায় রইলাম সে হয়তো আবার কিছু বলবে, কিন্তু তেমনটা হলো না। মাঝে আমিও এক-দুই বার কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু হ্যা - না উত্তর দিয়েই চুপ হয়ে যাচ্ছিলো। একসময় বাসটা তার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। জানতে পারলাম এটাই শেষ স্টপেজ, আমি অবশ্য এমনিতেও এখানেই নামতাম। দুজনেই নেমে পড়লাম বাস থেকে।
( চলবে )

[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Friday, May 18, 2018

প্রশ্ন

প্রিয়  'তুমি' ,
আমি জানি যে এই আমি তোমার অচেনা কেউ নই , তবে অনেকাংশেই অজানা।  আর এই চিঠিটা পড়ার পর আবারও ভেবে নিও। আরও একটিবার ভেবে দেখ, আমায় চেনো ? জানো ? ভালবাসো ? কেন ? উত্তর আমাকে দিতে হবে না , কারণ আমি তা জানি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করে দেখ , উত্তর পেয়েছো ? আমায় তুমি কতটা জানো জানিনা , তবে নিজেকে কতটা জানো ? Socrates বলেছিলেন  - “To know thyself is the beginning of wisdom.”

তুমি কি সত্যিই জানো আমি কে ?  প্রশ্ন রইল তোমার কাছে। চেয়ে দেখো তোমার চারিদিকে কত আলো , কখনও হাতের মুঠোয় ধরার চেষ্টা করেছো ? পারবে না। কিন্তু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো সেই আলো তোমাকে , তোমার চারপাশকে উদ্ভাসিত করেছে। আলোকে নিজের মুঠোয় বন্দি করার চেষ্টা না করে নিজেকে আলোর কাছে সমর্পিত কর। নিজেকে প্রশ্ন করো , স্বার্থপরের মতো মুষ্ঠিবদ্ধ করেছো নাকি ত্যাগের মহিমায় নিজেকে উদ্ভাসিত করেছো ? এই জ্ঞানকে তুমি কি গ্রহণ করতে পারবে ? তুমি কি প্রস্তুত আছো ?

তুমি কি সত্যিই নিজেকে জানো ? যদি জেনে থাকো তাহলে বুঝতে পারবে তোমার আর আমার সম্পর্ক শুধু এই মাটির তৈরি দেহের নয় , যা ক্ষণস্থায়ী। বরং শরীর নামক এই খোলসটিই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করেছে। যদি পারো শারীরিক এই বাধাকে তুচ্ছ করে দেখ তুমি আর আমি একই , অভিন্ন। আমার থেকে তোমাকে পৃথক করতে পারবে না।

I am all that has been, that is and that will be; No mortal hath ever me unveiled. - Isis (Egyptian goddess)

অনুরূপ কথা শ্রীকৃষ্ণও বলেছিলেন ভগবত গীতায় ,  "আমিই শ্রীকৃষ্ণ আমিই অর্জুন , এই জগতে এমন কিছু নেই যা আমি নই" আরও বলেছিলেন , "হে অর্জুন আমিই পরমাত্মা, আমার প্রতি সমর্পনই পরমআত্মার প্রতি সমর্পন।"

 If I'm the god for someone then I must be the devil for someone else. When you know who you are, you know your purposes. 

তুমি কি সত্যিই জানো আমি কে ?  প্রশ্ন রইল তোমার কাছে। প্রতিনিয়ত আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে চলেছি। গতকালকের আমি আর আজকের আমি - এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করে চলেছি নিরন্তর। আগামী দিনেও এই আমি'ই হয়ত আজকের আমি'র সাথে তুলনা করবো। এ যেন নিজের সাথে নিজেরই দ্বন্দ্ব ! কে বেশি জ্ঞানী ? কে বেশি শক্তিশালী ? কে - ই  বা অধিক পূর্ণতা অর্জন করেছে ? এ যেন একে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই কিন্তু অন্য কেউ নয় - সে তো আমি'ই। অন্য কারও সাথে নয় বরং নিজেকেই নিজের সাথে তুলনা করছি , কারণ আমার মত আর কেউই নেই। 

Future - every time you look at it, it changes. Change is the only constant. If you can't change yourself with time the time will change everything against you. আজকের এই আমি - সে তো গতকালের আমি'রই পরিবর্তিত রূপ। কিন্তু এই রূপান্তর শুধু অস্তিত্বের প্রয়োজনে। 

