Showing posts with label Comedy. Show all posts
Showing posts with label Comedy. Show all posts

Tuesday, February 14, 2017

বসন্ত ও ফেব্রুয়ারি

আমরা বাঙালিরা সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই উদার মনের আর তাই খুব সহজেই বিদেশি সংস্কৃতি গুলোকে আপন করে নিতে পারি। ইংরেজি ফেব্রুয়ারি (February) মাসের বিশেষত্ব এখন আর শুধুই ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সত্যি বলতে কি এখনকার যুবসমাজ এই দিবসটি সম্পর্কে কতটা জ্ঞান রাখে সেই বিষয়েও হয়ত অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে। গত বছর টিভিতে দেখলাম, ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা এক তরুণীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে কি হয়েছিল ?

তারপর আর নাই বা বললাম; বুঝতেই পারছেন যে সেই প্রশ্নের উত্তরে তরুণী এক নতুন ইতিহাস তৈরী করেছিল যা শুনলে হয়ত আমাদের ইতিহাসবিদগণ নিজেরাই ইতিহাসে পরিণত হয়ে যেতে পারেন। তবে আমাদের তরুণ সমাজ যা করেছে তা হল পুরো ১ সপ্তাহ ব্যাপী বিশ্ব ভালবাসা দিবস তথা ভালবাসা সপ্তাহ পালন। ভাবছেন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস তো শুধু ১৪ ই ফেব্রুয়ারি তাই না ? তাহলে একনজর দেখে নিন সম্পূর্ণ ভালবাসা সপ্তাহটিকে :

Rose Day – February 7 
Propose Day – February 8
Chocolate Day – February 9
Teddy Day – February 10
Promise Day – February 11
Hug Day – February 12
Kiss Day – February 13
Valentine’s Day – February 14

ভালবাসা দিবস বলে কথা ! মাত্র ১ দিনে কি আর হয় ? আমি মনে হয় কিছুটা পুরোনো জেনারেশনের মানুষ তাই হয়ত এই দিনটির মাহাত্ম সঠিকভাবে এখনও বুঝতে পারি নাই। আমার মত আরো যারা আছেন তাদেরই বলছি, চলুন ভালবাসা সপ্তাহ সম্পর্কে একটু বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। 

প্রথমেই আসা যাক Rose Day (February 7) এর কথায়। এই দিন প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পর লাল গোলাপ বিনিময় করে নিজেদের ভালবাসার প্রকাশ ঘটায়। যদিও এই কাজটি এখন একতরফা ভাবে শুধু প্রেমিকগণই করে থাকে। লাল গোলাপকে মনে করা হয় ভালবাসার প্রতীক (যেমনঃ সাদা গোলাপ শান্তির প্রতীক, হলুদ গোলাপ মিত্রতার প্রতীক)। ইংরেজি 'Rose' এর বর্ণ গুলোকে বিন্যাস করলে একটি হয় 'Erose' আর গ্রীক মিথ অনুযায়ী ইরোস হচ্ছে প্রেমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। আর ভালবাসা সপ্তাহের শুরুতেই এই দেবীকে খুশি করার প্রয়াস করা হয়ে থাকে। 

Rose Day দিয়ে ভালবাসা সপ্তাহ শুরু হবার পরদিনই হচ্ছে Propose Day (February 8) অর্থাৎ, লাল গোলাপ দেয়ার পর সঙ্গত কারনেই প্রেম নিবেদন করার বিষয়টি চলে আসে আর তাই এই দিনটির অবতারনা করা হয়। 

Propose Day এর পর (প্রেম নিবেদনে সফল হওয়ার পর) Chocolate Day (February 9), এই দিনে সম্ভবত প্রেমিক-প্রেমিকাগণ একটু মিষ্টিমুখ করে। তাছাড়া এই যুগের তরুণীরা যেহেতু চকলেট খুব পছন্দ করে (তাই হয়ত ইদানিং চকলেট ফ্লেভারের প্রচলন বেশি) তাই মিষ্টিমুখ করার জন্য চকলেটই সবথেকে বেশি মানানসই। 

মিষ্টিমুখ তো করা হয়ে গেল, মিষ্টিমুখ করলে একটা গিফট তো দিতেই হয়; তাই Teddy Day (February 10) এর প্রচলন। কেননা, রমণীদের কাছে Teddy Bear (এক প্রকার খেলনা ভালুক) খুবই প্রিয়। আমার কথা বিশ্বাস না হইলে একটা ভালুক কিনা কোন রমণীকে উপহার দিয়াই দেখেন !

অনেক কিছুই তো হইল, এইবার একটা কমিটমেন্ট দরকার। Promise Day (February 11) তে সেই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয়। 

এরপর আসে Hug Day (February 12), প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবার পর সেটাকে আরও জোরদার করার প্রয়াস আর কি !

