[ যখন অনেক চেষ্টা করেও বঙ্কিমের কোন উপন্যাসের নাম মনে করতে পারলেন না ..... ]
- আসলে আমার কোন উপন্যাসের নামই মনে থাকে না।
- বুঝতেই পারছি আপনি বঙ্কিমের অনেক বড় ফ্যান :P .
- আপনি মনে হয় বঙ্কিমের লেখা পড়েন না ?
- চেষ্টা করেছিলাম, ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত 'দুর্গেশনন্দিনী ' পড়তে, তারপর বাকিটা ইতিহাস ......
- মানে ??
- আপনি যেহেতু বঙ্কিমের ফ্যান ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিত।
[ এতক্ষন পর ম্যাডাম বুঝতে পারলেন যে তিনি কি ভুলটা করেছেন ]
- আচ্ছা, আপনি আর কারও লেখা পড়েন না ?
- অনেকের লেখাই পড়েছি তবে শরৎচন্দ্রের পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাই বেশি ভাল লেগেছে।
- আমারও ভাল লাগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।
- তাই নাকি ? ..... ( থাক আর বললাম নাহ ! )
- হুম ম। আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
- কেন ? ঢাকা যাচ্ছি। এই বাসটা নিশ্চই সিলেট কিংবা বরিশাল যাবে না।
-আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন ? সোজাসুজি উত্তর দিতে পারেন না ?
- Okay, Sorry ! এখন থেকে সোজাসুজি উত্তর করার চেষ্টা করব।
- আপনার কথায় মনে হচ্ছে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ নন। খুলনায় কি বেড়াতে এসেছিলেন ?
- বলতে পারেন অনেকটা তাই। দুৰ্ভাগ্যবশতঃ এখানকার এক নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, বলতে পারেন Accidental Engineer. তাই মাঝে মধ্যে বেড়াতে এসে ক্লাস করতে হয়।
- হাঃহাঃহাঃ
অধরা মুখ আড়াল করে হাসার চেষ্টা করলেও তার অপূর্ব সেই হাসি আমার দৃষ্টি এড়াতে পারল না। মনে হচ্ছিল কোন এক অপ্সরা আমার পাশে বসে আছে আর তার কাজলকালো দুটি চোখের দৃষ্টি শুধু আমারই দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার গোলাপি ঠোঁটের কোণায় মুক্তঝরা সেই হাসি, আর সাথে সাথে লালচে রঙের দুই গালে ফুটে উঠছিলো টোলের রেখা। হাসলে গালে টোল পরে এমন মেয়েদের প্রতি অনেক ছেলেরই দুর্বলতা থাকে, আর সেই মেয়েটি যদি অধরার মত সুন্দরী হয় তাহলে সেই দুর্বলতার শেষ পরিণতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যথাসম্ভব চেষ্টা করলাম নিজেকে সামলে নেয়ার। তারপর জিজ্ঞাসা করলামঃ
- আপনার কথা শুনেও মনে হচ্ছে না যে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ।
- কি মনে হচ্ছে তাহলে ?
- মনে হচ্ছে আপনি আমার খুব কাছের কেউ।
- মানে ??
- আপনিও নিশ্চই ঢাকায় থাকেন ? কথা শুনে অন্ততঃ তাই মনে হচ্ছে।
- হ্যা, তবে আপনার কাছের কেউ বলতে .... আপনি কি কোন ভাবে আমাকে আগে থেকেই চিনেন ?
- সত্যি বলব নাকি যেটা আপনি বিশ্বাস করবেন সেটাই বলব ?
- মানে ??
- আপনার এই 'মানে ?' প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিব বুঝতে পারছি না। যেহেতু আমরা দুজনেই ঢাকা থাকি তাই বলেছি হয়ত আপনি কাছের কেউই হবেন।
- আপনি কিন্তু আবারও সোজাসুজি উত্তর দিচ্ছেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর থেকে সোজাসুজি উত্তর করার জোরালো চেষ্টা করব। তার আগে আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন, আমার কথা তো অনেক বললাম।
- আমার সম্পর্কে বলার তেমন কিছুই নেই। হ্যা, আমিও ঢাকাতেই থাকি আর খুলনা মেডিকেলে পড়ছি MBBS ২য় বর্ষ।
[ বুঝতে পারলাম অধরা আমার থেকে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে কেননা আমিতো কেবল ১ম বর্ষে ভর্তি হয়েছি মাত্র। যাইহোক, এখন এই ব্যাপারটা অধরাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। ]
- ঢাকায় কোথায় থাকেন ?
- ধানমন্ডিতে। তবে আমাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়াতে তার মানে উত্তর বঙ্গ।
- আমিও এরকমটাই ধারণা করেছিলাম।
তারপর আমরা দুজনেই হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম, হয়ত কি বলব সেটাই ভাবতে পারছিলাম না অথবা যা বলতে চাইছিলাম, সেটা বলতে পারছিলাম না। অধরা জানালার দিকে ফিরে বাইরে তাকিয়ে রইল। আমি মাঝে মাঝে আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। অনেক কিছুই তাকে বলতে চেয়েছিলাম। বলতে চেয়েছিলামঃ অধরা, হয়ত তোমার সাথে বাস্তবে এটাই আমার প্রথম দেখা কিন্ত এর আগেও বহুবার তুমি এসেছিলে আমার স্বপ্নে, তুমি ছিলে আমার কল্পনায়। তুমি তো আমার অপরিচিতা নও, বহুকাল, বহুযুগ ধরেই তো তুমি আমার পাশে ছিলে। তুমি আমার খুব কাছের কেউ, আমারই আপনজন। নিমাই ভট্টাচার্যের মত বলতে চাইছিলামঃ
'' যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক,
তারা তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
আমার হৃদয়খানিতে। ''
( চলবে )
[ বি. দ্র: এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]
0 comments:
Post a Comment