Showing posts with label Kick. Show all posts
Showing posts with label Kick. Show all posts

Friday, November 1, 2024

Moulvibazar and Habiganj Adventure | মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ অভিযান

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা আর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা - এ দুই স্থানে অবস্থিত ২ টি জাতীয় উদ্যান বা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এদের অবস্থান সিলেট বিভাগে যা - বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী হিসাবে সুপরিচিত। পাহাড়ের ঢালে চা বাগানের অপূর্ব দৃশ্য ছাড়াও এর আশেপাশে রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাবার বাগান, সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, মাধবপুর লেক সহ আরো বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। 


ঢাকা থেকে সড়ক এবং রেলপথে সরাসরি যাওয়া সম্ভব। উভয় পথেই সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। এ রুটে হানিফ পরিবহন, এনা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনসহ বেশ কিছু অপারেটরের বাস চলাচল করে। বাসগুলো সায়েদাবাদ এবং ফকিরাপুর থেকে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস এবং উপবন এক্সপ্রেস নামক ট্রেনগুলো সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

বছরের পর বছর যায়, তবু এ স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে বৈ কমে না। সেই কবে 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইস' এর ফিলিয়াস ফগ এসে পৌঁছেছিলেন লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরের রেলপথে, আজও লোকে সেখানে বেড়াতে যায়। প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে। বিরল প্রজাতির পাখি, বাঁদর, হরিণ প্রভৃতি প্রাণীদের বাসস্থান এই উদ্যান। এদেরকে এক নজর দেখার পাশাপাশি হাইকিং ও ট্রেকিংয়ের জন্যও এ বন বেশ উপযোগী। তবে সেসময় স্থানীয় একজন গাইড সঙ্গে রাখলে ভালো হয়। 


শীতকালে শিশিরের অন্য এক জাদু ছড়িয়ে পড়ে এই রেইনফরেস্টে। হালকা কাদামাখা পথ দিয়ে একা একা হেঁটে যেতেও মন ছুঁয়ে যাবে প্রশান্তি। নাগরিক কোলাহল এড়িয়ে কিছুক্ষণের এই নির্জনতা সঙ্গী হবে হয়তো কাছেই ডেকে ওঠা একটা পাখির। প্রকৃতি ধরা দেবে চোখের সীমানায়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে এখানে যাওয়া সম্ভব। 

মাধবপুর লেক

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই লেকটি। জলপদ্মসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই স্থানটিতে বহু ধরনের পাখিদেরও আনাগোনা রয়েছে। একেক ঋতুতে মাধবপুর লেকের যেন একেক রূপ। কারও চোখে হয়তোবা তা ধরা দিতে পারে জল-উপকথার বিচিত্র প্রাণীর আকৃতিতে।


শীতকালে মাধবপুর লেকের মোহনীয় চেহারা ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে। এ সময়ে সাদা পেটের বগলা পাখিও দেখা যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই স্বপ্নালু এই হ্রদের দেখা মিলবে।

নীলকণ্ঠ টি-কেবিনের বিখ্যাত সাত রং চা

শুরুরদিকে শুধু একজায়গায় থাকলেও এখন বেশকিছু যায়গায় রয়েছে এই সাত রং চা এর উপস্থিতি, তবে মূল সাতরঙা চা বলতে নীলকন্ঠ কেবিনের চা কেই বোঝানো হয়। শ্রীমঙ্গলে বধ্যভূমি, বিডিআর ক্যাম্প ও কালীঘাট এই তিন যায়গায়  নীলকণ্ঠ চা কেবিন আছে তিনটি। সিলেটের গন্ডি ছাড়িয়ে  এখন রাজধানীর  ঢাকার অন্যতম ব্যাস্ত এলাকা খিলগাও এর  তালতলাতেও এই সাত রঙের চা পাওয়া যায়। চায়ের  লম্বা গ্লাসে এক স্তরের ওপর ভেসে থাকে আরেক স্তর। প্রতিটি স্তরে ভিন্ন রঙ। ঠিক এক গ্লাসে সাত রঙের সাত স্বাদের চা। প্রতিটা রঙ ভিন্ন। একটি অপরটির সঙ্গে মিশে না। প্রতিটা রঙের স্বাদও আলাদা। এর স্বাদ নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্ক রয়েছে তবে স্বাদ যতটা না ভাল তারচেয়েও ভাল হচ্ছে এর সৌন্দর্যটা । সাত রঙের চা বলে খ্যাত হলেও বর্তমানে চা পাবেন আট রঙের। তবে আট রঙ বলালে আসলে ভুল হয়ে যায় আটটি ভিন্ন স্তরের চা। রঙ থাকে  ২/৩টি। বিভিন্ন ধরণের মসলার ব্যবহারের তারতম্য, পানির ঘনত্বের চমৎকার বিন্যাস চায়ের এই স্তর সৃষ্টি করে।

