বাসে দুজন পাশাপাশি বসে একে অপরের দিকে শুধু তাকিয়েই ছিলাম, মাঝে মাঝে হাসি দিয়ে সে হয়তো সম্মতি দিচ্ছিলো আমি চাইলে কিছু বলতে পারি কিন্তু কিভাবে বোঝাই আমিও যে অনেকটাই লাজুক স্বভাবের। কিছু তো বলতে পারলামই না শুধু তাকিয়েই রইলাম। তারপর একসময় সেই বলতে শুরু করলো :
- আমি আসলে অনেক একা। মানুষের সাথে খুব একটা মিশতে পারি না।
- এমনটা বলছো কেন ? আমি যতদূর জানি উত্তর বঙ্গের মেয়েরা বেশ মিশুক হয়।
- হতে পারে। তবে আমি তেমনটা নই। আসলে অনেক কষ্ট পেয়েছি মানুষের কাছ থেকে। তাই আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না।
- বুঝতে পেরেছি , তাই হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। উল্টো ভয় পাচ্ছেন।
- ভয় কেন পাবো ? আপনি তো ভয়ংকর না, বেশ সুদর্শন আর স্মার্ট একটা ছেলে। সহজেই যে কোনো মেয়ের ক্রাশ হতে পারেন।
- হা: হা: হা: তাই ? আমি আসলে বলতে চাইছিলাম আপনি হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছেন।
- তা কিছুটা ভয় তো আছেই, আপনি অপরিচিত মানুষ তাই।
- আসলে পরিচয় ব্যাপারটাই কি মূল বিষয় ? আপনি, আমি বা আমরা সবাই পৃথিবীতে আসার পর তিন মাস বয়স পর্যন্ত কাউকেই চিনতে পারি না। শিশুরা প্রথমে তার মা - কেই চিনতে পারে। বড় হবার পর মা আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
- আপনি তো অনেক কিছু জানেন দেখছি।
- তেমনটা নয়, আপনি ভবিষ্যৎ ডাক্তার। এসব তো আপনিই ভালো জানবেন।
এর মধ্যেই বাস ফেরিতে উঠে গেছে, আর ফেরিটাও চলতে শুরু করেছে। অধরাকে বললাম সে বাইরে যাবে কি না, কেননা আমি চাচ্ছিলাম ফেরি থেকে নদীটাকে দেখতে। নদীর মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করতে বেশ ভালো লাগতো। আমি উঠে দাঁড়াতেই দেখি অধরাও আমার সাথে যাবার জন্য প্রস্তুত।
বাইরে বেরিয়ে ফেরির সামনের দিকটায় চলে আসলাম। একপাশে দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। অধরাও তাকিয়ে আছে, তবে কেন যেন তাকে বেশ উদাস মনে হচ্ছিলো। কিছু জিজ্ঞাসা করবো কি না বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছিলো সে ও হয়তো কিছু বলতে চাইছে। ভাবলাম আগ বাড়িয়ে কিছু বলার থেকে অপেক্ষা করাই ভালো। এসব ভাবতে ভাবতেই পশে ফিরে দেখি অধরা নেই। কোথায় গেলো হঠাৎ করে ? আশে-পাশে খুজলাম, দেখতে পেলাম না। সে কি বাসে উঠে গেলো ? কিছু না বলে চলে কেনই বা চলে গেলো ? কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
ভাবলাম বাসে গিয়ে দেখে আসি, আবার ভাবলাম ফিরে গিয়ে কি বলবো ? কেন চলে আসলো এভাবে সেটা জিজ্ঞাসা করা কি ঠিক হবে ? তারপরেও গেলাম। কিন্তু না, সে তো বাসে নেই। তাহলে কোথায় গেলো ? এসব চিন্তা করেই ফেরির চারপাশে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম কত গুলো ছেলে সিগারেট ফুঁকছে অধরা সেখানেই। ছেলে গুলো তাকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে আছে। সে তার চারিদিকে মানব সৃষ্ট দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু ছেলে গুলো ইচ্ছে করেই তাকে ঘিরে রেখেছে। সে বেরিয়ে আসার জন্য যে দিকটায় অগ্রসর হচ্ছে ছেলে গুলোও সে দিকটা ব্লক করে দিচ্ছে। আমি দ্রুত সে দিকটায় অগ্রসর হলাম। কাছাকাছি যেতেই ছেলে গুলো আমাকে এগিয়ে আসতে দেখে সরে গেলো। অধরাও সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসলো। অধরাও যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ছেলে গুলো এমন ভাব করে চলে গেলো যেন তারা একজন অপরকেই চিনে না, এতক্ষন যেন কিছুই হয়নি।
ভাবছিলাম এগিয়ে গিয়ে ওদের একটা উচিৎ শিক্ষা দিবো কিন্তু অধরা বেশ দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই অধরা আমাকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরলো। আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম সে কিছুটা ভয় পেয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, কিন্তু তার দু-হাতের এই বাঁধন মুক্ত হয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা আমার নেই। মনে হচ্ছিলো যুগ যুগ ধরেও যদি আমাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয় আমি হাসিমুখে সেই বন্দিত্ব মেনে নিবো। এমন মায়ার বাঁধনে কেউ বেঁধে রাখলে সেই বাঁধন মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে এমন সাধ্য কি কারও আছে ?
