পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর রাজশাহী। আম ও রেশমী বস্ত্রের জন্যে বিখ্যাত রাজশাহী জেলা রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় শহর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সমৃদ্ধ এই রাজশাহী শহরে রয়েছে বিখ্যাত মসজিদ, মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। পদ্মার তীরের এই শহরের পর্যটকদের জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানের মধ্যে রয়েছে বাঘা মসজিদ, পুঠিয়া রাজবাড়ি, পদ্মার পাড়, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ ইত্যাদি।
পুঠিয়া রাজবাড়ী (Puthia Rajbari) রাজশাহীতে অবস্থিত নজরকাড়া স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন। রাজশাহী বিভাগীয় শহর হতে ৩০ কিলোমিটার এবং রাজশাহী-নাটোর মহসড়ক থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে পুঠিয়া রাজবাড়ীর অবস্থান। পুঠিয়া বহুকক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল পুঠিয়া রাজবাড়ীতে প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে একটি সিংহ দরজা রয়েছে। জমিদার বা রাজারা এখান থেকে তাদের রাজ কর্ম পরিচালনা করতেন। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যে উনবিংশ শতাব্দীতে পুঠিয়া রাজবাড়ি নির্মিত হয়।
রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (Varendra Research Museum) হল বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। আর প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের তালিকায় বরেন্দ্র জাদুঘর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম।১৯১০ সালে নাটোরের দিঘাপাতিয়ার জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্র এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্র বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু করে।
রাজশাহী শহরের দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতিকে উপভোগ করতে এখানে প্রতিদিন বহু স্থানীয় পর্যটক আসেন। মূলত, ক্যাম্পাসটি একটি বৃহৎ বাগানের মতো। বাগানটির ভেতরে আছে বহু প্রজাতির গাছ। এর মধ্যে প্যারিস রোডের মনোমুগ্ধকর ও আকাশচুম্বী গগন শিরিশ গাছ পর্যটকদের খুব কাছে টানে। এ ছাড়া, আম বাগান তো আছেই।
রাজশাহী এসে প্যারিস রোড ঘুরে যাননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাগুলোর একটি এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড। এর চারিদিকের অপরূপ লাবণ্যতা আপনাকে এনে দিবে অন্যরকম প্রশান্তি।
নগরীর বুলনপুর থেকে বড়কুঠি ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া। দীর্ঘ প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পদ্মার পাড় এখন রাজশাহী বাসীর জন্য বিনোদনের সেরা ঠিকানা। পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তার পথ। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারে। গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কিংবা শরত, সব ঋতুতেই পদ্মা নদীকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা। গ্রীষ্মে শুকিয়ে কাঠ পদ্মা আর বর্ষায় জলে টইটম্বুর সব সময় মানুষকে কাছে টানে। নিয়ে যায় এর নৈসর্গিকতায়। আর উৎসব হলে তো কথাই নেই। প্রতিটি উৎসবে বিনোদন পিয়াসীদের কাছে সেরা ঘোরাঘুরির স্পট হিসেবে প্রথম পছন্দ পদ্মা নদী।
মুক্তমঞ্চ হলো পদ্মার তীর বেয়ে ঘেঁষে ওঠা আরেকটি উন্মুক্ত বিনোদোন কেন্দ্র, যা ২০১৩ সালে স্থাপিত হয়েছে। এখানে রয়েছে মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুবিধা। তাছাড়া প্রকৃতির মুক্ত হাওয়া খেতে লোকজনের সমাগম লেগেই থাকে এখানে।
0 comments:
Post a Comment