তারপর হচ্ছে Kiss Day (February 13), এর সম্পর্কে আর আলাদা ভাবে বলার কিছুই নেই; নাম দেখেই বুঝতে পারছেন। পাশাপাশি আবার এই দিন হচ্ছে বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা ফাল্গুন। তরুণ-তরুণীরা হলুদ পোশাকে বসন্ত উৎসবও এই দিনেই পালন করে থাকে। 

কেউ একজন বলেছিলেন এইদিন হচ্ছে তাদের হলুদ সন্ধ্যা আর পরদিন (১৪ই ফেব্রুয়ারী) তাদের বিয়ে। আমাদের তরুণ-তরুণীরা আবার যে কোন দিবসকেই তাদের প্রেমের জন্য উপযুক্ত দিন হিসেবে ঠিক করে নিতে সিদ্ধহস্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোন দিবস কিংবা রজনী সবই তাদের প্রেমের জন্য উপযুক্ত অর্থাৎ, সবই ভালবাসা দিবস (কিংবা রজনী)।

যাইহোক, এতক্ষন পর্যন্ত যে সকল Day এর কথা বলা হয়েছে তার প্রচলন মূলত ভারতীয় উপমহাদেশেই বেশি এবং এগুলোর ঐতিহাসিক তেমন কোনো মর্যাদা নেই; তবে Valentine’s Day (February 14) প্রায় সারা বিশ্বেই একযোগে পালন করতে দেখা যায়। এই দিন মূলত প্রিয়জনদের উপহার হিসেবে valentine card দেয়া হয়। 

এই দিনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়: সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম অনুসারে এ দিনের নামকরন তবে ক্যাথলিক চার্চ অনুযায়ী কমপক্ষে তিনজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায়। 

শুরুতেই বলতে হয় প্রায় সাড়ে সতেরশো বছর পূর্বের একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথা। ২৭০ সালের তখনকার দিনে ইটালীর রোমে শাসন করতেন রাজা ক্লডিয়াস-২, যিনি মোটেই ভাল শাসক ছিলেন না। সাধারন জনগন তাকে চাইত না। রাজা তার সুশাসন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজ দরবারে তরুন যুবকদের নিয়োগ দিলেন। আর যুবকদের দায়িত্বশীল ও সাহসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি রাজ্যে যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কারন, রাজা বিশ্বাস করতেন বিয়ে মানুষকে দূর্বল ও কাপুরুষ করে। বিয়ে নিষিদ্ধ করায় পুরো রাজ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হলো। এ সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক যাজক গোপনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলেন; তিনি পরিচিতি পেলেন 'ভালবাসার বন্ধু' বা ‘Friend of Lovers’ নামে। কিন্তু তাকে রাজার নির্দেশ অমান্য করার কারনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে আটক করা হল। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। জেলে থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইনের পরিচয় হয় জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের সাথে। আস্ট্রেরিয়াস জানতো ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পর্কে। তিনি তাকে অনুরোধ করেন তার অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে। ভ্যালেন্টাইন পরবর্তীতে মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এতে মেয়েটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এভাবে এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। রাজা তার এই আধ্যাত্মিকতার সংবাদ শুনে তাকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান এবং তাকে রাজকার্যে সহযোগীতার জন্য বলেন। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না তোলায় সহযোগীতায় অস্বীকৃতি জানান। এতে রাজা ক্ষুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেন। মৃত্যু দন্ডের ঠিক আগের মূহুর্তে ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীদের কাছে একটি কলম ও কাগজ চান। তিনি মেয়েটির কাছে একটি গোপন চিঠি লিখেন এবং শেষাংশে বিদায় সম্ভাষনে লেখা হয় ‘From your Valentine’ এটি ছিলো হৃদয়বিদারক। অতঃপর ১৪ ই ফেব্রুয়াররি, ২৭০ খৃঃ ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

রোমান ঐতিহ্য অনুসারে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে পালিত হত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসব Lupercalia । ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ বা মধ্য ফেব্রুয়ারিতে পালিত হত এ উৎসব। নতুন জন্মের এ উৎসব নিবেদিত হত রোমান কৃষির দেবতা 'ফোনাস'র উদ্দেশ্যে । রোমান পূরোহিতদের বলা হত 'লুপারসি'। কথিত আছে রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রেমুস এবং রোমুলাস কে পাহাড়ের গুহাতে লালনপালন করে নেকড়ে বাঘ 'লুপা' সেই পবিত্র গুহাতে লুপারসিরা মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সমবেত হতেন। সেখানে নতুন জন্মের আশীর্বাদ চেয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে পাঠা বলি দেওয়া হত আর আত্মশুদ্ধির প্রতীক হিসেবে বলি দেওয়া হত কুকুর। পাঠার সে চামড়া রক্তে ভিজিয়ে তা দিয়ে যুবতীদের এবং শস্য ক্ষেত্রকে স্পর্শ করা হত। তাদের বিশ্বাস ছিল যে এই স্পর্শ ভূমি এবং যুবতীদেরকে আরো ফলদায়ীনি করবে। বিকেলের দিকে কুমারী যুবতিদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ৫ম শতাব্দীতে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে 'সেন্ট ভ্যালন্টাইন দিবস' হিসেবে ঘোষনা করেন।