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা (Shitesh Babu’s Zoo) মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার একটি সমৃদ্ধ ও একমাত্র চিড়িয়াখানা (যেটি বর্তমানে বন্য প্রানী সেবা ফাউন্ডেশন)। চিড়িয়াখানটি শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে হাইল হাওরের কাছে অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১ কি.মি পশ্চিমে একশত আশি একর জায়গাজুড়ে সিতেশ বাবুর গড়ে তুলেন। বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে এই চিড়িয়াখানাটি স্থাপিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকসহ বিদেশি অনেক পর্যটকও প্রতিদিন ভিড় করেন এ চিড়িয়াখানায়। অত্র এলাকার মানুষের শিক্ষার সহায়ক একটি ক্ষেত্রও বলা যায় এই চিড়িয়াখানাকে।

সিতেশ বাবুর পরিবার দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রাণি সংগ্রহের পর বর্তমানে এটি একটি পরিপূর্ণ চিড়িয়াখানায় পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের জীব জন্তুর মধ্যে রয়েছে: দেশের একমাত্র বিলুপ্ত প্রায় সাদা বাঘ, বিরল প্রজাতির সোনালী বাঘ, হিংস্র মেছোবাঘ, সোনালী হনুমান, সজারু, চারপাশে আতপ চালে গন্ধ ছড়ানো গন্ধগোকুল,নিশি বক, পাহাড়ি বক, সোনালী কচ্ছপ, বন মোরগ, ডাহুক, জংলী রাজহাস, সবুজ ঘুঘু, ধনেশ, তিলা ঘুঘু, রাজ সরলী, চা পাখি, অজগর, তোতা,ময়না, কচ্চপ, ভল্লুক ও অসংখ্য বিরল প্রজাতির প্রাণী।


এছাড়াও আছে লজ্জাবতী বানর, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, হনুমান, মায়া হরিণসহ প্রায় দেড়শ প্রজাতির জীবজন্তু। রয়েছে কালো-হলুদ ডোরাকাটা ত্রিভুজাকৃতির বিলুপ্তপ্রায় শঙ্খিনীণি, আছে হিমালয়ান সিভিটকেট, সোনালি কচুয়া, বন্য খরগোশ,মথুরা, বন্য রাজহাঁস, লেঞ্জা, ধলা বালিহাঁস, প্যারিহাঁস,চিত্রা হরিণ, কোয়েল, লাভবার্ড, কাসে-চড়া,বনরুই, বিভিন্ন রঙের খরগোশ, সোনালি খাটাশ, বড় গুইসাপ, ধনেশ, হিমালয়ান টিয়া, ময়না, ময়ূর, কালিম, বাজিরিক, শঙ্খ চিল, হরিয়াল প্রভৃতিও।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে “সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান”(Satchari Jatio Uddan) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া আছে, সেই থেকে এর নামকরণ সাতছড়ি (অর্থ: সাতটি ছড়াবিশিষ্ট)। সাতছড়ির আগের নাম ছিলো “রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট”।


জাতীয় উদ্যানটি কয়েকটি চা বাগান, গ্রাম, শহর এবং চাষাবাদকৃত জমি দ্বারা নিবিড়ভাবে বেষ্টিত। সাতছড়ি উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। টিপরাপাড়া নামে একটি গ্রাম উদ্যানটির ভেতরে অবস্থিত। যেখানে ২৪টি আদিবাসী উপজাতি পরিবার বসবাস করে। আশপাশের চৌদ্দটি গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে চা বাগানের শ্রমিক ও বনের মধ্যে বসবাসকারীরা বিভিন্নভাবে বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল।


সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ১৪৫ প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও ১৯৭ প্রজাতির জীব। যার মধ্যে ১৪৯ প্রজাতির পাখি, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের উল্লুকগুলোর এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি এবং পোকামাকড়ের বিচিত্র ধরনের ঝিঁঝিঁ শব্দ পর্যটকদের মধ্যে দারুণ আনন্দ দেয়।


এ বনের ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে উল্লুক, মেছোবাঘ, শুকুর, সাপ, মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, লজ্জাবতী বানর, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৪৯ প্রজাতির পাখির মধ্যে ধনেশ, লাল মাথা ট্রগন এবং বিরল উদ্ভিদের মধ্যে বিষলতা, পিতরাজ, কানাইডিঙ্গা, আগর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হতে চলছে। বিলুপ্ত প্রায় এসব প্রজাতির মধ্যে রয়েছে চিতা বাঘ, মেছো বাঘ, লজ্জাবতি বানর, মায়া হরিণ, উল্লুক, ময়না পাখি, ঘুঘু পাখি, টিয়া পাখি, ঈগল পাখিসহ উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে।