“Yesterday is history, tomorrow is a mystery, today is a gift of God, which is why we call it the present.”    ― Bil Keane

তুমি কি বাস্তবিক অর্থেই নিজেকে জানো ? তোমার অস্তিত্ব - সে তো আমি।  গতকাল, আজ আর আগামী দিনের আমি'র মধ্যে একটি জিনিসই ধ্রুব , আর তা হলো অস্তিত্ব। আর এই অস্তিত্বে মিশে আছো তুমি। আমি ছাড়া যেমন তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই , তেমনি তুমি বিহীন আমি নিরর্থক। 

“Sometimes the questions are complicated and the answers are simple.”       ― Dr. Seuss

আমার দুঃখ-সুখ , বেদনা-বিরহ সবকিছুই তোমার সাথে জড়িত। তুমি বিশুদ্ধ কিন্তু আমি নই , তবুও যে তোমাকেই চাই। আমি জানি , সন্ন্যাস আমার জন্য অনিবার্য তাই সংসারের মোহ নেই। পিছুটানে তোমায় বাঁধবো না কারণ তোমায় ভালবাসি তাই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব করি না। 

Sometimes the truth is not good enough and sometimes the ethics become epic. Sometimes the wrong things can happen at the right time. I don't try to judge people rather I love them, learn from them. Judgement is not always necessary and you may not get enough time for that. In fact you may end up getting wrong conclusion. I'm not afraid of dying but I'm afraid of not living myself.

Don't worry ! Someone, somewhere is made for you. God sends an angel to each and everyone's life. To set you free and fulfill all your wishes. If you don't find one then be the one for yourself and other's as well. Maybe you are the angel for someone else, who knows? The person who's wish is never fulfilled may help to fulfill other's wish. I'll be there for you and help to fulfill all your wishes.

তুমি কি আমার বাস্তবিক রূপ জানো ? প্রশ্ন রইল তোমার কাছে। আমি যা লিখেছি তার কতটুকু তুমি বুঝেছো জানিনা। হয়তো কিছুই বুঝোনি কারণ তুমি বাহ্যিক রূপটাই দেখছো কিন্তু আমি তার কথা বলিনি , তুমি শরীরটাকেই বুঝেছো আর আমি আত্মার কথা লিখেছি। 

যাইহোক, সর্বদা তোমার কল্যাণ কামনা করি। নিজের প্রতি যত্ন নিও , কারণ তোমার অযত্ন আর অবহেলায় আমার কষ্টটাই বেশি হয়। তোমার সুখে থাকাটাই যে আমার কাছে পরম আনন্দের বিষয়।

ইতি ,
'আমি'

Friday, April 21, 2017

অসমাপ্ত ( ৪র্থ পর্ব )


[ যখন অনেক চেষ্টা করেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারলেন না ..... ]

- আসলে আমার কোন উপন্যাসের নামই মনে থাকে না।
- বুঝতেই পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান :P .
- আপনি মনে হয় বঙ্কিমের লেখা পড়েন না ?
- চেষ্টা করেছিলাম, ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত  'দুর্গেশনন্দিনী '  পড়তে, তারপর বাকিটা ইতিহাস ......
- মানে ??
- আপনি যেহেতু বঙ্কিমের ফ্যান ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিত।

[ এতক্ষন পর ম্যাডাম বুঝতে পারলেন যে তিনি কি ভুলটা করেছেন ]

- আচ্ছা, আপনি আর কারও লেখা পড়েন না ?
- অনেকের লেখাই পড়েছি তবে শরৎচন্দ্রের পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাই বেশি ভাল লেগেছে।
- আমারও ভাল লাগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।
- তাই নাকি ? ..... ( থাক আর বললাম নাহ ! )
- হুম ম।  আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
- কেন ? ঢাকা যাচ্ছি।  এই বাসটা নিশ্চই সিলেট কিংবা বরিশাল যাবে না।
-আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন ? সোজাসুজি উত্তর দিতে পারেন না ?
- Okay, Sorry ! এখন থেকে সোজাসুজি উত্তর করার চেষ্টা করব।

- আপনার কথায় মনে হচ্ছে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ নন।  খুলনায় কি বেড়াতে এসেছিলেন ?
- বলতে পারেন অনেকটা তাই।  দুৰ্ভাগ্যবশতঃ এখানকার এক নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, বলতে পারেন Accidental Engineer. তাই মাঝে মধ্যে বেড়াতে এসে ক্লাস করতে হয়।