তবে এটি ভালবাসার দিন হিসেবে জনপ্রিয়তা পেতে সময় লেগেছে আরো অনেক বছর। মধ্যযুগে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে বিশ্বাস ছিল যে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি থেকে সে দেশে পাখীদের প্রজনন শুরু। সে বিশ্বাস সাহায্য করেছে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভালবাসার দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে । ১৪ই ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইন দিনের সবচে পুরনো লেখা হল লন্ডনের বৃটিশ লাইব্রেরীতে রক্ষিত অর্লিয়ান্সের ডিউক, চার্লসের কবিতা। এজিনকোর্টের যুদ্ধে পরাজয়ের পর টাওয়ার অফ লন্ডনে বন্দী থাকা অবস্থায় ডিউক ১৪১৫ সালে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লিখেন সে কবিতা। এর কয়েক বছর পর ইংল্যান্ডের রাজা হেনরী-৫ প্রেমিকা ক্যাথরিন ভালোয়ার উদ্দেশ্যে ভ্যালেন্টাইন দিবসে কবিতা লেখান লেখক জন লিন্ডগেটকে দিয়ে। এছাড়াও ১৪'শ শতকের রোমান্টিক কবিদের ভূমিকাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

আমাদের দেশে ১৯৯৩ সালের পূর্বে এই দিবসের খুব একটা প্রচলন ছিল বলে ধারণা পাওয়া যায় না। এখনকার দিনের তরুণ-তরুণীরা এর ইতিহাস সম্পর্কে কতটা জানে সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই তবে এই দিবসের ক্রমাগত বিবর্তন এবং ১ দিন থেকে ১ সপ্তাহে পরিণত হওয়া ইত্যাদি আসলে আমাদের জন্য কতটা ভাল নাকি খারাপ সে বিষয়ে এখনই আমাদের ভেবে দেখা দরকার। 

Thursday, January 26, 2017

অসমাপ্ত ( ৩য় পর্ব )

তারপর প্রায় বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল, আমিও প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম; হঠাৎ কারও স্পর্শ অনুভব করলাম। শীতল সেই স্পর্শে যে কারও শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যেতে বাধ্য। চোখ খুলে অধরার দিকে তাকাতেই ,

- আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
- সমস্যা নেই, বলুন।
- আপনি যদি আমার সাথে সিটটা এক্সচেঞ্জ করতেন তাহলে খুব ভাল হতো।
- তাই যদি হয়, তবে তাই হোক।

মনে মনে ভাবলাম শুধু সিটটাই কেন এক্সচেঞ্জ করতে চাইলে ? কেন অন্য কিছু নয় ? যাইহোক, তারপর আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করলাম তবে কোন লাভ হল না। দেখলাম অধরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, হাতে হলুদ রঙের মলাটের একটা বই, তবে বইয়ের ও লেখকের নাম তার হাতে ঢাকা পড়ে আছে। অনুমান করলামঃ হয়ত হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোন বই হবে। বেশিরভাগ মেয়েরই পছন্দের বই এইসব। ভাবলাম এবার অধরাকে কিছুটা বিরক্ত করা যাক,

- যদি আমার ভুল না হয় তবে আপনি  হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোন বই পড়ছেন, তাই না ?

[ মুখ লুকিয়ে কিছুটা হেঁসে নিল তারপর আমার দিকে ফিরে কিছুটা অবাক হলেও সেটা বুঝতে দিতে চাইল না। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল।  ]

- এতটুকু অনুমান করা খুবই সহজ, তাই না ?

[ আমিও দমে যাবার পাত্র নই, হিমু সিরিজের যত গুলো বই পড়েছিলাম তার মধ্যে হলুদ রঙের মলাট ছিল সম্ভবত ২ টির। আবারও অনুমান করে বললামঃ ]

- হ্যাঁ সেটা হয়ত ঠিক, তবে যদি বলি আপনি হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের "একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা" বইটি পড়ছেন যেটা এই সিরিজের ৯ নাম্বার বই, তবে সেটা কি ভুল হবে ?

- তাহলে আপনি নামটাও দেখে নিয়েছেন ?

- নাহঃ আপনি সেই সুযোগটা আর দিলেন কই ?

- তবে সঠিক কিভাবে বলতে পারলেন ?

[ এতক্ষন পর্যন্ত আমরা একজন অপরজনকে শুধু পাল্টাপাল্টি প্রশ্নই করে যাচ্ছিলাম, তাই এবার আমিই উত্তর দেয়া শুরু করলাম। ]

- ঐ যে, অনুমান করে বলেছি। আমার অনুমান আবার বেশিরভাগ সময় সঠিক হিসেবেই প্রমানিত হয়। 

- তাই নাকি ? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

- আপনি চাইলে অবিশ্বাসও করতে পারেন।

- না, ঠিক তা নয়। তবে মনে হচ্ছে আপনি হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়েন।

- পড়ি না বললে ভুল হবে, তবে হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়ি এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বরং অনেক কম পড়ি, বলতে পারেন কখনো টাইম পাসের জন্য পড়ি।

- জ্বী না স্যার, এটাও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

- তাহলে ম্যাডাম আপনিই বলুনঃ আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করাতে পারি ? যদি বলি আপনার সবচেয়ে পছন্দের কবি রবীন্দ্রনাথ তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন।

- আশ্চর্য ! আপনি কিভাবে এত সব কিছু জানেন ?

