সরকারি চাকরির নিয়োগ বেশ দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই শুধু একটি পরীক্ষা দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। পাশাপাশি অন্যান্য চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। মাস্টার্স চলাকালীন অবস্থায় বেশ কয়েকটি সরকারি ব্যাংকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। যদিও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হইনি, তার পরেও হাল ছেড়ে দেইনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
বেসরকারি পর্যায়ে বেশকিছু চাকরির সুযোগ সে সময় হয়েছিল, তার পাশাপাশি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করতাম। ২০১৮ সালের শেষদিকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কিছুদিন ক্লাস নিলাম, তবে এখানে প্রধান সমস্যা হল শুক্রবার, শনিবার বন্ধ পাওয়া যায় না। সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার বা বুধবার। এর ফলে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না, তাই অল্প কিছুদিন পরেই সেটি বাদ দিয়ে দিই।
বিপদ যখন আসে তখন তার দলবল নিয়ে আসে।
ঠিক
তেমনি,
সময়
যখন
খারাপ
চলে
তখন
শত
চেষ্টা
করলেও
ভালো
কিছু
হয়
না।
এসবের
মধ্যে
থেকেই
নিজের
পরিচিত
বন্ধু
আর
সিনিয়র
এক
ভাইকে
নিয়ে
ছোটখাটো
ব্যবসা
শুরু
করি।
কিন্তু
ওই
যে
সময়
খারাপ
ছিল
তাই
হয়তো সেই সিনিয়র
ভাই,
যাকে
নিজের
আপন
ভাইয়ের
মতই
বিশ্বাস
করতাম
তিনি
কিনা
বিশ্বাসঘাতকতা
করলেন।
যার
ফলাফল
হিসেবে
ব্যবসাটি
মাঝপথে
থামিয়ে
দিতে
হল।
(বর্তমানে
কার্যক্রম
স্থগিত
আছে)
বন্ধু-বান্ধব অনেক থাকলেও সেই সময়টায় সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসলো না।
বন্ধুবান্ধব
আর
ক্লাসমেটদের
মধ্যে
যার
যখন
যে
ধরনের
সমস্যা
হত,
নিজের
সাধ্যমত
সাহায্য
করার
চেষ্টা
করতাম।
কেউ
সমস্যায়
পড়লে
আর্থিক
সাহায্যের
জন্য
দেখা
যেতো
সবার
প্রথমে
আমার
কাছেই
আসত।
আমি
আমার
সাধ্যমত
টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করতাম।
নিজের
অর্থনৈতিক
সমস্যা
থাকলেও
কখনো
কারো
কাছে
সাহায্যের
জন্য
যাইনি,
তবে
এতোটুকু
অন্তত
আশা
ছিল
যারা
বিভিন্ন
সময়ে
আমার
থেকে
টাকা-পয়সা ধার নিয়েছে আমার বিপদের সময় সেই ধারের সামান্য টাকা ফেরত দিলেই যথেষ্ট।
কিন্তু কিছু কিছু মানুষ সবসময়ই স্বার্থপর।
টাকা-পয়সা নেয়ার পর তারা ভুলে যেতেই পছন্দ করেন।
হয়তো
অনেকে
ততদিনে
ছোট
কিংবা
বড়
সরকারি
কিংবা
বেসরকারি
চাকরি
পেয়ে
গেছে,
মাস
শেষে
বেশ
ভালো
বেতনও
পাচ্ছে
শুধু
আমার
থেকে
নেয়া
সামান্য কিছু টাকার
কথাই তারা
ভুলে
গেছে।
যেহেতু
তাদের
কোন
লজ্জা
ছিল
না,
তাই
তারা
যে
টাকা
ধার
নিয়েছিল
সেটা
ফেরত
চাইতে
নিজেরই
লজ্জা
বোধ
হতো।
তাই
আর
ফেরত
চাইনি,
আর
কোনদিন
চাইবও
না।
কেউ
কেউ
আবার
এরকমটা
মনে
করতো
যে
শুধু
তার
টাকারই
মূল্য
আছে
আমাদের
মত
সামান্য
মানুষদের
থেকে
নেয়া
সামান্য
টাকার
কোন
মূল্যই
নেই।
সে
জন্যই
হয়তো
বলা
হয়ে
থাকে
- "ক্ষুধার্ত
পেট"
আর "খালি
পকেট"
মানুষকে
যে
শিক্ষা
দিয়ে
থাকে
পৃথিবীর
কোন
বই-পুস্তক সেই শিক্ষা দিতে পারে না।
আসলে খারাপ সময়টাও আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত, যা আপনাকে আপনার আশেপাশের মানুষদের আসল রূপটা চিনতে সহায়তা করে।
আবার
অনেক
ভালো
মানুষও
আমি
দেখেছি,
যারা
প্রয়োজনে
টাকা
ধার
নেওয়ার
পর
যত
দ্রুত
সম্ভব
সেটা
শোধ
করার
চেষ্টা করতো। আমিও নিজেও সবসময় এটাই করতাম, যদিও বিগত ১০ বছরে এক/দুই বার ছাড়া কারো থেকে কখনো টাকা পয়সা ধার নেয়ার প্রয়োজন হয়নি এবং সেটা ফেরত দেয়ার আগ পর্যন্ত ঋণী অবস্থায় ঠিকমত ঘুমাতেও পারিনি।
সব
সময়
আল্লাহর
কাছেই