কালারডুবা হাওড় / নৌকা ঘাট 

স্নিগ্ধ বাতাসে বিস্তীর্ণ হাওড়ের বিশাল জলরাশির পাশে প্রিয়জনদের সঙ্গে বেড়াতে হাজারো মানুষের ভিড় করছেন হবিগঞ্জের কালারডুবা হাওরের পাড়ে। বর্ষা মৌসুমের পড়ন্ত বিকেলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ একটু বেশি। তবে, এ স্থানে একটি পরিকল্পিত বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। কেউ চড়েছেন নৌকায়, কেউবা পাড়ে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন। পড়ন্ত বিকেলে দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর কালারডুবা হাওড় এলাকা। বর্ষা মৌসুমে হবিগঞ্জের সদর উপজেলার কালারডুবা হাওড় এলাকায় এমনই ভিড় লেগে থাকে। জেলা শহরের কাছাকাছি কোন বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় বিকেলে হাজারো মানুষ জড়ো হন হাওড়পাড়ে। দর্শনার্থীদের বসে খাওয়ার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট ঘর। পানি ভেসে বেড়ানোর জন্য রয়েছে নৌকা।


আজ এ পর্যন্তই, সবাই পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ !


Saturday, June 6, 2020

সময় : সুসময় - দুঃসময় ও অসময় (পর্ব ২)

সরকারি চাকরির নিয়োগ বেশ দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই শুধু একটি পরীক্ষা দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। পাশাপাশি অন্যান্য চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। মাস্টার্স চলাকালীন অবস্থায় বেশ কয়েকটি সরকারি ব্যাংকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। যদিও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হইনি, তার পরেও হাল ছেড়ে দেইনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।

Friday, June 5, 2020

সময় : সুসময় - দুঃসময় ও অসময় (পর্ব ১)

সময় সাধারণত দুই প্রকারভালো সময় আর খারাপ সময় এছাড়া অন্য যা আছে সেটি হল  অসময় / ভুল সময় ভালো সময় রাস্তার ফকিরকেও রাজা বানিয়ে দেয়, আর খারাপ সময়ে ঘটে ঠিক তার উল্টোটা কিন্তু এই দুই প্রকার সময়ের মধ্যে এক অদ্ভুত মেলবন্ধন রয়েছে কারো জন্য ভালো সময় তো অন্য কারো জন্য সেটি খারাপ সময় আর সে জন্যই বলা হয়ে থাকে - কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ কখনো কখনো ভুল সময়ে সঠিক কোন ঘটনা ঘটে যায়, আবার কখনো সঠিক সময়ে ভুল কিছু ঘটে

Friday, April 21, 2017

অসমাপ্ত ( ৪র্থ পর্ব )


[ যখন অনেক চেষ্টা করেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারলেন না ..... ]

- আসলে আমার কোন উপন্যাসের নামই মনে থাকে না।
- বুঝতেই পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান :P .
- আপনি মনে হয় বঙ্কিমের লেখা পড়েন না ?
- চেষ্টা করেছিলাম, ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত  'দুর্গেশনন্দিনী '  পড়তে, তারপর বাকিটা ইতিহাস ......
- মানে ??
- আপনি যেহেতু বঙ্কিমের ফ্যান ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিত।

[ এতক্ষন পর ম্যাডাম বুঝতে পারলেন যে তিনি কি ভুলটা করেছেন ]

- আচ্ছা, আপনি আর কারও লেখা পড়েন না ?
- অনেকের লেখাই পড়েছি তবে শরৎচন্দ্রের পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাই বেশি ভাল লেগেছে।
- আমারও ভাল লাগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।
- তাই নাকি ? ..... ( থাক আর বললাম নাহ ! )
- হুম ম।  আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
- কেন ? ঢাকা যাচ্ছি।  এই বাসটা নিশ্চই সিলেট কিংবা বরিশাল যাবে না।
-আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন ? সোজাসুজি উত্তর দিতে পারেন না ?
- Okay, Sorry ! এখন থেকে সোজাসুজি উত্তর করার চেষ্টা করব।

- আপনার কথায় মনে হচ্ছে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ নন।  খুলনায় কি বেড়াতে এসেছিলেন ?
- বলতে পারেন অনেকটা তাই।  দুৰ্ভাগ্যবশতঃ এখানকার এক নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, বলতে পারেন Accidental Engineer. তাই মাঝে মধ্যে বেড়াতে এসে ক্লাস করতে হয়।