- হাঃহাঃহাঃ

অধরা মুখ আড়াল করে হাসার চেষ্টা করলেও তার অপূর্ব সেই হাসি আমার দৃষ্টি এড়াতে পারল না। মনে হচ্ছিল কোন এক অপ্সরা আমার পাশে বসে আছে আর তার কাজলকালো দুটি চোখের দৃষ্টি শুধু আমারই দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার গোলাপি ঠোঁটের কোণায় মুক্তঝরা সেই হাসি, আর সাথে সাথে  লালচে রঙের দুই গালে ফুটে উঠছিলো টোলের রেখা। হাসলে গালে টোল পরে এমন মেয়েদের প্রতি অনেক ছেলেরই দুর্বলতা থাকে, আর সেই মেয়েটি যদি অধরার মত সুন্দরী হয় তাহলে সেই দুর্বলতার শেষ পরিণতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যথাসম্ভব চেষ্টা করলাম নিজেকে সামলে নেয়ার। তারপর জিজ্ঞাসা করলামঃ

- আপনার কথা শুনেও মনে হচ্ছে না যে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ।
- কি মনে হচ্ছে তাহলে ?
- মনে হচ্ছে আপনি আমার খুব কাছের কেউ।
- মানে ??
- আপনিও নিশ্চই ঢাকায় থাকেন ? কথা শুনে অন্ততঃ তাই মনে হচ্ছে।
- হ্যা, তবে আপনার কাছের কেউ বলতে .... আপনি কি কোন ভাবে আমাকে আগে থেকেই চিনেন ?
- সত্যি বলব নাকি যেটা আপনি বিশ্বাস করবেন সেটাই বলব ?
- মানে ??
- আপনার এই  'মানে ?' প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিব বুঝতে পারছি না। যেহেতু আমরা দুজনেই ঢাকা থাকি তাই বলেছি হয়ত আপনি কাছের কেউই হবেন।
- আপনি কিন্তু আবারও সোজাসুজি উত্তর দিচ্ছেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর থেকে সোজাসুজি উত্তর করার জোরালো চেষ্টা করব। তার আগে আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন, আমার কথা তো অনেক বললাম।
- আমার সম্পর্কে বলার তেমন কিছুই নেই। হ্যা, আমিও ঢাকাতেই থাকি আর খুলনা মেডিকেলে পড়ছি MBBS ২য় বর্ষ।

[ বুঝতে পারলাম অধরা আমার থেকে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে কেননা আমিতো কেবল ১ম বর্ষে  ভর্তি হয়েছি মাত্র। যাইহোক, এখন এই ব্যাপারটা অধরাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। ]

- ঢাকায় কোথায় থাকেন ?
- ধানমন্ডিতে। তবে আমাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়াতে তার মানে উত্তর বঙ্গ।
- আমিও এরকমটাই ধারণা করেছিলাম।

তারপর আমরা দুজনেই হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম, হয়ত কি বলব সেটাই ভাবতে পারছিলাম না অথবা যা বলতে চাইছিলাম, সেটা বলতে পারছিলাম না। অধরা জানালার দিকে ফিরে বাইরে তাকিয়ে রইল। আমি মাঝে মাঝে আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। অনেক কিছুই তাকে বলতে চেয়েছিলাম। বলতে চেয়েছিলামঃ  অধরা, হয়ত তোমার সাথে বাস্তবে এটাই আমার প্রথম দেখা কিন্ত এর আগেও বহুবার তুমি এসেছিলে আমার স্বপ্নে, তুমি ছিলে আমার কল্পনায়। তুমি তো আমার অপরিচিতা নও, বহুকাল, বহুযুগ ধরেই তো তুমি আমার পাশে ছিলে। তুমি আমার খুব কাছের কেউ, আমারই আপনজন। নিমাই ভট্টাচার্যের মত বলতে চাইছিলামঃ

'' যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক,
তারা তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
আমার হৃদয়খানিতে। ''
( চলবে )

[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Monday, August 8, 2016

খাইয়া ছাইড়া দিমু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স পড়ার সুবাদে বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব পেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হল এদের সবারই কিছু বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, বলা যেতে পারে Unique Characteristics. এরকমই একজন ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মানী। যিনি আরও বেশ কয়েকটি নামে আমাদের মাঝে পরিচিত ছিলেন যেমন : 

