Friday, April 29, 2016

দৌড়ের উপর আছি

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আড্ডা দেয়াটা ভীষণ প্যাঁরাদায়ক হলেও একসময় খুব আনন্দের সাথেই তা উপভোগ করতাম২০১২ সালের ঘটনা, সেদিন হয়ত স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশিই গরম পড়েছিল। তাই বাসায় থেকে মুভি দেখাটাই শ্রেয় মনে করেছিলাম । ভার্সিটিতে ক্লাস ছিল না কেননা তখন গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলছিল। তারপরেও খুব কম সময়ই বাসায় থাকা হত। ক্লাস না থাকলেও কখনও ক্যাম্পাসে কখনওবা এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিতাম।

যাইহোক সেদিন বাসায় থাকায় অনেক দিন ধরে জমে থাকা মুভিগুলো দেখে শেষ করব ভাবলাম। কিন্তু দুপুর ১২ টা পেরোতেই এক বন্ধুর ফোন আসল, কি নাকি একটা কাজে মিরপুর ২ নাম্বার এসেছে ফিরে যাবার আগে আমার সাথে দেখা করতে চায়। কি আর করা তাকে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে থাকতে বললাম আর আমিও মুভি দেখা বাদ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম তার খোঁজে। তখনও জানতাম না যে সেখানে গিয়ে এক নতুন টাইপের মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আমার হবে। :P

আমার এই বন্ধুটির নাম হাসিব যার প্রধান কাজই ছিল বিভিন্ন কাজে  ঝামেলা পাকানো, কখনও কোন কাজ সে সঠিক ভাবে করতে পেরেছিল কিনা আমার মনে পড়ে না যথাসময়ে আমি স্টেডিয়ামের পৌঁছে গেলেও তার কোন খবর নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফোন করলাম . . . . .

-          হাসিব, কই তুমি ?
-          ( হাপাতে হাপাতে ) ভাই একটু অপেক্ষা কর আসছি ।
-          কি হয়েছে তোমার ? কোন সমস্যা ?
-          ভাই, দৌড়ের উপর আছি ... এসে সব কিছু বলছি ।

আরও প্রায় ১০ মিনিট পর হাপাতে হাপাতে সে এসে হাজির হল। ততক্ষণে আমি এক কাপ চা শেষ করে সবে মাত্র একটা সিগারেট ধরিয়েছি। যাইহোক, পাশে বসে সে এমনভাবে হাঁপাচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল কোথাও থেকে পালিয়ে এসেছে ।

-          কি হয়েছে তোমার ? হাঁপাচ্ছ কেন ?
-          ভাই আর বলিও না, আজকালকার মেয়েগুলা অনেক বদমাশ ।

[ বুঝতে পারলাম মেয়ে ঘটিত কোন কেলেঙ্কারি হয়ত, কারন তার আবার অভ্যাস ছিল বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বালিকাদের ফোন নাম্বার যোগাড় করে তাদের সাথে কথা বলা, কখনও কারও কারও সাথে প্রেম করারও চেষ্টাও হয়ত করেছিল। আবার বেশ কয়েকজন বালিকা নাকি তার সাথে প্রতারণাও করেছিল। সে কারও সাথে প্রতারণা করেছিল কি না জানি না তবে আমার জানামতে সে কিছুটা বোকা-সোকা প্রকৃতিরই ছিল। তার ভাষায় সেই সকল বালিকারা রমণী হলেও আমি তাদের বালিকাই বলতাম কারন তাদের কেউই প্রাপ্তবয়স্কা ছিল না। ]

আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম . . . . .

-          আচ্ছা শান্ত হও। এবার বল কি হয়েছে ?
-      কি আর বলব ! তোমার সাথে দেখা করব বলে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ প্রকৃতির ডাক অনুভব করলাম, তারপর আশেপাশে কোথাও এমন কোন জায়গা দেখলাম না যে সেখানে প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়া যায়। তাই ভাবলাম দেখি কিছুটা দূরে গিয়ে তেমন কোন জায়গা পাই কি না। কিছু দূর যাবার পর মনে হল চাপ কিছুটা বেড়েছে। তাই আর বেশি খোঁজাখুঁজি না করে একটা বিল্ডিং এর নিচেই কাজটা সারার সিদ্ধান্ত নিলাম।
-          আর কোন জায়গা পাইলা না ? কাউকে অন্তত জিজ্ঞাসা করলেও তো পারতা ।
-          কি করব বল ? চাপ তো বেশি ছিল ।
-          আচ্ছা তারপর কি হল ?
-      সেটা ছিল একটা নির্মাণাধীন ভবন আর অপর একটা ভবনের পাশে, দুইটার মাঝে একটা চিপা জায়গা ছিল সেই সময় আশেপাশেও কেউ ছিল না। চাপ বেশি থাকায় আর দেরি করলাম না। শুরু করে দিলাম, মনের আনন্দেই কাজ সারছিলাম হঠাৎ আশেপাশে কোথা থেকে যেন রমণীদের হাসাহাসির আওয়াজ আসতে লাগল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই কিন্তু তখনও আওয়াজ আসছেই। কিছুটা ভয় লাগল, ভাবলাম ভর-দুপুরে আবার জিন-পরীর আছর হল নাকি ! একবার মনে হল উপর থেকে আওয়াজটা আসছে। ভয়ে ভয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি পাশের বিল্ডিং এর বারান্দা থেকে রমণীদ্বয় তাদের মোবাইল ক্যামেরায় আমাকে ভিডিও করছে। তারপর সেই অবস্থায়ই কোনমতে দৌড়ে পালালাম। প্রকৃতির ডাক ছেড়ে মাঝামাঝি অবস্থায় পালিয়ে এসেছিলাম। তারপর পাশে দোকান থেকে কোনমতে টিস্যু কিনে চালিয়ে নিলাম। দোকানের লোকটাও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছিল। বুঝতেই পারছ মান ইজ্জতের ব্যাপার ।

[ এতটুকু শোনার পর আমিও আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। আমাকে হাসতে দেখে ও আরও রেগে গেল । ]

-          ওই মিয়া তুমি হাসতেছ ? আমার মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি। এখন ঐ মেয়ে গুলা যদি আমার ভিডিওটা youtube এ আপলোড করে দেয় ?

[ আমি তখনও হাসছিলাম দেখে ভীষণ রাগ করল। আমি কোনমতে হাসি থামিয়ে বললাম . . . ]

-          কিছুই হবে না। আর এইরকম ভিডিও হাজার হাজার আছে। আর শুধু শুধু কেনই বা ভিডিও আপলোড করবে ?
-          যদি করে দেয় ?
-          বললাম তো কিছুই হবে না। আর মোবাইল ক্যামেরায় দূর থেকে স্পষ্ট আসারও কথা না। ভুল যা করার তা তো করেই ফেলেছ ।  এখন আর এসব চিন্তা না করে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হয়ে যাও ।

যাইহোক, বুঝতে পারছিলাম আমার উপদেশ তার মনে ধরেনি। কি আর করা চা-সিগারেট খাইয়ে আর সান্ত্বনা দিয়েই তাকে সেদিনের মত বিদায় দিয়েছিলাম। পরে আবার দেখা হলে তার থেকেই শুনেছিলাম সে নাকি পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ youtube এই টাইপের অনেক ভিডিও সার্চ করেছিল তার ভিডিওটা সত্যিই কেউ আপলোড দিয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য ।

Related Posts:

  • Magic Square A magic square is a square array of numbers, usually integers, in a square grid, where the numbers in each row, and in each column, and the numbers … Read More
  • দৌড়ের উপর আছি গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আড্ডা দেয়াটা ভীষণ প্যাঁরাদায়ক হলেও একসময় খুব আনন্দের সাথেই তা উপভোগ করতাম। ২০১২ সালের ঘটনা, সেদি… Read More
  • বসন্ত ও ফেব্রুয়ারি আমরা বাঙালিরা সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই উদার মনের আর তাই খুব সহজেই বিদেশি সংস্কৃতি গুলোকে আপন করে নিতে পারি। ইংরেজি ফেব্রুয়ারি (February) মাসের বিশেষ… Read More

0 comments:

Post a Comment