- হাঃহাঃহাঃ

অধরা মুখ আড়াল করে হাসার চেষ্টা করলেও তার অপূর্ব সেই হাসি আমার দৃষ্টি এড়াতে পারল না। মনে হচ্ছিল কোন এক অপ্সরা আমার পাশে বসে আছে আর তার কাজলকালো দুটি চোখের দৃষ্টি শুধু আমারই দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার গোলাপি ঠোঁটের কোণায় মুক্তঝরা সেই হাসি, আর সাথে সাথে  লালচে রঙের দুই গালে ফুটে উঠছিলো টোলের রেখা। হাসলে গালে টোল পরে এমন মেয়েদের প্রতি অনেক ছেলেরই দুর্বলতা থাকে, আর সেই মেয়েটি যদি অধরার মত সুন্দরী হয় তাহলে সেই দুর্বলতার শেষ পরিণতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যথাসম্ভব চেষ্টা করলাম নিজেকে সামলে নেয়ার। তারপর জিজ্ঞাসা করলামঃ

- আপনার কথা শুনেও মনে হচ্ছে না যে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ।
- কি মনে হচ্ছে তাহলে ?
- মনে হচ্ছে আপনি আমার খুব কাছের কেউ।
- মানে ??
- আপনিও নিশ্চই ঢাকায় থাকেন ? কথা শুনে অন্ততঃ তাই মনে হচ্ছে।
- হ্যা, তবে আপনার কাছের কেউ বলতে .... আপনি কি কোন ভাবে আমাকে আগে থেকেই চিনেন ?
- সত্যি বলব নাকি যেটা আপনি বিশ্বাস করবেন সেটাই বলব ?
- মানে ??
- আপনার এই  'মানে ?' প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিব বুঝতে পারছি না। যেহেতু আমরা দুজনেই ঢাকা থাকি তাই বলেছি হয়ত আপনি কাছের কেউই হবেন।
- আপনি কিন্তু আবারও সোজাসুজি উত্তর দিচ্ছেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর থেকে সোজাসুজি উত্তর করার জোরালো চেষ্টা করব। তার আগে আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন, আমার কথা তো অনেক বললাম।
- আমার সম্পর্কে বলার তেমন কিছুই নেই। হ্যা, আমিও ঢাকাতেই থাকি আর খুলনা মেডিকেলে পড়ছি MBBS ২য় বর্ষ।

[ বুঝতে পারলাম অধরা আমার থেকে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে কেননা আমিতো কেবল ১ম বর্ষে  ভর্তি হয়েছি মাত্র। যাইহোক, এখন এই ব্যাপারটা অধরাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। ]

- ঢাকায় কোথায় থাকেন ?
- ধানমন্ডিতে। তবে আমাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়াতে তার মানে উত্তর বঙ্গ।
- আমিও এরকমটাই ধারণা করেছিলাম।

তারপর আমরা দুজনেই হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম, হয়ত কি বলব সেটাই ভাবতে পারছিলাম না অথবা যা বলতে চাইছিলাম, সেটা বলতে পারছিলাম না। অধরা জানালার দিকে ফিরে বাইরে তাকিয়ে রইল। আমি মাঝে মাঝে আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। অনেক কিছুই তাকে বলতে চেয়েছিলাম। বলতে চেয়েছিলামঃ  অধরা, হয়ত তোমার সাথে বাস্তবে এটাই আমার প্রথম দেখা কিন্ত এর আগেও বহুবার তুমি এসেছিলে আমার স্বপ্নে, তুমি ছিলে আমার কল্পনায়। তুমি তো আমার অপরিচিতা নও, বহুকাল, বহুযুগ ধরেই তো তুমি আমার পাশে ছিলে। তুমি আমার খুব কাছের কেউ, আমারই আপনজন। নিমাই ভট্টাচার্যের মত বলতে চাইছিলামঃ

'' যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক,
তারা তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
আমার হৃদয়খানিতে। ''
( চলবে )

[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]

Wednesday, November 30, 2016

উপলদ্ধি ( পর্ব ৭ )


  • Sometimes, the wrong things can happen at the right time.
  • I am not afraid of dying but I'm afraid of not living my life.
  • লক্ষ্য যদি হয় সূর্যোদয়, তবে সূর্যাস্তে কেন ভয়?



Monday, August 8, 2016

খাইয়া ছাইড়া দিমু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স পড়ার সুবাদে বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব পেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হল এদের সবারই কিছু বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, বলা যেতে পারে Unique Characteristics. এরকমই একজন ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মানী। যিনি আরও বেশ কয়েকটি নামে আমাদের মাঝে পরিচিত ছিলেন যেমন : 

গামছা মানী  -  গামছার মাধ্যমে বিশেষ কার্য সম্পাদনে দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ এই নাম দেয়া হয়। 
মানী স্যার  -  তার মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ স্যাররাও তাকে স্যার বলে ডাকত। 
মানী দ্যা লিচু  -  এর ব্যাখ্যা আপাতত সেন্সর করা হল। 
ফট্টি (40) মানী  -  কোন এক দুপুরে জনসম্মুখে তার শক্তি প্রদর্শনের কারনে এই নাম দেয়া হয়। 

আসলে এইসব নামের ব্যাখ্যা দিতে গেলে, অর্থাৎ নাম করনের সার্থকতা আলোচনা করতে গেলে এক একটা মহাকাব্য রচনা করতে হবে। তাই আপাতত সেদিকে না গিয়ে তার একটা বিশেষ ডায়লগ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আর সেই বিশেষ ডায়ালগটি হল 'খাইয়া ছাইড়া দিমু'। বিশেষ কিছু প্রেক্ষাপটে তার মুখ থেকে বিশেষ এই ডায়ালগটি শোনা যায়।  তাহলে চলুন দেখা যাক কি সেই প্রেক্ষাপট আর আসলে সে কি খাবে আর কি ছাড়বে !

