বৃষ্টিতে আমি প্রায় বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিলাম তাই ফ্যানের ঠিক নিচের সিটেই বসে পড়লাম যাতে শার্টটা অন্তত কিছুটা হলেও শুকিয়ে যায়। বৃষ্টির কারনে বাস আসতে আরও খানিকটা সময় লাগতে পারে। তবে আমি ছাড়া এই বিষয়ে আর কারও কোন চিন্তা নেই। অবশ্য এই শিববাড়ী মোড়ের কাউন্টারে তখন আমরা মাত্র তিনজনই অবশিষ্ট আছি। আমি, অধরা আর সেই কাউন্টারে কর্মরত লোকটি।
অধরা তখনও কাউন্টারের সামনে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। হালকা নীল রঙের শাড়িতে যে কোন মেয়েকে সুন্দরী মনে হয় আর এই রমণী যেন সাক্ষাৎ অপ্সরী। যাইহোক, ইচ্ছা না থাকলেও চোখ সরিয়ে নিলাম এবং খবরের কাগজ পড়ায় মনোনিবেশ করলাম। কেননা আমার হাত-পা, চোখ-কান এক কথায় আমার সমগ্র শরীরের উপর যতক্ষন আমার নিয়ন্ত্রন থাকে ততক্ষন সব কিছু ভালোই থাকে আর চারপাশের পরিবেশটাও শান্ত থাকে। তবে যদি কখনও আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে সেটা ভয়ানক সুনামির পূর্বাভাস।
বৃষ্টি কিছুটা কমে গেলে অধরা ভেতরে এসে আমার পাশের সিটটা খালি রেখে ঠিক তার পাশের সিটে বসে পড়ল। আড়চোখে আমি সেটা লক্ষ্য করলাম আর মনে মনে ভাবলাম বাসে যদি আমার পাশের সিটটা নিয়ে থাক তবে পুরো রাস্তা তোমাকে আমার পাশে বসেই যেতে হবে। বাসে যাতায়াতের সময় কোন সুন্দরী মেয়ে পাশে বসলে ভাল লাগে সেটা ঠিক, তবে আমি যদি কোন সুন্দরী মেয়ের পাশে বসি তবে সেটা সেই মেয়েটার জন্যই নিরাপদ। কারন রাস্তা-ঘাটে সব ছেলেরা যেমন আমার মত সুশীল না তেমনি আমার নিজের উপর যতটা আস্থা আছে অন্য কারও উপর ততটা নেই।
এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে সময় কেটে গেল টেরই পাইনি। দেখলাম বাস চলে এসেছে, ৭০ নাম্বার বাস। বাসে উঠার আগে ওয়াশরুমে ঢুকলাম, জামা-কাপড় অনেকটাই ভিজে গিয়েছিল তাছাড়া কিছুটা ফ্রেশ হবারও প্রয়োজন বোধ করছিলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম বাসটা ছেড়ে দেয়ার পায়তারা করছে, বৃষ্টির জন্য এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। অধরাকেও দেখতে পেলাম না, হয়ত আমার আগেই বাসে গিয়ে উঠেছে। তাই আমিও আর দেরি না করে উঠে পড়লাম বাসে।
বাসে বেশ ভালোই লোক সমাগম ছিল। আমার সিটটা ছিল E4 , মাঝামাঝি হওয়ায় সুবিধাই ছিল। যেমনটা মনে মনে ভাবছিলাম তেমনটাই হল, অধরার সিটটা ছিল ঠিক আমার পাশেই E3 । কিন্তু সমস্যা হল আমি আসন গ্রহন করার পূর্বেই সে তার আসন দখল করে বসে পড়ায় তাকে সরিয়ে তার পরেই আমি আমার আসনে যেতে পারব। অবস্থা যখন এই রকম তখন আমি পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখলাম অধরার সেদিকে খেয়ালই নেই, সে বরং বাইরে ওই দূর আকাশটার দিকেই আছে। এইবার আমি কিছুটা ঝেড়ে কাশলাম -
- এক্সকিউজ মি !
