Thursday, June 23, 2016

A trip to Mawa

দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার (26 May 2016) পূর্ব নির্ধারিত হলেও কোনরকম পূর্ব-প্রস্তূতি আমাদের ছিলো না। অন্য সকল দিনের মতোই লাইব্রেরিতে পড়ালেখা করার চেষ্টা করছিলাম। অনেকটা একঘেয়ে দিন কাটছিলো তাই কোথাও থেকে ঘুরে আসাটা অনিবার্য ছিল। সবসময়ের মতোই আমাদের এই ঘুরে আসাটাও সকলের জন্যই উম্মুক্ত রাখা হয়েছিল কিন্ত শেষ পর্যন্ত আমরা তিন জন ব্যাতীত আর কারোই যাওয়ার মত সময় হয়নি। 


দুপুরের খাবার শেষ করে নামাজ আদায়ের পর হলে চলে গেলাম কিছুক্ষন বিশ্রাম নেবার জন্য। তারপর দুপুর ৩.৩০ এর একটু আগেই আমি আর আব্দুল্লাহ বেরিয়ে পড়লাম সাথে মামুনকেও ডেকে নিলাম।  উদ্দেশ্য ছিল কলা ভবন থেকে বাসে উঠে মাওয়ার পথে যাত্রা করা। যথাসময়ের কিছুক্ষন আগেই আমরা পৌঁছে গেলাম। বাস ছাড়তে আরও বেশ কিছুক্ষন বাকি থাকায় আমরাও সেখানে ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম আর এই সময় বেশ কিছু ছবিও তুলে ফেললাম।

“A journey is best measured in friends, rather than miles.”    – Tim Cahill 

যাত্রার শুরু থেকেই আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আজকে যদি আকাশটা মেঘলা হতো কিংবা বৃষ্টি হতো তবে খুবই ভাল লাগবে। কিন্ত তখনো পর্যন্ত বৃষ্টির কোন পূর্বাভাসই দেখা যাচ্ছিল না। যাইহোক ৩.৪৫ মিনিটে বাস ছাড়ল। বাইরে তখনো কড়া রোদ যা বাসের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল তাছাড়া ঢাবির বাস তো আর A/C বাস না যে জানালা গুল বন্ধ রাখব তাই সেই সময় কিছুটা অস্বস্থি লাগছিল। তার উপর সেদিন রাস্তায় যানজট অন্য দিন গুলোর তুলনায় কিছুটা বেশিই ছিল। তবে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত আসার পর আমার মনের ইচ্ছেটা পূরণ হল। আকাশে মেঘ দেখা দিল মৃদু বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল। ততক্ষনে যানজটও দূর হয়ে গেছে।

পিচ ঢালা রাস্তা ধরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাস। আমরা তখন শহরের কোলাহল থেকে দূরে সবুজে ঘেরা একটা এলাকায় প্রবেশ করেছি। মেঘ আরও কিছুটা ভারী হয়ে এল। আমরা তিন জন ছাড়াও আরও অনেকেই সেদিন ঐ বাসে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। দেখলাম তারাও খুব মজা করছিল, কেউ কেউ গ্রূপ সেলফিও তুলছিল। বাসের মানুষজন ততক্ষনে অনেকটাই কমে গেছে। আমরা তিন জন তিনটি ভিন্ন সিটে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির মডেল টাউনের প্লট গুল, শুটিং স্পট, নব নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার সবই একটার পর একটা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি। আনুমানিক ৫.৪৫ মিনিটে আমরা মাওয়া ঘাটে এসে পৌছলাম।

যেহেতু সন্ধ্যা হতে আর বেশিক্ষন বাকি নেই তাই ভাবলাম আগে কিছুটা ঘুরে দেখে নিই। সচরাচর বেশিরভাগ মানুষ এখানে ইলিশ খেতেই আসে। আমরাও তাই ঠিক করেছিলাম যাবার আগে ইলিশ খেয়েই যাব। কিন্ত সেদিন বিধাতার অশেষ রহমতে সন্ধ্যা হবার বেশ আগেই ঘন কাল মেঘে আকাশ ঢেকে গেল। ফলশ্রূতিতে আমরা তিন জন প্রকৃতির এক অনন্য সুন্দর রূপের সাক্ষী হয়ে রইলাম। কাল মেঘে আকাশের প্রায় সম্পূর্ণটাই তখন ডেকে গেছে। মনে হচ্ছিল আকাশটা যেন এক কাল পানির সমুদ্র আর মেঘ গুল সেখানে এক একটা বিশাল ঢেউ হয়ে সবকিছু গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে।

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে আমরা একটা ছোট ট্রলারের ভেতর আশ্রয় নিলাম। ধীরে ধীরে বৃষ্টিটা আরও বাড়তেই থাকল। সুযোগ খুঁজছিলাম কখন বৃষ্টিটা একটু কমবে আর আমরা ঘাটের ছাউনিতে গিয়ে আশ্রয় নিব। একসময় সুযোগ মিলল ঠিকই কিন্ত ঘাটে বেরিয়ে মনে হল আরো বিপদে পড়লাম কারণ সেখানে আসার আগেই বৃষ্টি আরও বেড়ে গেল আর আমরা মাঝ পথে আটকে পড়লাম। যাইহোক তারপর ২য় বার সুযোগ মিলতেই আমরা ঘাটের ছাউনিতে গিয়ে পৌঁছলাম।

বেশকিছুক্ষন ঘোরাঘুরির পর আমরা একটা চায়ের দোকানের সামনে আসলাম। তারপর চা খেতে খেতে অনেক্ষন আড্ডা দিলাম। হাতে চা আর সিগারেট সাথে বাইরে বৃষ্টি আর বিদ্যুৎ না থাকায় চারদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর কি চাই? আড্ডা দেয়ার জন্য এর থেকে ভাল পরিবেশ আর হয় নাকি ?

অনেকটা সময় কাটিয়ে আমরা একটা হোটেলে ঢুকলাম ইলিশ ভাঁজি খাবার জন্য। ইলিশের চেহারা, সাইজ আর দাম দেখে কোন ভাবেই পছন্দ হচ্ছিল না। বেশির ভাগই কোল্ড স্টোরেজ থেকে নেয়া যা খাওয়ার মত না। শেষমেষ আমরা একটা ইলিশ পছন্দ করলাম তারপর সেটা খাবার জন্য তৈরি করা হল।

ইলিশটা বেশ সুস্বাদুই ছিল, খাবার শেষ করে আমরা আবার ফিরে আসার জন্যে তৈরি হলাম। শেষ বারের মত চায়ের দোকানে বসলাম চা শেষ হতে না হতেই আমরা বাসের টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লাম। ফেরার পথে যানজট কম থাকায় তাড়াতাড়িই চলে আসলাম।

যারা মাওয়া যেতে চান তাদের জন্য ঢাকা গুলিস্থান থেকে সরাসরি মাওয়া ঘাট পর্যন্ত বাস রয়েছে। খুব short একটা trip হলেও মনে রাখার মত অনেক কিছুই ছিল। হয়ত আবারও কখনো যাওয়া হতে পারে তবে সেই দিনের মত অনুভূতি আবারও হবে কিনা জানিনা।

0 comments:

Post a Comment