তারপর প্রায় বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল, আমিও প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম; হঠাৎ কারও স্পর্শ অনুভব করলাম। শীতল সেই স্পর্শে যে কারও শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যেতে বাধ্য। চোখ খুলে অধরার দিকে তাকাতেই ,
- আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
- সমস্যা নেই, বলুন।
- আপনি যদি আমার সাথে সিটটা এক্সচেঞ্জ করতেন তাহলে খুব ভাল হতো।
- তাই যদি হয়, তবে তাই হোক।
মনে মনে ভাবলাম শুধু সিটটাই কেন এক্সচেঞ্জ করতে চাইলে ? কেন অন্য কিছু নয় ? যাইহোক, তারপর আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করলাম তবে কোন লাভ হল না। দেখলাম অধরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, হাতে হলুদ রঙের মলাটের একটা বই, তবে বইয়ের ও লেখকের নাম তার হাতে ঢাকা পড়ে আছে। অনুমান করলামঃ হয়ত হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোন বই হবে। বেশিরভাগ মেয়েরই পছন্দের বই এইসব। ভাবলাম এবার অধরাকে কিছুটা বিরক্ত করা যাক,
- যদি আমার ভুল না হয় তবে আপনি হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোন বই পড়ছেন, তাই না ?
[ মুখ লুকিয়ে কিছুটা হেঁসে নিল তারপর আমার দিকে ফিরে কিছুটা অবাক হলেও সেটা বুঝতে দিতে চাইল না। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল। ]
- এতটুকু অনুমান করা খুবই সহজ, তাই না ?
[ আমিও দমে যাবার পাত্র নই, হিমু সিরিজের যত গুলো বই পড়েছিলাম তার মধ্যে হলুদ রঙের মলাট ছিল সম্ভবত ২ টির। আবারও অনুমান করে বললামঃ ]
- হ্যাঁ সেটা হয়ত ঠিক, তবে যদি বলি আপনি হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের "একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা" বইটি পড়ছেন যেটা এই সিরিজের ৯ নাম্বার বই, তবে সেটা কি ভুল হবে ?
- তাহলে আপনি নামটাও দেখে নিয়েছেন ?
- নাহঃ আপনি সেই সুযোগটা আর দিলেন কই ?
- তবে সঠিক কিভাবে বলতে পারলেন ?
[ এতক্ষন পর্যন্ত আমরা একজন অপরজনকে শুধু পাল্টাপাল্টি প্রশ্নই করে যাচ্ছিলাম, তাই এবার আমিই উত্তর দেয়া শুরু করলাম। ]
- ঐ যে, অনুমান করে বলেছি। আমার অনুমান আবার বেশিরভাগ সময় সঠিক হিসেবেই প্রমানিত হয়।
- তাই নাকি ? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
- আপনি চাইলে অবিশ্বাসও করতে পারেন।
- না, ঠিক তা নয়। তবে মনে হচ্ছে আপনি হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়েন।
- পড়ি না বললে ভুল হবে, তবে হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়ি এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বরং অনেক কম পড়ি, বলতে পারেন কখনো টাইম পাসের জন্য পড়ি।
- জ্বী না স্যার, এটাও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
- তাহলে ম্যাডাম আপনিই বলুনঃ আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করাতে পারি ? যদি বলি আপনার সবচেয়ে পছন্দের কবি রবীন্দ্রনাথ তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন।
- আশ্চর্য ! আপনি কিভাবে এত সব কিছু জানেন ?
- বলেছিলাম না, আমার অনুমান বেশিরভাগ সময় সঠিক হিসেবেই প্রমানিত হয়।
- আচ্ছা ঠিক আছে মেনে নিচ্ছি। তবে আপনিও মেনে নিন আপনি হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি পড়েন এবং হুমায়ুন আহমেদ আপনার প্রিয় ঔপন্যাসিক।
- জ্বী না ম্যাডাম। হুমায়ুন আহমেদ আসলে আপনার প্রিয় ঔপন্যাসিক। আমার পছন্দের ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র।
- তাহলে আমিও মেনে নিব না। আমার পছন্দের ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র।
- তাই নাকি ? ..... হা হা হা .....
[ এবার দেখলাম অধরা কিছুটা রেগে গেছে, হয়ত আমাকে এভাবে হাসতে দেখেই তার এই প্রতিক্রিয়া। তবে বেশ বুঝতে পারছিলাম যে অধরা মিথ্যা বলছিল। ]
- হাসছেন কেন ? বঙ্কিমচন্দ্র আমার প্রিয় ঔপন্যাসিক আপনার কোন সমস্যা আছে ?
- নাহঃ নেই তবে আপনি বঙ্কিমের সব লেখা বুঝতে পারেন ? কোন সমস্যা হয় না ?
- কেন ? সমস্যা হবে কেন ?
- বেশ বুঝতে পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান। আচ্ছা তার কোন উপন্যাসটা আপনার সবথেকে বেশি ভাল লেগেছে?
[ এইবার মনে হয় ম্যাডাম কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন। অনেক ভেবে চিন্তেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারছিলেন না। ]
( চলবে )
[ বি. দ্র : এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]
0 comments:
Post a Comment