Wednesday, March 23, 2016

মেকআপ বৃত্তান্ত

২০০৯ সালের ঘটনা আমি তখন নটরডেম কলেজে ১ম বর্ষের ছাত্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হবার কারনে আমাদের বেশকিছু বিষয়ে ব্যাবহারিক ক্লাস করতে হত যারা নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তাদের কাছে ব্যাবহারিক ক্লাসের সাথে মেকআপ বিষয়টা খুব  ঘনিষ্ট ভাবেই জড়িত। বলাবাহুল্য যে এই মেকআপ আপুদের চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে কোনভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।

কোন কারনে যদি কোন ছাত্র তার নিজ ল্যাব গ্রুপের সাথে ব্যাবহারিক পরীক্ষাটি সফলভাবে করতে না পারে সেক্ষেত্রে তাকে অন্য গ্রুপের সাথে পুনরায় পরীক্ষাটি করতে হত এভাবে পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করে ল্যাবে দায়িত্বরত শিক্ষকের স্বাক্ষর না পাওয়া পর্যন্ত তাকে অন্য গ্রুপের সাথে পুনঃ পুনঃ বার পরীক্ষাটি করতে হত, আর এই প্রক্রিয়ার নামই মেকআপ

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে এটি একটি মহা যন্ত্রণাদায়ক বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয় আমার মত যারা মিরপুর থেকে নটরডেমে ক্লাস করত তাদের যাতায়াতের জন্যই প্রতিদিন ২+=৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় হত তারপর সকালে যদি ক্লাস থাকত তবে বিকেলে ল্যাব আর বিকেলে ক্লাস হলে সকালে ল্যাব, ১ম ও ২য় বর্ষে এরকমটাই ধারাবাহিক ভাবে চলত তার উপর যদি কোন ল্যাবে মেকআপ দেয়া হত তাহলে কি অবস্থা হয় বুঝতেই পারছেন

পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম ল্যাব ক্লাসেই আমি প্রথম বারের মত মেকআপের সম্মুখিন হই আর সম্ভবত সেটি ছিল – “স্লাইড ক্যালিপার্স ও স্ক্রু গেজের সাহায্যে এবং আর্কিমিডিসের সুত্র প্রয়োগে একটি নিরেট সিলিন্ডারের আয়তন নির্ণয় ও তুলনা যাইহোক এই পরীক্ষাটি গ্রুপে করতে হত আর যথারীতি আমাদের গ্রুপের সবাইকে সেদিনের মত মেকআপ দেয়া হল অবশ্য এই পরীক্ষাটি আমরা পরবর্তী দিনই সফলভাবে করতে পেরেছিলাম

এরপর আবারও পদার্থবিজ্ঞানের ল্যাবেই ২য় বারের মত মেকআপ পেয়েছিলাম আর সেটি ছিল  “প্রিজমের সাহায্যে আলোর প্রতিসরণের সুত্র পরীক্ষণ তবে এইবার গ্রুপে নয় আমি একাই , অবশ্য আমার মত আরও অনেকেই সেদিন মেকআপ পেয়েছিল ভেবেছিলাম এ আর এমন কি যারা কমপ্লিট করেছে তাদের কারও থেকে দেখে নিয়ে পরবর্তী দিনই কমপ্লিট করে ফেলব কিন্তু আমার সব ধারনা ভুল প্রমানিত হল যখন এই একই পরীক্ষায় আবারও মেকআপ পেলাম অর্থাৎ মেকআপের উপর আবার মেকআপ

পর পর দুইবার মেকআপ পাওয়ার পর কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম তবে মনে মনে সংকল্প করলাম যে ভাবেই হোক পরবর্তী দিন কমপ্লিট করতে হবেই ভাবলাম ভাল কোন ছাত্রের থেকে চিত্র গুলো কপি করে নিব কিন্তু হায় কপাল ! যার থেকে কপি করলাম সে এবং আমি দুজনই মেকআপ এইবার এমন অবস্থা হল যে মেকআপের স্লট পাওয়াটাও রীতিমত কষ্টকর হয়ে গেল তার উপর প্রতিদিনের ক্লাস তো আছেই তাছাড়া মিরপুর থেকে যাতায়াতেও অনেক সময় ব্যয় হত যাইহোক শেষ পর্যন্ত  ১ টাই  স্লট পাওয়া গেল যেখানে আমার মত মেকআপ পাওয়া আরও অনেকেই থাকবেন এবং এটাই সম্ভবত শেষ স্লট ছিল তিন তিনবার মেকআপ পাওয়ার পর এবারই শেষ সুযোগ এইবার সম্পূর্ণ  একা একাই করলাম পরীক্ষাটি এবং অনেকটা সময় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে এইবার পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করে দায়িত্বরত শিক্ষকের স্বাক্ষরও পেয়ে গেলাম সেই সাথে এটাও স্থির করলাম যা কিছুই হোক আর কখনও কারও থেকে কপি করব না

তারপর থেকে আর কখনও মেকআপ পাইনি পদার্থবিজ্ঞান ব্যতীত আর অন্য কোন বিষয়ের ল্যাবে কখনও মেকআপ পাইনি   তাছাড়া রসায়ন ল্যাবে তো সবসময় অন্যদের থেকে কিছুটা বেশি পারদর্শী ছিলাম রসায়ন ল্যাবে সবার কাছে ভীতিকর যেটা ছিল সেটা হল লবণ সনাক্তকরন অর্থাৎ লবনের আয়ন বা মূলক বের করা আমার গ্রুপে একমাত্র আমিই ছিলাম কম সময়ে সর্বাধিক লবণ সনাক্তকারী অর্থাৎ যতগুলো লবণ যেদিন দেয়া হয়েছিল সেগুলো সেদিনই সনাক্ত করতে পেরেছিলাম যে কারনে আমার গ্রুপের সবাই আমাকে  “ লবনরাজনাম দিয়েছিল

উদ্ভিদ বা প্রাণিবিদ্যার ল্যাবে সাধারনত মেকআপ দেয়া হত না যে কারনে বেশিরভাগ ছাত্র পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নেই মেকআপ পেয়ে থাকত  কলেজের সেই দিন গুলো প্রায়শই মনে পড়ে মনে হয় এইতো সেদিনই পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব থেকে মেকআপ নিয়ে বিমর্ষ মনে কিংবা রসায়ন ল্যাব থেকে খুশি মনে বাড়ি ফিরছি স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলি সবসময় উজ্জ্বল হয়েই রইবে

Sajedul Islam
NDC 2010
#1103063



0 comments:

Post a Comment