- বলেছিলাম না, আমার অনুমান বেশিরভাগ সময় সঠিক হিসেবেই প্রমানিত হয়।

- আচ্ছা ঠিক আছে মেনে নিচ্ছি। তবে আপনিও মেনে নিন আপনি হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়েন এবং হুমায়ুন আহমেদ আপনার প্রিয় ঔপন্যাসিক।

- জ্বী না ম্যাডাম।  হুমায়ুন আহমেদ আসলে আপনার প্রিয় ঔপন্যাসিক। আমার পছন্দের ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র।

- তাহলে আমিও মেনে নিব না। আমার পছন্দের ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র।

- তাই নাকি ? ..... হা হা হা  .....

[ এবার দেখলাম অধরা কিছুটা রেগে গেছে, হয়ত আমাকে এভাবে হাসতে দেখেই তার এই প্রতিক্রিয়া। তবে বেশ বুঝতে পারছিলাম যে অধরা মিথ্যা বলছিল। ]

- হাসছেন কেন ? বঙ্কিমচন্দ্র আমার প্রিয় ঔপন্যাসিক আপনার কোন সমস্যা আছে ?

- নাহঃ নেই তবে আপনি বঙ্কিমের সব লেখা বুঝতে পারেন ? কোন সমস্যা হয় না ?

- কেন ?  সমস্যা হবে কেন ?

- বেশ বুঝতে পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান। আচ্ছা তার কোন উপন্যাসটা আপনার সবথেকে বেশি ভাল লেগেছে?

[ এইবার মনে হয় ম্যাডাম কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন। অনেক ভেবে চিন্তেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারছিলেন না। ]

( চলবে )
[ বি. দ্র :  এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Monday, August 8, 2016

খাইয়া ছাইড়া দিমু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স পড়ার সুবাদে বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব পেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হল এদের সবারই কিছু বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, বলা যেতে পারে Unique Characteristics. এরকমই একজন ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মানী। যিনি আরও বেশ কয়েকটি নামে আমাদের মাঝে পরিচিত ছিলেন যেমন : 

গামছা মানী  -  গামছার মাধ্যমে বিশেষ কার্য সম্পাদনে দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ এই নাম দেয়া হয়। 
মানী স্যার  -  তার মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ স্যাররাও তাকে স্যার বলে ডাকত। 
মানী দ্যা লিচু  -  এর ব্যাখ্যা আপাতত সেন্সর করা হল। 
ফট্টি (40) মানী  -  কোন এক দুপুরে জনসম্মুখে তার শক্তি প্রদর্শনের কারনে এই নাম দেয়া হয়। 

আসলে এইসব নামের ব্যাখ্যা দিতে গেলে, অর্থাৎ নাম করনের সার্থকতা আলোচনা করতে গেলে এক একটা মহাকাব্য রচনা করতে হবে। তাই আপাতত সেদিকে না গিয়ে তার একটা বিশেষ ডায়লগ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আর সেই বিশেষ ডায়ালগটি হল 'খাইয়া ছাইড়া দিমু'। বিশেষ কিছু প্রেক্ষাপটে তার মুখ থেকে বিশেষ এই ডায়ালগটি শোনা যায়।  তাহলে চলুন দেখা যাক কি সেই প্রেক্ষাপট আর আসলে সে কি খাবে আর কি ছাড়বে !

আমরা দুজনেই মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারনে প্রায় সময়ই একসাথে আসা যাওয়া করতাম, আড্ডা দিতাম বা ঘোরাফেরা করতাম। বিভিন্ন সময় তার সাথে কথোপকথনে একই ধরনের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি ঘটে।  প্রেক্ষাপট অনেকটা একই হবার কারণে এই ঘটনা গুলোকে একই ক্ৰমে তুলে ধরা হল। 

ঘটনা ১ ( ২০১২ সাল )

আমি, মানী এবং আশেপাশে আরও অনেক বন্ধুরাই ছিল। সবাই কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মানী কোন এক রমণীর দিকে বার বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম :
-            কিরে কি দেখছিস ? পছন্দ হইছে নাকি ?
-            আরে নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ২ ( ২০১৪ সাল )

আমি আর মানী রিকশায় করে যাচ্ছিলাম সম্ভবত নীলক্ষেত বা আজিমপুরের উদ্দেশে। সামনে কোন এর রমণীর দেখা পেয়ে তার প্রতি ইঙ্গিত করে মানী বলছিল :
-             দেখ, শালি একটা মাল ।
-            চেহারা তেমন একটা ভাল না ।
                [ আমার কাছে রমণীর চেহারা বিশেষ ভাল না লাগলেও ভাল ফিগারের অধিকারিণী ছিল ]
-            আরে চেহারা দিয়া কি হইব ? খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ৩ ( ২০১৬ সাল )

আমি, রিয়ান ভাই আর মানী কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি আসার আগেই কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল আর সেই ব্যাপারেই মানী আর রিয়ান ভাইয়ের মাঝে কথা হচ্ছিল।
-           ভাই যেই মেয়েটার টাকা পড়ে গিয়েছিল ঐ মেয়েটার চেহারা কেমন ছিল খেয়াল করছিলেন ? ভাল ছিল ?
-           আমি খুব একটা খেয়াল করি নাই ।
-           আমিও দেখি নাই ।
-           তবে ভাল ছিল না মনে হয় ।
-           ব্যাপার নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