গামছা মানী  -  গামছার মাধ্যমে বিশেষ কার্য সম্পাদনে দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ এই নাম দেয়া হয়। 
মানী স্যার  -  তার মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ স্যাররাও তাকে স্যার বলে ডাকত। 
মানী দ্যা লিচু  -  এর ব্যাখ্যা আপাতত সেন্সর করা হল। 
ফট্টি (40) মানী  -  কোন এক দুপুরে জনসম্মুখে তার শক্তি প্রদর্শনের কারনে এই নাম দেয়া হয়। 

আসলে এইসব নামের ব্যাখ্যা দিতে গেলে, অর্থাৎ নাম করনের সার্থকতা আলোচনা করতে গেলে এক একটা মহাকাব্য রচনা করতে হবে। তাই আপাতত সেদিকে না গিয়ে তার একটা বিশেষ ডায়লগ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আর সেই বিশেষ ডায়ালগটি হল 'খাইয়া ছাইড়া দিমু'। বিশেষ কিছু প্রেক্ষাপটে তার মুখ থেকে বিশেষ এই ডায়ালগটি শোনা যায়।  তাহলে চলুন দেখা যাক কি সেই প্রেক্ষাপট আর আসলে সে কি খাবে আর কি ছাড়বে !

আমরা দুজনেই মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারনে প্রায় সময়ই একসাথে আসা যাওয়া করতাম, আড্ডা দিতাম বা ঘোরাফেরা করতাম। বিভিন্ন সময় তার সাথে কথোপকথনে একই ধরনের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি ঘটে।  প্রেক্ষাপট অনেকটা একই হবার কারণে এই ঘটনা গুলোকে একই ক্ৰমে তুলে ধরা হল। 

ঘটনা ১ ( ২০১২ সাল )

আমি, মানী এবং আশেপাশে আরও অনেক বন্ধুরাই ছিল। সবাই কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মানী কোন এক রমণীর দিকে বার বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম :
-            কিরে কি দেখছিস ? পছন্দ হইছে নাকি ?
-            আরে নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ২ ( ২০১৪ সাল )

আমি আর মানী রিকশায় করে যাচ্ছিলাম সম্ভবত নীলক্ষেত বা আজিমপুরের উদ্দেশে। সামনে কোন এর রমণীর দেখা পেয়ে তার প্রতি ইঙ্গিত করে মানী বলছিল :
-             দেখ, শালি একটা মাল ।
-            চেহারা তেমন একটা ভাল না ।
                [ আমার কাছে রমণীর চেহারা বিশেষ ভাল না লাগলেও ভাল ফিগারের অধিকারিণী ছিল ]
-            আরে চেহারা দিয়া কি হইব ? খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ৩ ( ২০১৬ সাল )

আমি, রিয়ান ভাই আর মানী কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি আসার আগেই কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল আর সেই ব্যাপারেই মানী আর রিয়ান ভাইয়ের মাঝে কথা হচ্ছিল।
-           ভাই যেই মেয়েটার টাকা পড়ে গিয়েছিল ঐ মেয়েটার চেহারা কেমন ছিল খেয়াল করছিলেন ? ভাল ছিল ?
-           আমি খুব একটা খেয়াল করি নাই ।
-           আমিও দেখি নাই ।
-           তবে ভাল ছিল না মনে হয় ।
-           ব্যাপার নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

যাইহোক, আমার জানামতে এই ঘটনা গুলো এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আদৌ সে কি খেয়েছিল, কি না খেয়েছিল কিংবা ছেড়ে দিয়েছিল নাকি ধরেছিল তা আমার জানা নেই। বলতে পারেন এগুলো আমাদের সমাজের নিত্য দিনের ঘটনা। এতে হয়তো কোন ব্যাক্তি বিশেষের ক্ষতি না হলেও নিজেদের চিন্তা-চেতনার ক্ষতি ছাড়া কোন বিশেষ লাভ হয় না।

সব মানুষের পছন্দ-অপছন্দ একরকম নয়। তার থেকেও বড় ব্যাপার এই যে এই পছন্দ-অপছন্দ আবার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। আজকে যা আপনার ভাল লাগছে, আগামীকালও যে সেটা আপনার ভাল লাগবে তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। তাই শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিক্তিতে কাউকে বিচার-বিবেচনা করাটা আমার কাছে সবসময় সঠিক বলে মনে হয় না।