যেই ছেলে গুলোকে উচিৎ শিক্ষা দিবো ভেবেছিলাম তারা তো পালিয়েই গেলো আর বন্দি হয়ে গেলাম আমি। চারিদিকে তাকিয়ে যা বুঝলাম সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কি করবো ? আমি তো এই বন্ধন ছাড়তে চাই না ! কিছুক্ষন পর অধরা নিজেই বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। তারপর দ্রুত পায়ে বাসের দিকে এগিয়ে গেলো। আমি সম্ভবত বেশ কিছুটা সময় সম্মোহিত অবস্থায় ছিলাম। চারপাশে কি ঘটে চলেছে তার কোন খেয়ালই ছিলো না। ফেরি ইতোমধ্যে ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমিও বাসে উঠে পড়লাম।
দেখতে পেলাম অধরা মুখ ফিরে চুপ করে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছিলাম না। বাস চলতে শুরু করলো, মনে হচ্ছিলো এখন বেশ দ্রুত গতিতেই ছুটে চলেছে বাস। দুজনেই অনেক্ষন চুপ ছিলাম। তারপর অধরাই নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো
- প্রথমতঃ আপনাকে ধন্যবাদ, দ্বিতীয়তঃ আমি দুঃখিত ভয় পেয়ে এমনটা করার জন্য।
- তুমি করে বলছিলে, বেশ তো লাগছিলো। আবার আপনি -তে ফিরে গেলে কেন ?
- আচ্ছা বেশ। এখন বলো তুমি কিছু মনে করোনি তো ?
- আমার তো বেশ ভালোই লাগছিলো, কিছু মনে করবো কেন ?
- তাই, একটা মেয়ে ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলে খুব ভালো লাগে ?
- জড়িয়ে ধরলে তো ভালোই লাগবে, সেটাই স্বভাবিক। তবে তুমি কিছু না বলেই চলে কেন গিয়েছিলে ? আর ওই জায়গাটায় কেন গিয়েছিলে ?
- আমার ওয়াশরুমে যাবার প্রয়োজন ছিলো তাই, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এই অবস্থার সম্মুখীন হই।
- ওহ আচ্ছা। আমি ওদেরকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম, যেন এমনটা আর কখনোই করার সাহস না পায়।
- লাভ নেই এরা শিক্ষা গ্রহন করে না, ভদ্রতা শিক্ষা সবার থাকে না। তবে তোমার সাহস আছে বলতে হবে।
- অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস তো থাকাই উচিৎ।
- কিন্তু সবার সাহস থাকে না, থাকলেও সবাই করে না।
এ কথা বলার পর অধরার মনটা বেশ খারাপ মনে হলো, উদাস হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবার সেই আগের মতোই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো। আমিও অপেক্ষায় রইলাম সে হয়তো আবার কিছু বলবে, কিন্তু তেমনটা হলো না। মাঝে আমিও এক-দুই বার কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু হ্যা - না উত্তর দিয়েই চুপ হয়ে যাচ্ছিলো। একসময় বাসটা তার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। জানতে পারলাম এটাই শেষ স্টপেজ, আমি অবশ্য এমনিতেও এখানেই নামতাম। দুজনেই নেমে পড়লাম বাস থেকে।
বাইরে বেরিয়ে ফেরির সামনের দিকটায় চলে আসলাম। একপাশে দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। অধরাও তাকিয়ে আছে, তবে কেন যেন তাকে বেশ উদাস মনে হচ্ছিলো। কিছু জিজ্ঞাসা করবো কি না বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছিলো সে ও হয়তো কিছু বলতে চাইছে। ভাবলাম আগ বাড়িয়ে কিছু বলার থেকে অপেক্ষা করাই ভালো। এসব ভাবতে ভাবতেই পশে ফিরে দেখি অধরা নেই। কোথায় গেলো হঠাৎ করে ? আশে-পাশে খুজলাম, দেখতে পেলাম না। সে কি বাসে উঠে গেলো ? কিছু না বলে চলে কেনই বা চলে গেলো ? কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
ভাবলাম বাসে গিয়ে দেখে আসি, আবার ভাবলাম ফিরে গিয়ে কি বলবো ? কেন চলে আসলো এভাবে সেটা জিজ্ঞাসা করা কি ঠিক হবে ? তারপরেও গেলাম। কিন্তু না, সে তো বাসে নেই। তাহলে কোথায় গেলো ? এসব চিন্তা করেই ফেরির চারপাশে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম কত গুলো ছেলে সিগারেট ফুঁকছে অধরা সেখানেই। ছেলে গুলো তাকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে আছে। সে তার চারিদিকে মানব সৃষ্ট দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু ছেলে গুলো ইচ্ছে করেই তাকে ঘিরে রেখেছে। সে বেরিয়ে আসার জন্য যে দিকটায় অগ্রসর হচ্ছে ছেলে গুলোও সে দিকটা ব্লক করে দিচ্ছে। আমি দ্রুত সে দিকটায় অগ্রসর হলাম। কাছাকাছি যেতেই ছেলে গুলো আমাকে এগিয়ে আসতে দেখে সরে গেলো। অধরাও সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসলো। অধরাও যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ছেলে গুলো এমন ভাব করে চলে গেলো যেন তারা একজন অপরকেই চিনে না, এতক্ষন যেন কিছুই হয়নি।