যাইহোক, আমার জানামতে এই ঘটনা গুলো এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আদৌ সে কি খেয়েছিল, কি না খেয়েছিল কিংবা ছেড়ে দিয়েছিল নাকি ধরেছিল তা আমার জানা নেই। বলতে পারেন এগুলো আমাদের সমাজের নিত্য দিনের ঘটনা। এতে হয়তো কোন ব্যাক্তি বিশেষের ক্ষতি না হলেও নিজেদের চিন্তা-চেতনার ক্ষতি ছাড়া কোন বিশেষ লাভ হয় না।

সব মানুষের পছন্দ-অপছন্দ একরকম নয়। তার থেকেও বড় ব্যাপার এই যে এই পছন্দ-অপছন্দ আবার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। আজকে যা আপনার ভাল লাগছে, আগামীকালও যে সেটা আপনার ভাল লাগবে তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। তাই শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিক্তিতে কাউকে বিচার-বিবেচনা করাটা আমার কাছে সবসময় সঠিক বলে মনে হয় না।

অনেক কিছুই লিখে ফেললাম, মূল কথা হল আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, দেখবেন আপনার চারপাশটা আপনা আপনিই বদলে যাবে। 

পরিশেষে, কেউ আবার আমার সেই বন্ধুটি সম্পর্কে কোন বিশেষ ধারণা পোষণ করবেন না। বিভিন্ন সময় 'খাওয়া' অতঃপর আবার 'ছেড়ে দেয়ার' কারনে বিশেষ কোন সমস্যা দেখা দিতেই পারে। এরকম অন্তত একজন বন্ধু হয়ত সবারই আছে। আর আমি মূলত মানুষে - মানুষে পার্থক্য খুব কম করি, তাই সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। সাধারণতঃ অন্য কারও দ্বারা আমি প্রভাবিত হই না। যারা অন্যের দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয় তারা খুব দুর্বল ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন হয় অথবা তাদের নিজের কোন ব্যাক্তিত্ব বোধই থাকে না।

যাইহোক, আশা করব সে যেন এমন খাদ্যের সন্ধান পায় যা খাওয়ার পর আর ছাড়তে না হয়। তার অনেক দিনের ( সম্ভবত ১ম বর্ষে পড়ার সময় থেকেই ) ইচ্ছা ছিল আমাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের যার নাম সে পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিল। আমার সেরকম কোন বিশেষ ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মধ্যে লেখালেখি করলে মন্দ হয় না।


Friday, April 29, 2016

দৌড়ের উপর আছি

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আড্ডা দেয়াটা ভীষণ প্যাঁরাদায়ক হলেও একসময় খুব আনন্দের সাথেই তা উপভোগ করতাম২০১২ সালের ঘটনা, সেদিন হয়ত স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশিই গরম পড়েছিল। তাই বাসায় থেকে মুভি দেখাটাই শ্রেয় মনে করেছিলাম । ভার্সিটিতে ক্লাস ছিল না কেননা তখন গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলছিল। তারপরেও খুব কম সময়ই বাসায় থাকা হত। ক্লাস না থাকলেও কখনও ক্যাম্পাসে কখনওবা এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিতাম।

যাইহোক সেদিন বাসায় থাকায় অনেক দিন ধরে জমে থাকা মুভিগুলো দেখে শেষ করব ভাবলাম। কিন্তু দুপুর ১২ টা পেরোতেই এক বন্ধুর ফোন আসল, কি নাকি একটা কাজে মিরপুর ২ নাম্বার এসেছে ফিরে যাবার আগে আমার সাথে দেখা করতে চায়। কি আর করা তাকে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে থাকতে বললাম আর আমিও মুভি দেখা বাদ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম তার খোঁজে। তখনও জানতাম না যে সেখানে গিয়ে এক নতুন টাইপের মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আমার হবে। :P

আমার এই বন্ধুটির নাম হাসিব যার প্রধান কাজই ছিল বিভিন্ন কাজে  ঝামেলা পাকানো, কখনও কোন কাজ সে সঠিক ভাবে করতে পেরেছিল কিনা আমার মনে পড়ে না যথাসময়ে আমি স্টেডিয়ামের পৌঁছে গেলেও তার কোন খবর নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফোন করলাম . . . . .

-          হাসিব, কই তুমি ?
-          ( হাপাতে হাপাতে ) ভাই একটু অপেক্ষা কর আসছি ।
-          কি হয়েছে তোমার ? কোন সমস্যা ?
-          ভাই, দৌড়ের উপর আছি ... এসে সব কিছু বলছি ।

আরও প্রায় ১০ মিনিট পর হাপাতে হাপাতে সে এসে হাজির হল। ততক্ষণে আমি এক কাপ চা শেষ করে সবে মাত্র একটা সিগারেট ধরিয়েছি। যাইহোক, পাশে বসে সে এমনভাবে হাঁপাচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল কোথাও থেকে পালিয়ে এসেছে ।

-          কি হয়েছে তোমার ? হাঁপাচ্ছ কেন ?
-          ভাই আর বলিও না, আজকালকার মেয়েগুলা অনেক বদমাশ ।