অনেক কিছুই লিখে ফেললাম, মূল কথা হল আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, দেখবেন আপনার চারপাশটা আপনা আপনিই বদলে যাবে। 

পরিশেষে, কেউ আবার আমার সেই বন্ধুটি সম্পর্কে কোন বিশেষ ধারণা পোষণ করবেন না। বিভিন্ন সময় 'খাওয়া' অতঃপর আবার 'ছেড়ে দেয়ার' কারনে বিশেষ কোন সমস্যা দেখা দিতেই পারে। এরকম অন্তত একজন বন্ধু হয়ত সবারই আছে। আর আমি মূলত মানুষে - মানুষে পার্থক্য খুব কম করি, তাই সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। সাধারণতঃ অন্য কারও দ্বারা আমি প্রভাবিত হই না। যারা অন্যের দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয় তারা খুব দুর্বল ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন হয় অথবা তাদের নিজের কোন ব্যাক্তিত্ব বোধই থাকে না।

যাইহোক, আশা করব সে যেন এমন খাদ্যের সন্ধান পায় যা খাওয়ার পর আর ছাড়তে না হয়। তার অনেক দিনের ( সম্ভবত ১ম বর্ষে পড়ার সময় থেকেই ) ইচ্ছা ছিল আমাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের যার নাম সে পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিল। আমার সেরকম কোন বিশেষ ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মধ্যে লেখালেখি করলে মন্দ হয় না।


Thursday, June 23, 2016

A trip to Mawa

দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার (26 May 2016) পূর্ব নির্ধারিত হলেও কোনরকম পূর্ব-প্রস্তূতি আমাদের ছিলো না। অন্য সকল দিনের মতোই লাইব্রেরিতে পড়ালেখা করার চেষ্টা করছিলাম। অনেকটা একঘেয়ে দিন কাটছিলো তাই কোথাও থেকে ঘুরে আসাটা অনিবার্য ছিল। সবসময়ের মতোই আমাদের এই ঘুরে আসাটাও সকলের জন্যই উম্মুক্ত রাখা হয়েছিল কিন্ত শেষ পর্যন্ত আমরা তিন জন ব্যাতীত আর কারোই যাওয়ার মত সময় হয়নি। 


দুপুরের খাবার শেষ করে নামাজ আদায়ের পর হলে চলে গেলাম কিছুক্ষন বিশ্রাম নেবার জন্য। তারপর দুপুর ৩.৩০ এর একটু আগেই আমি আর আব্দুল্লাহ বেরিয়ে পড়লাম সাথে মামুনকেও ডেকে নিলাম।  উদ্দেশ্য ছিল কলা ভবন থেকে বাসে উঠে মাওয়ার পথে যাত্রা করা। যথাসময়ের কিছুক্ষন আগেই আমরা পৌঁছে গেলাম। বাস ছাড়তে আরও বেশ কিছুক্ষন বাকি থাকায় আমরাও সেখানে ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম আর এই সময় বেশ কিছু ছবিও তুলে ফেললাম।

“A journey is best measured in friends, rather than miles.”    – Tim Cahill 

যাত্রার শুরু থেকেই আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আজকে যদি আকাশটা মেঘলা হতো কিংবা বৃষ্টি হতো তবে খুবই ভাল লাগবে। কিন্ত তখনো পর্যন্ত বৃষ্টির কোন পূর্বাভাসই দেখা যাচ্ছিল না। যাইহোক ৩.৪৫ মিনিটে বাস ছাড়ল। বাইরে তখনো কড়া রোদ যা বাসের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল তাছাড়া ঢাবির বাস তো আর A/C বাস না যে জানালা গুল বন্ধ রাখব তাই সেই সময় কিছুটা অস্বস্থি লাগছিল। তার উপর সেদিন রাস্তায় যানজট অন্য দিন গুলোর তুলনায় কিছুটা বেশিই ছিল। তবে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত আসার পর আমার মনের ইচ্ছেটা পূরণ হল। আকাশে মেঘ দেখা দিল মৃদু বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল। ততক্ষনে যানজটও দূর হয়ে গেছে।