আমরা দুজনেই মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারনে প্রায় সময়ই একসাথে আসা যাওয়া করতাম, আড্ডা দিতাম বা ঘোরাফেরা করতাম। বিভিন্ন সময় তার সাথে কথোপকথনে একই ধরনের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি ঘটে।  প্রেক্ষাপট অনেকটা একই হবার কারণে এই ঘটনা গুলোকে একই ক্ৰমে তুলে ধরা হল। 

ঘটনা ১ ( ২০১২ সাল )

আমি, মানী এবং আশেপাশে আরও অনেক বন্ধুরাই ছিল। সবাই কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মানী কোন এক রমণীর দিকে বার বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম :
-            কিরে কি দেখছিস ? পছন্দ হইছে নাকি ?
-            আরে নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ২ ( ২০১৪ সাল )

আমি আর মানী রিকশায় করে যাচ্ছিলাম সম্ভবত নীলক্ষেত বা আজিমপুরের উদ্দেশে। সামনে কোন এর রমণীর দেখা পেয়ে তার প্রতি ইঙ্গিত করে মানী বলছিল :
-             দেখ, শালি একটা মাল ।
-            চেহারা তেমন একটা ভাল না ।
                [ আমার কাছে রমণীর চেহারা বিশেষ ভাল না লাগলেও ভাল ফিগারের অধিকারিণী ছিল ]
-            আরে চেহারা দিয়া কি হইব ? খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

ঘটনা ৩ ( ২০১৬ সাল )

আমি, রিয়ান ভাই আর মানী কার্জন হলের সামনে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি আসার আগেই কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল আর সেই ব্যাপারেই মানী আর রিয়ান ভাইয়ের মাঝে কথা হচ্ছিল।
-           ভাই যেই মেয়েটার টাকা পড়ে গিয়েছিল ঐ মেয়েটার চেহারা কেমন ছিল খেয়াল করছিলেন ? ভাল ছিল ?
-           আমি খুব একটা খেয়াল করি নাই ।
-           আমিও দেখি নাই ।
-           তবে ভাল ছিল না মনে হয় ।
-           ব্যাপার নাহ ! খাইয়া ছাইড়া দিমু ।

যাইহোক, আমার জানামতে এই ঘটনা গুলো এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আদৌ সে কি খেয়েছিল, কি না খেয়েছিল কিংবা ছেড়ে দিয়েছিল নাকি ধরেছিল তা আমার জানা নেই। বলতে পারেন এগুলো আমাদের সমাজের নিত্য দিনের ঘটনা। এতে হয়তো কোন ব্যাক্তি বিশেষের ক্ষতি না হলেও নিজেদের চিন্তা-চেতনার ক্ষতি ছাড়া কোন বিশেষ লাভ হয় না।

সব মানুষের পছন্দ-অপছন্দ একরকম নয়। তার থেকেও বড় ব্যাপার এই যে এই পছন্দ-অপছন্দ আবার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। আজকে যা আপনার ভাল লাগছে, আগামীকালও যে সেটা আপনার ভাল লাগবে তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। তাই শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিক্তিতে কাউকে বিচার-বিবেচনা করাটা আমার কাছে সবসময় সঠিক বলে মনে হয় না।

অনেক কিছুই লিখে ফেললাম, মূল কথা হল আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, দেখবেন আপনার চারপাশটা আপনা আপনিই বদলে যাবে। 

পরিশেষে, কেউ আবার আমার সেই বন্ধুটি সম্পর্কে কোন বিশেষ ধারণা পোষণ করবেন না। বিভিন্ন সময় 'খাওয়া' অতঃপর আবার 'ছেড়ে দেয়ার' কারনে বিশেষ কোন সমস্যা দেখা দিতেই পারে। এরকম অন্তত একজন বন্ধু হয়ত সবারই আছে। আর আমি মূলত মানুষে - মানুষে পার্থক্য খুব কম করি, তাই সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। সাধারণতঃ অন্য কারও দ্বারা আমি প্রভাবিত হই না। যারা অন্যের দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয় তারা খুব দুর্বল ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন হয় অথবা তাদের নিজের কোন ব্যাক্তিত্ব বোধই থাকে না।