[ বুঝতে পারলাম মেয়ে ঘটিত কোন কেলেঙ্কারি হয়ত, কারন তার আবার অভ্যাস ছিল বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বালিকাদের ফোন নাম্বার যোগাড় করে তাদের সাথে কথা বলা, কখনও কারও কারও সাথে প্রেম করারও চেষ্টাও হয়ত করেছিল। আবার বেশ কয়েকজন বালিকা নাকি তার সাথে প্রতারণাও করেছিল। সে কারও সাথে প্রতারণা করেছিল কি না জানি না তবে আমার জানামতে সে কিছুটা বোকা-সোকা প্রকৃতিরই ছিল। তার ভাষায় সেই সকল বালিকারা রমণী হলেও আমি তাদের বালিকাই বলতাম কারন তাদের কেউই প্রাপ্তবয়স্কা ছিল না। ]

আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম . . . . .

-          আচ্ছা শান্ত হও। এবার বল কি হয়েছে ?
-      কি আর বলব ! তোমার সাথে দেখা করব বলে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ প্রকৃতির ডাক অনুভব করলাম, তারপর আশেপাশে কোথাও এমন কোন জায়গা দেখলাম না যে সেখানে প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়া যায়। তাই ভাবলাম দেখি কিছুটা দূরে গিয়ে তেমন কোন জায়গা পাই কি না। কিছু দূর যাবার পর মনে হল চাপ কিছুটা বেড়েছে। তাই আর বেশি খোঁজাখুঁজি না করে একটা বিল্ডিং এর নিচেই কাজটা সারার সিদ্ধান্ত নিলাম।
-          আর কোন জায়গা পাইলা না ? কাউকে অন্তত জিজ্ঞাসা করলেও তো পারতা ।
-          কি করব বল ? চাপ তো বেশি ছিল ।
-          আচ্ছা তারপর কি হল ?
-      সেটা ছিল একটা নির্মাণাধীন ভবন আর অপর একটা ভবনের পাশে, দুইটার মাঝে একটা চিপা জায়গা ছিল সেই সময় আশেপাশেও কেউ ছিল না। চাপ বেশি থাকায় আর দেরি করলাম না। শুরু করে দিলাম, মনের আনন্দেই কাজ সারছিলাম হঠাৎ আশেপাশে কোথা থেকে যেন রমণীদের হাসাহাসির আওয়াজ আসতে লাগল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই কিন্তু তখনও আওয়াজ আসছেই। কিছুটা ভয় লাগল, ভাবলাম ভর-দুপুরে আবার জিন-পরীর আছর হল নাকি ! একবার মনে হল উপর থেকে আওয়াজটা আসছে। ভয়ে ভয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি পাশের বিল্ডিং এর বারান্দা থেকে রমণীদ্বয় তাদের মোবাইল ক্যামেরায় আমাকে ভিডিও করছে। তারপর সেই অবস্থায়ই কোনমতে দৌড়ে পালালাম। প্রকৃতির ডাক ছেড়ে মাঝামাঝি অবস্থায় পালিয়ে এসেছিলাম। তারপর পাশে দোকান থেকে কোনমতে টিস্যু কিনে চালিয়ে নিলাম। দোকানের লোকটাও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছিল। বুঝতেই পারছ মান ইজ্জতের ব্যাপার ।

[ এতটুকু শোনার পর আমিও আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। আমাকে হাসতে দেখে ও আরও রেগে গেল । ]

-          ওই মিয়া তুমি হাসতেছ ? আমার মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি। এখন ঐ মেয়ে গুলা যদি আমার ভিডিওটা youtube এ আপলোড করে দেয় ?

[ আমি তখনও হাসছিলাম দেখে ভীষণ রাগ করল। আমি কোনমতে হাসি থামিয়ে বললাম . . . ]

-          কিছুই হবে না। আর এইরকম ভিডিও হাজার হাজার আছে। আর শুধু শুধু কেনই বা ভিডিও আপলোড করবে ?
-          যদি করে দেয় ?
-          বললাম তো কিছুই হবে না। আর মোবাইল ক্যামেরায় দূর থেকে স্পষ্ট আসারও কথা না। ভুল যা করার তা তো করেই ফেলেছ ।  এখন আর এসব চিন্তা না করে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হয়ে যাও ।

যাইহোক, বুঝতে পারছিলাম আমার উপদেশ তার মনে ধরেনি। কি আর করা চা-সিগারেট খাইয়ে আর সান্ত্বনা দিয়েই তাকে সেদিনের মত বিদায় দিয়েছিলাম। পরে আবার দেখা হলে তার থেকেই শুনেছিলাম সে নাকি পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ youtube এই টাইপের অনেক ভিডিও সার্চ করেছিল তার ভিডিওটা সত্যিই কেউ আপলোড দিয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য ।

Wednesday, March 23, 2016

মেকআপ বৃত্তান্ত

২০০৯ সালের ঘটনা আমি তখন নটরডেম কলেজে ১ম বর্ষের ছাত্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হবার কারনে আমাদের বেশকিছু বিষয়ে ব্যাবহারিক ক্লাস করতে হত যারা নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তাদের কাছে ব্যাবহারিক ক্লাসের সাথে মেকআপ বিষয়টা খুব  ঘনিষ্ট ভাবেই জড়িত। বলাবাহুল্য যে এই মেকআপ আপুদের চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে কোনভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।