সাহায্য চাইতাম, তাই অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি।
●
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ঠ । (সূরা তালাক ৬৫ : ৩)
●
ধৈর্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর সালাতের মাধ্যমে । (সূরা বাক্বারাহ ২ : ৪৫)
মাঝখানে ছোটখাটো একটি চাকরিতে জয়েন করেছিলাম, ঠিক সেই সময়ই জাপানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে (BJET Program) কাজ করার সুযোগ আসে।
যদিও
অনেকের
মতে
সেই
সুযোগ
ছেড়ে
দেয়া
ঠিক
হয়নি,
কিন্তু
রাষ্ট্র
তথা
দেশের
প্রতি
দায়িত্ববোধ,
নিজের
পরিবারের
প্রতি
দায়িত্ববোধ
এবং
সর্বোপরি
যেই
বিসিএস
আর
সরকারি
চাকরির
জন্য
২০১৬
সাল
থেকে
চেষ্টা
করে
যাচ্ছি
সে
সবকিছু
বাদ
দিয়ে
২০১৯
সালে
জাপানে
চলে
যাব।
এসব
কথা
চিন্তা
করেই
জাপানে
ভালো
ক্যারিয়ার
(মাসিক
কয়েক
লাখ
টাকা
বেতন)
আর
উচ্চ
শিক্ষার
সুযোগ
জলাঞ্জলি
দিয়ে
দেশীয়
বেসরকারি
পর্যায়ে
সর্ববৃহৎ
ইসলামী
ব্যাংকে
ট্রেইনি
অফিসার
(TO) হিসেবে নতুন কর্মজীবন শুরু করি।
কিন্তু এত কিছুর পরেও ঠিক কোথায় যেন কিছু একটা বাদ থেকে গেল।
বিসিএস, সরকারি ব্যাংক - একটি স্বপ্নের সরকারি চাকরি এসবের চিন্তায় থাকতাম সব সময়।
২০২০
সালের
শুরুতে
এসে
দেখলাম
সব
মিলিয়ে
সর্বমোট
১৩
টি
সরকারি
চাকরির
ভাইভা
দিয়েছি
(বিসিএস,
সরকারি
ব্যাংক
ও
অন্যান্য)।
(১৩
সংখ্যাটি
কারও
জন্য Unlucky number আবার কারও জন্য Lucky number)।
এখনো
বিসিএস
এর
রেজাল্টের
প্রত্যাশায়
আছি, এরইমধ্যে প্রথম সরকারি ব্যাংকে চাকরির সুসংবাদ পাই ২০২০ সালের মার্চ মাসে।
জনতা
ব্যাংকের
নবনির্বাচিত
সিনিয়র
অফিসারদের
তালিকায়
যখন
নিজের
রোল
নম্বরটি খুঁজে পাই তখন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, তাই অন্য একজনকে দেখার জন্য বললাম।
যখন
বুঝতে
পারলাম
সত্যিই
আমি
জনতা
ব্যাংকের
সিনিয়র
অফিসার
হিসেবে
নির্বাচিত
হয়েছি
তখন
প্রথমেই
নিজের
পরিবারের
লোকজনদের জানালাম।
কিন্তু এই “সময়” - কেন যেন আমার বিরুদ্ধে কাজ করে।
এই
সময়টাতেই
বাংলাদেশে
আঘাত
হানে
মহামারী
করোনা ভাইরাস।
যার
ফলে
চাকরিতে
যোগদানের
সময়,
আরও
পিছিয়ে
যায়।
যাই
হোক,
তারপর
খুব
অল্প
সময়ের
মধ্যেই
আরো
বেশ
কয়েকটি সরকারি ব্যাংকে চাকরির সুসংবাদ পাই।
এর
মধ্যে
রয়েছে
বাংলাদেশ
কৃষি
ব্যাংকের
সিনিয়র
অফিসার
(আইটি)
ও
সোনালী
ব্যাংকের
অফিসার
(ক্যাশ)
পদের
জন্য
নির্বাচিত
হওয়া।
বিসিএস বাদেও এখনো বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের লিখিত এবং ভাইবা রেজাল্ট প্রত্যাশী, (বেসরকারি গুলো উল্লেখ করা হল না) তারমধ্যে রূপালী ব্যাংকের অফিসার ও সিনিয়র অফিসার পদের ভাইবা রেজাল্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের (সমন্বিত) অফিসার পদের লিখিত রেজাল্ট উল্লেখযোগ্য।
যেহেতু
গ্রাজুয়েট
হিসেবে
৩৮
তম
বিসিএস
জীবনের
প্রথম
বিসিএস,
তাই
প্রত্যাশা
অনেক
বেশি
থাকবে
এটাই
স্বাভাবিক।
এখন
সেই
প্রত্যাশা
কতটুকু
পূরণ
হবে
তা
মহান
সৃষ্টিকর্তাই
ভালো
জানেন।
সকল
বেকারদের
কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা
হোক
সবসময়
এই
প্রার্থনাই
করি।
বেকার
জীবন
কতটা
কষ্টের
সেটি
বেশ
ভালোভাবেই
উপলব্ধি
করেছি।
যারা
ধৈর্য
ধারণ
করছেন
আশা
করি
আপনারা
অচিরেই
বেশ
ভালো
ফল
পাবেন,
আল্লাহ
আপনাদের
সহায়
হোন
।
- আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন । (সূরা তালাক ৬৫ : ৭)
- নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন । (সূরা বাকারা ২ : ১৫৩)
- নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে । অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে । (সূরা ইনশিরাহ ৯৪ : ৫-৬)
0 comments:
Post a Comment