- ওহ আচ্ছা সরি।
আমি সিটে গিয়ে বসার পরই মনে হল অধরা মুচকি হাঁসছে আর কিছুটা আড়চোখে আমাকে দেখছে। এই রকম পরিস্থিতিতে আমার মত সুবোধ ছেলেদের কিছুটা লজ্জা পাওয়াই স্বাভাবিক। হয়ত সে আমাকে শুরু থেকেই লক্ষ্য করছিল আর আমাকে পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও না দেখার ভান করছিল। যদি সত্যিই সে এমনটা করে থাকে তবে তার এই নিখুঁত অভিনয়ের প্রসংশা করতেই হবে। কে জানে এই সব সুন্দরী, ছলনাময়ী মেয়েদের মনে কি আছে? আর তাছাড়া প্রায় সব মেয়েই কম-বেশি পাকা অভিনেত্রী হয়ে থাকে।
অতঃপর বাস শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙার দিকে রওয়ানা হল। আমিও সিটটাতে হেলান দিয়ে একটু আয়েশ করে বসলাম। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব বেশি সময় লাগল না। সোনাডাঙা থেকেই বেশিরভাগ যাত্রী বাসে উঠল। বাস এখানে প্রায় ১০-১৫ মিনিট দেরি করল, একবার ভেবেছিলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি কিন্তু আবার চিন্তা করলাম বার-বার আসা-যাওয়া করলে হয়ত আমার পাশের সুন্দরী যাত্রী কিছুটা বিরক্তি বোধ করবেন তাই বাসেই বসে থাকলাম। দেখতে দেখতে বাসের প্রায় সব গুলো আসনই পূর্ণ হয়ে গেল। খুব বেশি সময় লাগল না, আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
রাস্তা বেশ ফাঁকাই দেখতে পেলাম, তেমন কোন কোলাহল নেই। বৃষ্টির পর চারপাশের পরিবেশটা বেশ স্নিগ্ধ আর প্রাণবন্ত বলেই মনে হচ্ছিল। বাসের জানালাটা আরও একটু খুলে দিলাম যাতে বাইরের পরিবেশটা আরও ভালভাবে দেখা যায়। তাছাড়া আমার শার্টটি বৃষ্টিতে বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিল, সেটাও শুকানো প্রয়োজন। হয়ত আমার সেই আধ-ভেজা অবস্থা দেখেই অধরা কিছুটা মুচকি হেসেছিল। এখন বাতাসে এই ভেজা শার্টটা শুকাতেও হয়ত বেশ খানিকটা সময় লাগবে।
আকাশটা এখন বেশ পরিষ্কার তবে বাতাসটা বেশ ভারী মনে হচ্ছিল। এই সময়টাতে আদা-লেবু দিয়ে কড়া এক কাপ চা খাওয়া আর গিটারে পরিচিত সেই গানের মুহূর্তগুলো যে কতোটা মিস করছি তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপাততঃ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেই সেই অনুভূতিটুকু নেয়ার চেষ্টা করাটাই শ্রেয় মনে হল। গান শুনতে শুনতে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। বৃষ্টির পর বৃষ্টির গানগুলো শুনলে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়। পাশ থেকে অধরা কিছু বলছিল মনে হল। তার দিকে না ফিরেই কি বলছিল তা শোনার চেষ্টা করলাম।
- এক্সকিউজ মি ! আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে আমি জানালার পাশটায় বসতে চাচ্ছিলাম।
ওমা ! বলে কি এই মেয়ে? আপাতত কোনভাবেই এই অনুভূতিটুকু বিসর্জন দিতে পারব না। তাই শুনেও না শোনার ভান করলাম। কানে হেডফোন থাকায় এমন ভাব করলাম যেন চারপাশে কি হচ্ছে আমি তার কিছুই জানি না। এটা পূর্বের ঘটনার প্রতিশোধ নয়, পাকা অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয় করাটা দোষের কিছু নয় বরং দুর্লভ একটা সুযোগ লুফে নেয়ার মতোই মজার একটা ব্যাপার।
অতঃপর বাস শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙার দিকে রওয়ানা হল। আমিও সিটটাতে হেলান দিয়ে একটু আয়েশ করে বসলাম। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব বেশি সময় লাগল না। সোনাডাঙা থেকেই বেশিরভাগ যাত্রী বাসে উঠল। বাস এখানে প্রায় ১০-১৫ মিনিট দেরি করল, একবার ভেবেছিলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি কিন্তু আবার চিন্তা করলাম বার-বার আসা-যাওয়া করলে হয়ত আমার পাশের সুন্দরী যাত্রী কিছুটা বিরক্তি বোধ করবেন তাই বাসেই বসে থাকলাম। দেখতে দেখতে বাসের প্রায় সব গুলো আসনই পূর্ণ হয়ে গেল। খুব বেশি সময় লাগল না, আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
রাস্তা বেশ ফাঁকাই দেখতে পেলাম, তেমন কোন কোলাহল নেই। বৃষ্টির পর চারপাশের পরিবেশটা বেশ স্নিগ্ধ আর প্রাণবন্ত বলেই মনে হচ্ছিল। বাসের জানালাটা আরও একটু খুলে দিলাম যাতে বাইরের পরিবেশটা আরও ভালভাবে দেখা যায়। তাছাড়া আমার শার্টটি বৃষ্টিতে বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিল, সেটাও শুকানো প্রয়োজন। হয়ত আমার সেই আধ-ভেজা অবস্থা দেখেই অধরা কিছুটা মুচকি হেসেছিল। এখন বাতাসে এই ভেজা শার্টটা শুকাতেও হয়ত বেশ খানিকটা সময় লাগবে।
আকাশটা এখন বেশ পরিষ্কার তবে বাতাসটা বেশ ভারী মনে হচ্ছিল। এই সময়টাতে আদা-লেবু দিয়ে কড়া এক কাপ চা খাওয়া আর গিটারে পরিচিত সেই গানের মুহূর্তগুলো যে কতোটা মিস করছি তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপাততঃ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেই সেই অনুভূতিটুকু নেয়ার চেষ্টা করাটাই শ্রেয় মনে হল। গান শুনতে শুনতে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। বৃষ্টির পর বৃষ্টির গানগুলো শুনলে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়। পাশ থেকে অধরা কিছু বলছিল মনে হল। তার দিকে না ফিরেই কি বলছিল তা শোনার চেষ্টা করলাম।
- এক্সকিউজ মি ! আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে আমি জানালার পাশটায় বসতে চাচ্ছিলাম।
ওমা ! বলে কি এই মেয়ে? আপাতত কোনভাবেই এই অনুভূতিটুকু বিসর্জন দিতে পারব না। তাই শুনেও না শোনার ভান করলাম। কানে হেডফোন থাকায় এমন ভাব করলাম যেন চারপাশে কি হচ্ছে আমি তার কিছুই জানি না। এটা পূর্বের ঘটনার প্রতিশোধ নয়, পাকা অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয় করাটা দোষের কিছু নয় বরং দুর্লভ একটা সুযোগ লুফে নেয়ার মতোই মজার একটা ব্যাপার।
( চলবে )
[ বি. দ্র : এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীর সাথে কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খোঁজাটা নিরর্থক, কারও সাথে কোনভাবে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ]
0 comments:
Post a Comment