কোন কারনে যদি কোন ছাত্র তার নিজ ল্যাব গ্রুপের সাথে ব্যাবহারিক পরীক্ষাটি সফলভাবে করতে না পারে সেক্ষেত্রে তাকে অন্য গ্রুপের সাথে পুনরায় পরীক্ষাটি করতে হত এভাবে পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করে ল্যাবে দায়িত্বরত শিক্ষকের স্বাক্ষর না পাওয়া পর্যন্ত তাকে অন্য গ্রুপের সাথে পুনঃ পুনঃ বার পরীক্ষাটি করতে হত, আর এই প্রক্রিয়ার নামই মেকআপ

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে এটি একটি মহা যন্ত্রণাদায়ক বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয় আমার মত যারা মিরপুর থেকে নটরডেমে ক্লাস করত তাদের যাতায়াতের জন্যই প্রতিদিন ২+=৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় হত তারপর সকালে যদি ক্লাস থাকত তবে বিকেলে ল্যাব আর বিকেলে ক্লাস হলে সকালে ল্যাব, ১ম ও ২য় বর্ষে এরকমটাই ধারাবাহিক ভাবে চলত তার উপর যদি কোন ল্যাবে মেকআপ দেয়া হত তাহলে কি অবস্থা হয় বুঝতেই পারছেন

পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম ল্যাব ক্লাসেই আমি প্রথম বারের মত মেকআপের সম্মুখিন হই আর সম্ভবত সেটি ছিল – “স্লাইড ক্যালিপার্স ও স্ক্রু গেজের সাহায্যে এবং আর্কিমিডিসের সুত্র প্রয়োগে একটি নিরেট সিলিন্ডারের আয়তন নির্ণয় ও তুলনা যাইহোক এই পরীক্ষাটি গ্রুপে করতে হত আর যথারীতি আমাদের গ্রুপের সবাইকে সেদিনের মত মেকআপ দেয়া হল অবশ্য এই পরীক্ষাটি আমরা পরবর্তী দিনই সফলভাবে করতে পেরেছিলাম

এরপর আবারও পদার্থবিজ্ঞানের ল্যাবেই ২য় বারের মত মেকআপ পেয়েছিলাম আর সেটি ছিল  “প্রিজমের সাহায্যে আলোর প্রতিসরণের সুত্র পরীক্ষণ তবে এইবার গ্রুপে নয় আমি একাই , অবশ্য আমার মত আরও অনেকেই সেদিন মেকআপ পেয়েছিল ভেবেছিলাম এ আর এমন কি যারা কমপ্লিট করেছে তাদের কারও থেকে দেখে নিয়ে পরবর্তী দিনই কমপ্লিট করে ফেলব কিন্তু আমার সব ধারনা ভুল প্রমানিত হল যখন এই একই পরীক্ষায় আবারও মেকআপ পেলাম অর্থাৎ মেকআপের উপর আবার মেকআপ

পর পর দুইবার মেকআপ পাওয়ার পর কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম তবে মনে মনে সংকল্প করলাম যে ভাবেই হোক পরবর্তী দিন কমপ্লিট করতে হবেই ভাবলাম ভাল কোন ছাত্রের থেকে চিত্র গুলো কপি করে নিব কিন্তু হায় কপাল ! যার থেকে কপি করলাম সে এবং আমি দুজনই মেকআপ এইবার এমন অবস্থা হল যে মেকআপের স্লট পাওয়াটাও রীতিমত কষ্টকর হয়ে গেল তার উপর প্রতিদিনের ক্লাস তো আছেই তাছাড়া মিরপুর থেকে যাতায়াতেও অনেক সময় ব্যয় হত যাইহোক শেষ পর্যন্ত  ১ টাই  স্লট পাওয়া গেল যেখানে আমার মত মেকআপ পাওয়া আরও অনেকেই থাকবেন এবং এটাই সম্ভবত শেষ স্লট ছিল তিন তিনবার মেকআপ পাওয়ার পর এবারই শেষ সুযোগ এইবার সম্পূর্ণ  একা একাই করলাম পরীক্ষাটি এবং অনেকটা সময় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে এইবার পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করে দায়িত্বরত শিক্ষকের স্বাক্ষরও পেয়ে গেলাম সেই সাথে এটাও স্থির করলাম যা কিছুই হোক আর কখনও কারও থেকে কপি করব না

তারপর থেকে আর কখনও মেকআপ পাইনি পদার্থবিজ্ঞান ব্যতীত আর অন্য কোন বিষয়ের ল্যাবে কখনও মেকআপ পাইনি   তাছাড়া রসায়ন ল্যাবে তো সবসময় অন্যদের থেকে কিছুটা বেশি পারদর্শী ছিলাম রসায়ন ল্যাবে সবার কাছে ভীতিকর যেটা ছিল সেটা হল লবণ সনাক্তকরন অর্থাৎ লবনের আয়ন বা মূলক বের করা আমার গ্রুপে একমাত্র আমিই ছিলাম কম সময়ে সর্বাধিক লবণ সনাক্তকারী অর্থাৎ যতগুলো লবণ যেদিন দেয়া হয়েছিল সেগুলো সেদিনই সনাক্ত করতে পেরেছিলাম যে কারনে আমার গ্রুপের সবাই আমাকে  “ লবনরাজনাম দিয়েছিল