ভাবছিলাম এগিয়ে গিয়ে ওদের একটা উচিৎ শিক্ষা দিবো কিন্তু অধরা বেশ দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই অধরা আমাকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরলো। আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম সে কিছুটা ভয় পেয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, কিন্তু তার দু-হাতের এই বাঁধন মুক্ত হয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা আমার নেই। মনে হচ্ছিলো যুগ যুগ ধরেও যদি আমাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয় আমি হাসিমুখে সেই বন্দিত্ব মেনে নিবো। এমন মায়ার বাঁধনে কেউ বেঁধে রাখলে সেই বাঁধন মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে এমন সাধ্য কি কারও আছে ?
যেই ছেলে গুলোকে উচিৎ শিক্ষা দিবো ভেবেছিলাম তারা তো পালিয়েই গেলো আর বন্দি হয়ে গেলাম আমি। চারিদিকে তাকিয়ে যা বুঝলাম সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কি করবো ? আমি তো এই বন্ধন ছাড়তে চাই না ! কিছুক্ষন পর অধরা নিজেই বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। তারপর দ্রুত পায়ে বাসের দিকে এগিয়ে গেলো। আমি সম্ভবত বেশ কিছুটা সময় সম্মোহিত অবস্থায় ছিলাম। চারপাশে কি ঘটে চলেছে তার কোন খেয়ালই ছিলো না। ফেরি ইতোমধ্যে ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমিও বাসে উঠে পড়লাম।
দেখতে পেলাম অধরা মুখ ফিরে চুপ করে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছিলাম না। বাস চলতে শুরু করলো, মনে হচ্ছিলো এখন বেশ দ্রুত গতিতেই ছুটে চলেছে বাস। দুজনেই অনেক্ষন চুপ ছিলাম। তারপর অধরাই নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো
- প্রথমতঃ আপনাকে ধন্যবাদ, দ্বিতীয়তঃ আমি দুঃখিত ভয় পেয়ে এমনটা করার জন্য।
- তুমি করে বলছিলে, বেশ তো লাগছিলো। আবার আপনি -তে ফিরে গেলে কেন ?
- আচ্ছা বেশ। এখন বলো তুমি কিছু মনে করোনি তো ?
- আমার তো বেশ ভালোই লাগছিলো, কিছু মনে করবো কেন ?
- তাই, একটা মেয়ে ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলে খুব ভালো লাগে ?
- জড়িয়ে ধরলে তো ভালোই লাগবে, সেটাই স্বভাবিক। তবে তুমি কিছু না বলেই চলে কেন গিয়েছিলে ? আর ওই জায়গাটায় কেন গিয়েছিলে ?
- আমার ওয়াশরুমে যাবার প্রয়োজন ছিলো তাই, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এই অবস্থার সম্মুখীন হই।
- ওহ আচ্ছা। আমি ওদেরকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম, যেন এমনটা আর কখনোই করার সাহস না পায়।
- লাভ নেই এরা শিক্ষা গ্রহন করে না, ভদ্রতা শিক্ষা সবার থাকে না। তবে তোমার সাহস আছে বলতে হবে।
- অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস তো থাকাই উচিৎ।
- কিন্তু সবার সাহস থাকে না, থাকলেও সবাই করে না।
এ কথা বলার পর অধরার মনটা বেশ খারাপ মনে হলো, উদাস হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবার সেই আগের মতোই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো। আমিও অপেক্ষায় রইলাম সে হয়তো আবার কিছু বলবে, কিন্তু তেমনটা হলো না। মাঝে আমিও এক-দুই বার কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু হ্যা - না উত্তর দিয়েই চুপ হয়ে যাচ্ছিলো। একসময় বাসটা তার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। জানতে পারলাম এটাই শেষ স্টপেজ, আমি অবশ্য এমনিতেও এখানেই নামতাম। দুজনেই নেমে পড়লাম বাস থেকে।
( চলবে )
[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]
0 comments:
Post a Comment