যাইহোক, আশা করব সে যেন এমন খাদ্যের সন্ধান পায় যা খাওয়ার পর আর ছাড়তে না হয়। তার অনেক দিনের ( সম্ভবত ১ম বর্ষে পড়ার সময় থেকেই ) ইচ্ছা ছিল আমাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের যার নাম সে পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিল। আমার সেরকম কোন বিশেষ ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মধ্যে লেখালেখি করলে মন্দ হয় না।


Friday, April 29, 2016

দৌড়ের উপর আছি

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আড্ডা দেয়াটা ভীষণ প্যাঁরাদায়ক হলেও একসময় খুব আনন্দের সাথেই তা উপভোগ করতাম২০১২ সালের ঘটনা, সেদিন হয়ত স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশিই গরম পড়েছিল। তাই বাসায় থেকে মুভি দেখাটাই শ্রেয় মনে করেছিলাম । ভার্সিটিতে ক্লাস ছিল না কেননা তখন গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলছিল। তারপরেও খুব কম সময়ই বাসায় থাকা হত। ক্লাস না থাকলেও কখনও ক্যাম্পাসে কখনওবা এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিতাম।

যাইহোক সেদিন বাসায় থাকায় অনেক দিন ধরে জমে থাকা মুভিগুলো দেখে শেষ করব ভাবলাম। কিন্তু দুপুর ১২ টা পেরোতেই এক বন্ধুর ফোন আসল, কি নাকি একটা কাজে মিরপুর ২ নাম্বার এসেছে ফিরে যাবার আগে আমার সাথে দেখা করতে চায়। কি আর করা তাকে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে থাকতে বললাম আর আমিও মুভি দেখা বাদ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম তার খোঁজে। তখনও জানতাম না যে সেখানে গিয়ে এক নতুন টাইপের মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আমার হবে। :P

আমার এই বন্ধুটির নাম হাসিব যার প্রধান কাজই ছিল বিভিন্ন কাজে  ঝামেলা পাকানো, কখনও কোন কাজ সে সঠিক ভাবে করতে পেরেছিল কিনা আমার মনে পড়ে না যথাসময়ে আমি স্টেডিয়ামের পৌঁছে গেলেও তার কোন খবর নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফোন করলাম . . . . .

-          হাসিব, কই তুমি ?
-          ( হাপাতে হাপাতে ) ভাই একটু অপেক্ষা কর আসছি ।
-          কি হয়েছে তোমার ? কোন সমস্যা ?
-          ভাই, দৌড়ের উপর আছি ... এসে সব কিছু বলছি ।

আরও প্রায় ১০ মিনিট পর হাপাতে হাপাতে সে এসে হাজির হল। ততক্ষণে আমি এক কাপ চা শেষ করে সবে মাত্র একটা সিগারেট ধরিয়েছি। যাইহোক, পাশে বসে সে এমনভাবে হাঁপাচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল কোথাও থেকে পালিয়ে এসেছে ।

-          কি হয়েছে তোমার ? হাঁপাচ্ছ কেন ?
-          ভাই আর বলিও না, আজকালকার মেয়েগুলা অনেক বদমাশ ।

[ বুঝতে পারলাম মেয়ে ঘটিত কোন কেলেঙ্কারি হয়ত, কারন তার আবার অভ্যাস ছিল বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বালিকাদের ফোন নাম্বার যোগাড় করে তাদের সাথে কথা বলা, কখনও কারও কারও সাথে প্রেম করারও চেষ্টাও হয়ত করেছিল। আবার বেশ কয়েকজন বালিকা নাকি তার সাথে প্রতারণাও করেছিল। সে কারও সাথে প্রতারণা করেছিল কি না জানি না তবে আমার জানামতে সে কিছুটা বোকা-সোকা প্রকৃতিরই ছিল। তার ভাষায় সেই সকল বালিকারা রমণী হলেও আমি তাদের বালিকাই বলতাম কারন তাদের কেউই প্রাপ্তবয়স্কা ছিল না। ]

আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম . . . . .

-          আচ্ছা শান্ত হও। এবার বল কি হয়েছে ?
-      কি আর বলব ! তোমার সাথে দেখা করব বলে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ প্রকৃতির ডাক অনুভব করলাম, তারপর আশেপাশে কোথাও এমন কোন জায়গা দেখলাম না যে সেখানে প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়া যায়। তাই ভাবলাম দেখি কিছুটা দূরে গিয়ে তেমন কোন জায়গা পাই কি না। কিছু দূর যাবার পর মনে হল চাপ কিছুটা বেড়েছে। তাই আর বেশি খোঁজাখুঁজি না করে একটা বিল্ডিং এর নিচেই কাজটা সারার সিদ্ধান্ত নিলাম।
-          আর কোন জায়গা পাইলা না ? কাউকে অন্তত জিজ্ঞাসা করলেও তো পারতা ।
-          কি করব বল ? চাপ তো বেশি ছিল ।
-          আচ্ছা তারপর কি হল ?
-      সেটা ছিল একটা নির্মাণাধীন ভবন আর অপর একটা ভবনের পাশে, দুইটার মাঝে একটা চিপা জায়গা ছিল সেই সময় আশেপাশেও কেউ ছিল না। চাপ বেশি থাকায় আর দেরি করলাম না। শুরু করে দিলাম, মনের আনন্দেই কাজ সারছিলাম হঠাৎ আশেপাশে কোথা থেকে যেন রমণীদের হাসাহাসির আওয়াজ আসতে লাগল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই কিন্তু তখনও আওয়াজ আসছেই। কিছুটা ভয় লাগল, ভাবলাম ভর-দুপুরে আবার জিন-পরীর আছর হল নাকি ! একবার মনে হল উপর থেকে আওয়াজটা আসছে। ভয়ে ভয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি পাশের বিল্ডিং এর বারান্দা থেকে রমণীদ্বয় তাদের মোবাইল ক্যামেরায় আমাকে ভিডিও করছে। তারপর সেই অবস্থায়ই কোনমতে দৌড়ে পালালাম। প্রকৃতির ডাক ছেড়ে মাঝামাঝি অবস্থায় পালিয়ে এসেছিলাম। তারপর পাশে দোকান থেকে কোনমতে টিস্যু কিনে চালিয়ে নিলাম। দোকানের লোকটাও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছিল। বুঝতেই পারছ মান ইজ্জতের ব্যাপার ।

[ এতটুকু শোনার পর আমিও আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। আমাকে হাসতে দেখে ও আরও রেগে গেল । ]

-          ওই মিয়া তুমি হাসতেছ ? আমার মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি। এখন ঐ মেয়ে গুলা যদি আমার ভিডিওটা youtube এ আপলোড করে দেয় ?

[ আমি তখনও হাসছিলাম দেখে ভীষণ রাগ করল। আমি কোনমতে হাসি থামিয়ে বললাম . . . ]

-          কিছুই হবে না। আর এইরকম ভিডিও হাজার হাজার আছে। আর শুধু শুধু কেনই বা ভিডিও আপলোড করবে ?
-          যদি করে দেয় ?
-          বললাম তো কিছুই হবে না। আর মোবাইল ক্যামেরায় দূর থেকে স্পষ্ট আসারও কথা না। ভুল যা করার তা তো করেই ফেলেছ ।  এখন আর এসব চিন্তা না করে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হয়ে যাও ।

যাইহোক, বুঝতে পারছিলাম আমার উপদেশ তার মনে ধরেনি। কি আর করা চা-সিগারেট খাইয়ে আর সান্ত্বনা দিয়েই তাকে সেদিনের মত বিদায় দিয়েছিলাম। পরে আবার দেখা হলে তার থেকেই শুনেছিলাম সে নাকি পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ youtube এই টাইপের অনেক ভিডিও সার্চ করেছিল তার ভিডিওটা সত্যিই কেউ আপলোড দিয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য ।

Wednesday, March 23, 2016

মেকআপ বৃত্তান্ত

২০০৯ সালের ঘটনা আমি তখন নটরডেম কলেজে ১ম বর্ষের ছাত্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হবার কারনে আমাদের বেশকিছু বিষয়ে ব্যাবহারিক ক্লাস করতে হত যারা নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তাদের কাছে ব্যাবহারিক ক্লাসের সাথে মেকআপ বিষয়টা খুব  ঘনিষ্ট ভাবেই জড়িত। বলাবাহুল্য যে এই মেকআপ আপুদের চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে কোনভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।

কোন কারনে যদি কোন ছাত্র তার নিজ ল্যাব গ্রুপের সাথে ব্যাবহারিক পরীক্ষাটি সফলভাবে করতে না পারে সেক্ষেত্রে তাকে অন্য গ্রুপের সাথে পুনরায় পরীক্ষাটি করতে হত এভাবে পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করে ল্যাবে দায়িত্বরত শিক্ষকের স্বাক্ষর না পাওয়া পর্যন্ত তাকে অন্য গ্রুপের সাথে পুনঃ পুনঃ বার পরীক্ষাটি করতে হত, আর এই প্রক্রিয়ার নামই মেকআপ

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে এটি একটি মহা যন্ত্রণাদায়ক বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয় আমার মত যারা মিরপুর থেকে নটরডেমে ক্লাস করত তাদের যাতায়াতের জন্যই প্রতিদিন ২+=৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় হত তারপর সকালে যদি ক্লাস থাকত তবে বিকেলে ল্যাব আর বিকেলে ক্লাস হলে সকালে ল্যাব, ১ম ও ২য় বর্ষে এরকমটাই ধারাবাহিক ভাবে চলত তার উপর যদি কোন ল্যাবে মেকআপ দেয়া হত তাহলে কি অবস্থা হয় বুঝতেই পারছেন

পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম ল্যাব ক্লাসেই আমি প্রথম বারের মত মেকআপের সম্মুখিন হই আর সম্ভবত সেটি ছিল – “স্লাইড ক্যালিপার্স ও স্ক্রু গেজের সাহায্যে এবং আর্কিমিডিসের সুত্র প্রয়োগে একটি নিরেট সিলিন্ডারের আয়তন নির্ণয় ও তুলনা যাইহোক এই পরীক্ষাটি গ্রুপে করতে হত আর যথারীতি আমাদের গ্রুপের সবাইকে সেদিনের মত মেকআপ দেয়া হল অবশ্য এই পরীক্ষাটি আমরা পরবর্তী দিনই সফলভাবে করতে পেরেছিলাম

এরপর আবারও পদার্থবিজ্ঞানের ল্যাবেই ২য় বারের মত মেকআপ পেয়েছিলাম আর সেটি ছিল  “প্রিজমের সাহায্যে আলোর প্রতিসরণের সুত্র পরীক্ষণ তবে এইবার গ্রুপে নয় আমি একাই , অবশ্য আমার মত আরও অনেকেই সেদিন মেকআপ পেয়েছিল ভেবেছিলাম এ আর এমন কি যারা কমপ্লিট করেছে তাদের কারও থেকে দেখে নিয়ে পরবর্তী দিনই কমপ্লিট করে ফেলব কিন্তু আমার সব ধারনা ভুল প্রমানিত হল যখন এই একই পরীক্ষায় আবারও মেকআপ পেলাম অর্থাৎ মেকআপের উপর আবার মেকআপ

পর পর দুইবার মেকআপ পাওয়ার পর কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম তবে মনে মনে সংকল্প করলাম যে ভাবেই হোক পরবর্তী দিন কমপ্লিট করতে হবেই ভাবলাম ভাল কোন ছাত্রের থেকে চিত্র গুলো কপি করে নিব কিন্তু হায় কপাল ! যার থেকে কপি করলাম সে এবং আমি দুজনই মেকআপ এইবার এমন অবস্থা হল যে মেকআপের স্লট পাওয়াটাও রীতিমত কষ্টকর হয়ে গেল তার উপর প্রতিদিনের ক্লাস তো আছেই তাছাড়া মিরপুর থেকে যাতায়াতেও অনেক সময় ব্যয় হত যাইহোক শেষ পর্যন্ত  ১ টাই  স্লট পাওয়া গেল যেখানে আমার মত মেকআপ পাওয়া আরও অনেকেই থাকবেন এবং এটাই সম্ভবত শেষ স্লট ছিল তিন তিনবার মেকআপ পাওয়ার পর এবারই শেষ সুযোগ এইবার সম্পূর্ণ  একা একাই করলাম পরীক্ষাটি এবং অনেকটা সময় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে এইবার পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করে দায়িত্বরত শিক্ষকের স্বাক্ষরও পেয়ে গেলাম সেই সাথে এটাও স্থির করলাম যা কিছুই হোক আর কখনও কারও থেকে কপি করব না

তারপর থেকে আর কখনও মেকআপ পাইনি পদার্থবিজ্ঞান ব্যতীত আর অন্য কোন বিষয়ের ল্যাবে কখনও মেকআপ পাইনি   তাছাড়া রসায়ন ল্যাবে তো সবসময় অন্যদের থেকে কিছুটা বেশি পারদর্শী ছিলাম রসায়ন ল্যাবে সবার কাছে ভীতিকর যেটা ছিল সেটা হল লবণ সনাক্তকরন অর্থাৎ লবনের আয়ন বা মূলক বের করা আমার গ্রুপে একমাত্র আমিই ছিলাম কম সময়ে সর্বাধিক লবণ সনাক্তকারী অর্থাৎ যতগুলো লবণ যেদিন দেয়া হয়েছিল সেগুলো সেদিনই সনাক্ত করতে পেরেছিলাম যে কারনে আমার গ্রুপের সবাই আমাকে  “ লবনরাজনাম দিয়েছিল

উদ্ভিদ বা প্রাণিবিদ্যার ল্যাবে সাধারনত মেকআপ দেয়া হত না যে কারনে বেশিরভাগ ছাত্র পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নেই মেকআপ পেয়ে থাকত  কলেজের সেই দিন গুলো প্রায়শই মনে পড়ে মনে হয় এইতো সেদিনই পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব থেকে মেকআপ নিয়ে বিমর্ষ মনে কিংবা রসায়ন ল্যাব থেকে খুশি মনে বাড়ি ফিরছি স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলি সবসময় উজ্জ্বল হয়েই রইবে

Sajedul Islam
NDC 2010
#1103063