উদ্ভিদ বা প্রাণিবিদ্যার ল্যাবে সাধারনত মেকআপ দেয়া হত না যে কারনে বেশিরভাগ ছাত্র পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নেই মেকআপ পেয়ে থাকত  কলেজের সেই দিন গুলো প্রায়শই মনে পড়ে মনে হয় এইতো সেদিনই পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব থেকে মেকআপ নিয়ে বিমর্ষ মনে কিংবা রসায়ন ল্যাব থেকে খুশি মনে বাড়ি ফিরছি স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলি সবসময় উজ্জ্বল হয়েই রইবে

Sajedul Islam
NDC 2010
#1103063



Wednesday, October 14, 2015

মধ্যরাতের Comedy

আমার মত যারা নিশাচর প্রাণী তারা হয়ত রাতের বেলা অনেক ধরনের অভিজ্ঞতারই সম্মুখীন হয়েছেন। আমিও অনেকবার অনেক ধরনের অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি তবে আজকে যে ঘটনার কথা বলব সেটা ঘটেছিল  October 31, 2014 প্রায় ১ বছর আগে।

আনুমানিক রাত ২.০১ মিনিটে ০১৭৮৭৯৯৪৯৭১ নাম্বার থেকে Call আসল। তারপর ......

- হ্যালো স্লামালেকুম ! কে বলছেন ??

- আমি এক পবিত্র আত্মার মাজার থেকে বলছি ...... তুই আমার সালাম কেন গ্রহন করলি না ?

[ ভাবলাম হয়ত কোন Friend মজা করছে কারন সবাই জানে যে আমি রাতের বেলায় সাধারণত জেগেই থাকি ]

- আরে ভাই সালাম তো আমি ই আগে দিলাম ...... আর কে আপনি ? কাকে চাচ্ছেন ?
- খামোশ ! বেয়াদপ !! তুই জানিস না তুই কত বড় ভুল করেছিস !!!
- ধুর ! আর ভাল্লাগছে না ...... অনেক দিন দেখা করি না, ফোন ও ধরি না তাই মন খারাপ তো ? Exam চলছে ... কি করুম?
- দেখা !! খুব শীঘ্রই তুই আমার দেখা পাবি ...... আমি জ্বীনের বাদশাহ হাবিবুল্লাহ বিন শায়খ !! 

[ এইবার বুঝলাম এইটা অন্য কেস; মানে আতলা পাবলিক ]

- ওহ আচ্ছা ! আজকাল জ্বীনের বাদশাহ মোবাইল ব্যাবহার করে নাকি ? আবার রাত-বিরাতে ফোনও দেয় ।
- ওহে বেয়াদপ তোর দিন শেষ হয়ে এসেছে ...... তোর সব পাপের সাজা তুই পাবি । তোকে বিগত বৃহস্পতিবার বাদ আসর সালাম পাঠানো হয়েছিল তার উত্তর তুই দিস নাই ...... আগামী শুক্রবার বাদ আসর তুই রক্তবমি করে মারা যাবি । দুনিয়ার কোন ডাক্তার কবিরাজ তোকে বাচাতে পারবে না ।
- তাই নাকি ?? ইন্না লিল্লাহ ............ 
- তোর সারা শরীর কালো বর্ণ ধারন করবে ... চোখ দুটো সাদা হয়ে যাবে ...... কেউ তোকে দাফন করতে আসবে না ... লোকজন তোর লাশ দেখে ভয় পাবে ......... মুক্তির আর কোন উপায় নেই ....... তোর ভুলের জন্য তওবা কর ।
- আচ্ছা ভাল !! আমার চল্লিশার দাওয়াত রইল ...... আইসা খাইয়া যাইয়েন গরম গরম :P

[ এই পর্যায়ে আঁতেল টা বুঝতে পারছে যে এইখানে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না ] 

- বাঁচতে চাইলে একটাই উপায় ...... জানের বদলা জান দিতে হবে ।
- মানে ?
- আগামীকাল জুমার নামাজের পর তোর জানের সদ্গা হিসেবে একটা গরু কুরবানি দিতে হবে .... তার গোশত দেশের সব মাজারে বিলাইতে হবে ...... আর ...... 
- আর কি ?? 
- বাবার মাজারে বিশেষ দোয়া পরতে হবে ।
- কি বিশেষ দোয়া ?
- সেটা তুই বুঝবি না । তার জন্য হাদিয়া লাগবে ১০ হাজার টাকা । আগামী ৮ ঘণ্টার মধ্যে টাকা বিকাশ করে এই নাম্বারে পাঠাতে হবে ।
- ওরে চান্দুরে !! এই কাহিনি ...... 

[ তারপর লাইন কাটিয়া গেল; কয়েক বার চেষ্টা করেও আর লাইন পাওয়া যাই নাই ]

:o  লোকজন যে আজকাল কত ধান্দা বাইর করছে  .........