পিচ ঢালা রাস্তা ধরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাস। আমরা তখন শহরের কোলাহল থেকে দূরে সবুজে ঘেরা একটা এলাকায় প্রবেশ করেছি। মেঘ আরও কিছুটা ভারী হয়ে এল। আমরা তিন জন ছাড়াও আরও অনেকেই সেদিন ঐ বাসে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। দেখলাম তারাও খুব মজা করছিল, কেউ কেউ গ্রূপ সেলফিও তুলছিল। বাসের মানুষজন ততক্ষনে অনেকটাই কমে গেছে। আমরা তিন জন তিনটি ভিন্ন সিটে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির মডেল টাউনের প্লট গুল, শুটিং স্পট, নব নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার সবই একটার পর একটা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি। আনুমানিক ৫.৪৫ মিনিটে আমরা মাওয়া ঘাটে এসে পৌছলাম।

যেহেতু সন্ধ্যা হতে আর বেশিক্ষন বাকি নেই তাই ভাবলাম আগে কিছুটা ঘুরে দেখে নিই। সচরাচর বেশিরভাগ মানুষ এখানে ইলিশ খেতেই আসে। আমরাও তাই ঠিক করেছিলাম যাবার আগে ইলিশ খেয়েই যাব। কিন্ত সেদিন বিধাতার অশেষ রহমতে সন্ধ্যা হবার বেশ আগেই ঘন কাল মেঘে আকাশ ঢেকে গেল। ফলশ্রূতিতে আমরা তিন জন প্রকৃতির এক অনন্য সুন্দর রূপের সাক্ষী হয়ে রইলাম। কাল মেঘে আকাশের প্রায় সম্পূর্ণটাই তখন ডেকে গেছে। মনে হচ্ছিল আকাশটা যেন এক কাল পানির সমুদ্র আর মেঘ গুল সেখানে এক একটা বিশাল ঢেউ হয়ে সবকিছু গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে।

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে আমরা একটা ছোট ট্রলারের ভেতর আশ্রয় নিলাম। ধীরে ধীরে বৃষ্টিটা আরও বাড়তেই থাকল। সুযোগ খুঁজছিলাম কখন বৃষ্টিটা একটু কমবে আর আমরা ঘাটের ছাউনিতে গিয়ে আশ্রয় নিব। একসময় সুযোগ মিলল ঠিকই কিন্ত ঘাটে বেরিয়ে মনে হল আরো বিপদে পড়লাম কারণ সেখানে আসার আগেই বৃষ্টি আরও বেড়ে গেল আর আমরা মাঝ পথে আটকে পড়লাম। যাইহোক তারপর ২য় বার সুযোগ মিলতেই আমরা ঘাটের ছাউনিতে গিয়ে পৌঁছলাম।

বেশকিছুক্ষন ঘোরাঘুরির পর আমরা একটা চায়ের দোকানের সামনে আসলাম। তারপর চা খেতে খেতে অনেক্ষন আড্ডা দিলাম। হাতে চা আর সিগারেট সাথে বাইরে বৃষ্টি আর বিদ্যুৎ না থাকায় চারদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর কি চাই? আড্ডা দেয়ার জন্য এর থেকে ভাল পরিবেশ আর হয় নাকি ?

অনেকটা সময় কাটিয়ে আমরা একটা হোটেলে ঢুকলাম ইলিশ ভাঁজি খাবার জন্য। ইলিশের চেহারা, সাইজ আর দাম দেখে কোন ভাবেই পছন্দ হচ্ছিল না। বেশির ভাগই কোল্ড স্টোরেজ থেকে নেয়া যা খাওয়ার মত না। শেষমেষ আমরা একটা ইলিশ পছন্দ করলাম তারপর সেটা খাবার জন্য তৈরি করা হল।

ইলিশটা বেশ সুস্বাদুই ছিল, খাবার শেষ করে আমরা আবার ফিরে আসার জন্যে তৈরি হলাম। শেষ বারের মত চায়ের দোকানে বসলাম চা শেষ হতে না হতেই আমরা বাসের টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লাম। ফেরার পথে যানজট কম থাকায় তাড়াতাড়িই চলে আসলাম।

যারা মাওয়া যেতে চান তাদের জন্য ঢাকা গুলিস্থান থেকে সরাসরি মাওয়া ঘাট পর্যন্ত বাস রয়েছে। খুব short একটা trip হলেও মনে রাখার মত অনেক কিছুই ছিল। হয়ত আবারও কখনো যাওয়া হতে পারে তবে সেই দিনের মত অনুভূতি আবারও হবে কিনা জানিনা।

Wednesday, July 2, 2014